নিজস্ব সংবাদদাতা: আগামী পুরসভা নির্বাচনে খড়গপুর আর ঘাটালের জন্য রাজ্য থেকে আসা বিশেষ পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। আসন্ন পৌর নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করার জন্য পুলিশ কী কী উদ্যোগ নিচ্ছে তাই নিয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার। আর সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন, জেলার ৫টি থানা এলাকায় মোট ৭টি পুরসভা রয়েছে এবং ৭টিতেই নির্বাচন হতে চলেছে আগামী রবিবার। এই ৭টির মধ্যে ৫টি পুরসভা রয়েছে ঘাটাল মহকুমাতেই। অন্য দুটি হল খড়গপুর ও মেদিনীপুর। রাজ্য থেকে পাঠানো দুটি র্যাপিড এক্যাশন ফোর্স বা RAF টিমের একটি ঘাটাল মহকুমার ৫টি পুরসভা নির্বাচনের জন্য পাঠানো হচ্ছে আর শুধুমাত্র খড়গপুর পুরসভার জন্যই থাকছে রাজ্য থেকে পাঠানো অন্য র্যাপিড এক্যাশন ফোর্স বা RAF টিম। স্বাভাবিক ভাবেই এই নির্বাচনে খড়গপুরকে যে বিশেষ নজরে পুলিশ দেখছে তা বলাই বাহুল্য।
উল্লেখ্য ২০১৫ সালে খড়গপুর পুর নির্বাচনে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল ২৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। জনগনের তাড়ায় পালিয়ে গেছিল এক দাগী দুষ্কৃতি। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে রিগিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল জেলের বাইরে থাকা মাফিয়া ডন রামবাবু ও বর্তমানে প্রয়াত আরও এক মাফিয়া ডন শ্রীনু নাইডুর বিরুদ্ধে। বর্তমানে রামবাবু জেলে আছেন আর শ্রীনু নাইডু প্রয়াত। তবুও তাদের অনুগামীরা সক্রিয় আর নতুন করে আরও কিছু দুষ্কৃতি মাথা চাড়া দিচ্ছে এমন পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেই রাজ্যের পাঠানো বিশেষ বাহিনীকে খড়গপুর শহরে মোতায়েন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে নির্বাচনের ৪৮ ঘন্টা আগে থেকেই শহরে এক্সাসাইজ বা সক্রিয়তা প্রদর্শন করতে দেখা যাবে ওই বাহিনীকে।
জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, জেলার নিজস্ব পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি ঝাড়গ্রাম জেলা থেকেও কিছু পুলিশ কর্মী ও আধিকারিক আমরা পাচ্ছি। এরই সাথে আমাদের জেলার নিজস্ব ১২টি RAF বাহিনী সক্রিয় থাকছে। আর রাজ্যের পাঠানো ওই দুটি বিশেষ বাহিনীর একটি টিমকে ঘাটালে পাঠানো হচ্ছে কারন ঘাটাল জেলা সদর থেকে বেশ কিছুটা দূরে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি বাহিনী ওখানে রাখা হবে। অন্য টিমটি খড়গপুরে মোতায়েন থাকছে। এছাড়াও জেলার নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন করার জন্য ৬টি কিউআরটি (Quick Respond Team) ও ১২টি আরটি বা Respond Team থাকছে।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, জেলার ৭টি পুরসভার ১২০ ওয়ার্ডের জন্য ভোট গ্রহণ করা হবে ৫৯৮টি বুথে। এই প্রত্যেকটি বুথেই ২জন করে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হবে। কিন্তু যদি একই প্রেমিসেস বা প্রাঙ্গনে ৩টির বেশি বুথ থাকে তবে বুথ পিছু ৪জন করে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হবে। অর্থাৎ সশস্ত্র পুলিশ ছাড়া কোনও বুথ থাকছেনা এবার। নির্বাচন পরিচালনার জন্য পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্বে ইন্সপেক্টর, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, ডিএসপি অথবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপাররা থাকছেন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, প্রাক নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসাবে জেলায় ১২টি থেকে ১৯টি নাকা চেকিং পয়েন্ট ও থানা পিছু একটি Quick Respond Team য়ের পরিবর্তে বাড়তি একটি Quick Respond Team তৈরি করা হয়েছে। অপরাধের ইতিহাস আছে ও আদালতের সমন রয়েছে এমন ১০৬জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র, কার্তুজ ইত্যাদি উদ্ধারের কাজ চলছে। পাশাপাশি ৭টি পুর এলাকার সমস্ত ব্যক্তিগত লাইসেন্স যুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র জমা নেওয়ার কাজ চলছে। এরকম ২৬৪ টি বন্দুকের ২৪১টি পুলিশের হেফাজতে চলেও এসেছে।