নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউনের ২ বছর পরে এই সপ্তাহে খুলেছে স্কুল। লকডাউনের আগে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েই বাবা-মার কাছে মেয়ে চেয়েছিল একটা সাইকেল। সেই আবদার পূরণ হওয়ার আগেই শুরু হয়েগেছিল লকডাউন। সাইকেল কেনা হয়নি। ২বছর পর কয়েকদিন স্কুলে গিয়ে ফের মেয়ের আবদার সাইকেল দিতেই হবে। মেয়ের নাছোড়বান্দা আবদারে শুক্রবার কেনা হয়েছিল সাইকেল।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/02/IMG-20220219-WA0026.jpg)
শনিবার সেই নতুন সাইকেল নিয়ে মহাননন্দে স্কুলে যাচ্ছিল মেয়ে কিন্তু শেষ অবধি যাওয়া হলনা স্কুল। স্কুলের কিছুটা আগেই এক দশ চাকা লরির ধাক্কায় শেষ হয়ে গেল জীবন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়ার মহিষাদল থানার গেঁওখালি-মহিষাদল গ্রামীণ সড়কের ওপর এই মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো মহিষাদল জুড়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত ছাত্রীর নাম সায়ন্তনী বেরা(১৩)। রঙ্গীবসান গ্রামের ওই সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী আজই তার নতুন সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল গয়েশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ে। সঙ্গে ছিল ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণীর ছাত্রী মৃত সায়ন্তনীর প্রতিবেশী দিদি সঙ্ঘমিত্রা বেরা। দুজনে দুটি সাইকেল নিয়ে পাশাপাশি চালিয়ে যখন হলদিয়া-মেছেদা শাখার মহিষাদল রেল লেভেল ক্রসিংয়ের কাছাকাছি তখনই ঘটে যায় দুর্ঘটনাটি।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/02/Screenshot_20220219-200652_WhatsAppBusiness.jpg)
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গেঁওখালির দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া গতির দশচাকার লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে সায়ন্তনী ও সঙ্ঘমিত্রার সাইকেলের পেছনে। দুজনেই সাইকেল থেকে রাস্তার ওপর পড়ে যায়। দুজনেই রাস্তার ধারে পড়লেও সায়ন্তনী গড়িয়ে ফের রাস্তার ওপর চলে আসে। লরির পেছনের চাকা তার কোমরের ওপর দিয়ে চলে যায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন লরিটির গতি এতটাই বেশী ছিল যে ধাক্কা মারার পর সায়ন্তনীকে পিষে দিয়েও লরিটি দাঁড় করাতে পারেনি চালক। সায়ন্তনীর প্রিয় সাইকলেটিকে ঘষটাতে ঘষটাতে অনকেটাই নিয়ে যায় লরিটি। স্থানীয়রা উদ্ধার করেন আহত ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। স্থানীয় বাসুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে পরে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যায় সে।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/02/IMG-20220219-WA0030.jpg)
এদিকে চোখের সামনে এমন কচি একটি প্রাণকে অকালে ঝরে যেতে দেখে ঘটনার পরই ঘাতক লরির পিছু নেন ক্ষিপ্ত জনতা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে লরি থামিয়ে পালিয়ে যায় চালক-খালাসি। ভাঙচুর চলে গাড়িতে। ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। গ্রামীণ সড়কে বেপরোয়া গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান বাসিন্দারা। দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয় পুলিশ।
শনিবার দুপুরে রঙ্গীবসান গ্রামে ওই ছাত্রীর বাড়িতে শোকবিহ্বল পরিবারকে সান্তনা দিতে যান সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিউলি দাস। সেচমন্ত্রী বলেন, ‘ দুর্ঘটনায় ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। মুখ্যমন্ত্রী খবর পেয়েই আমাকে ছাত্রীর বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশ মেনেই এসেছি। তিনিও সমব্যথী। দুর্ঘটনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয়রা বিশ্রামাগারের দাবি তুলেছেন। সেটা মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনা হবে। পরবর্তী সময়ে যাতে এমন দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।’