Saturday, July 27, 2024

Sabang Haldia: তৃতীয় বিয়ে করতে ব্যর্থ হয়েই প্রেমিকা পূর্ব মেদিনীপুরের গৃহবধূকে নৃশংসভাবে খুন পশ্চিম মেদিনীপুরের রোমিওর

- Advertisement -spot_imgspot_img
খুন হওয়ার পর টুম্পা

নরেশ জানা ও শশাঙ্ক প্রধান: সাতদিনের মাথায় হলদিয়াতে উদ্ধার হওয়া গৃহবধূ খুনের রহস্য উন্মোচন করল পুলিশ। আর সেই রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। কেননা খুনি হিসাবে যাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে সেই ৩৬ বছরের যুবক একজন নিপাট ভোলেভালা চেহারার মানুষ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার খড়িকা গ্রামের ওই যুবক একজন গ্রিল ব্যবসায়ী এবং দুই সন্তানের পিতা। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে রঞ্জন মান্না ওই যুবকের প্রথম স্ত্রী থাকা স্বত্বেও সে আরেকটা বিয়ে করেছিল। সেই স্ত্রী রঞ্জনকে ছেড়ে যাওয়ার পর তৃতীয় আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের ওই গৃহবধূর শ্বশুর এবং বাপের বাড়ি সবং থানা লাগোয়া ভগবানপুরে। রঞ্জনের এই প্রেমিকা নিজের সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসতে না চাওয়াতেই তাকে খুন করেছে রঞ্জন।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে
সঞ্জয় মান্না

উল্লেখ্য গৃহবধূ খুনের এই মামলায় নাম জড়িয়েছে দুই জেলার তিনটি থানা এলাকার। কারন ভোলেভালা চেহারার সবং থানা এলাকার রঞ্জন প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে হলদিয়ার ভবানীপুর থানা এলাকায় খুন করে ফেলে আসে ভগবানপুর থানার প্রেমিককা গৃহবধূ ৩৩ বছরের টুম্পা দত্তকে। খুনের পরিকল্পনা, কায়দা এবং দক্ষতায় সবংয়ের ওই ভোলেভালা রঞ্জন মান্না হার মানিয়েছে পেশাদারি খুনিকেও। খুনের স্থান নির্বাচন, খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রকে লুকিয়ে রাখা এবং খুনের স্থানে কোনও ক্লু ফেলে না আসায় পুলিশকে টানা কয়েকদিন কার্যত ঘোল খাইছে রঞ্জন। খুনের প্রায় ১সপ্তাহের মাথায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সবংয়ের খড়িকার বাড়ি থেকে রঞ্জনকে গ্রেফতার করতে গিয়ে পুলিশ এও জানতে পারে যে গত ২০শে এপ্রিল নিজের প্রেমিকাকে খুন করে সবং ফিরে গিয়ে অত্যন্ত নির্বিকার, ভাবলেশহীন ভাবেই কাটিয়েছে রঞ্জন। তাঁর আশেপাশের কেউই জানতে পারেনি যে এত নৃশংস একটি খুনের কান্ড ঘটিয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দুরে প্রেমিকার গলার নলি কেটে ফেলে এসেছে তাকে।

হলদিয়া এবং সবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে নিহত ওই গৃহবধূর নাম টুম্পা দত্তের শ্বশুরবাড়ি বাড়ি ভগবানপুর থানার কোটনাউড়ি গ্রামে। লকডাউনের সময় সবংয়ের খড়িকা গ্রামের এক গ্রিল ব্যবসায়ীর সাথে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

টুম্পা পাত্র

প্রথম স্ত্রী বাড়িতে থাকলেও তার প্রতি আসক্তি হারিয়ে ডেবরার এক মহিলাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল রঞ্জন। সেই পক্ষে কোনও সন্তানাদি হয়নি। রঞ্জনের বহুগামী চরিত্র তাঁর কাছে ধরা পড়ে যায়। রঞ্জনের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। রঞ্জন গ্রেফতার হয়। দ্বিতীয় স্ত্রী রঞ্জনকে ছেড়ে চলে যায়। এরপরই লকডাউনে রঞ্জন টুম্পাকে নিজের প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে নেয়। টুম্পার বিয়ে হয়েছিল প্রায় ১২ বছর। কোনও সন্তান নেই। রঞ্জনের প্রেম চলতে থাকে।

সম্পর্ক কিছুদিন গড়ানোর পরই রঞ্জন চেয়েছিল টুম্পা নিজের স্বামীর সঙ্গে বিবাহ ভেঙে বেরিয়ে আসুক। রঞ্জন নিজেও নিজের বিবাহ সম্পর্ক ভাঙতে চেয়েছিল বলেই জানা গেছে। চেয়েছিল এই গৃহবধূকে নিয়ে নতুন সংসার পাততে। কিন্তু অনেক বলার পরও রাজি না হওয়াতেই শেষ অবধি খুনের পথই বেছে নিয়েছিল রঞ্জন, এমনটাই পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। জানা গেছে ঘটনার দিন কোনও কাজের অছিলায়  রঞ্জনের সাথে বেরিয়ে আসেন ওই গৃহবধূ। রঞ্জন তাঁকে নিয়ে আসে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দুরে হলদিয়ার ওই খুনের জায়গায়। সঙ্গে ধারালো অস্ত্র এবং রক্তমোছার জন্য টিস্যু পেপারও নিয়ে এসেছিল। হলদিয়ার গ্রামীন ঢালাই রাস্তায় বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তাও বলেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, সন্ধ্যার মুখে ওই নির্জন রাস্তায় শেষবারের রঞ্জন ওই গৃহবধূকে জিজ্ঞাসা করেছিল সে স্বামী সংসার ছেড়ে আসতে চায় কিনা। গৃহবধূ এবারও রাজি হয়নি। তারপরই পেছন থেকে এক হাতে গৃহবধূকে জাপটে ধরে অন্য হাতে ধারালো অস্ত্র চালিয়ে দেয় গৃহবধূর কন্ঠনালিতে। ওখানেই লুটিয়ে পড়েন গৃহবধূ। টিস্যু পেপারে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র মুছে বাইক নিয়ে সবং ফিরে যায় রঞ্জন।

খুনের প্রথম কয়েকদিন পুলিশ কোনও কিনারা পাচ্ছিলনা। ২৩ তারিখ টুম্পার পরিবার ভগবানপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রি করে। খবর পেয়ে সেই সূত্র ধরে এগুতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে টুম্পার জীবনে রঞ্জনের অস্তিত্বের কথা। এরপরই পুলিশ বিভিন্ন সূত্র, মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ইত্যাদি ধরে তদন্ত চালাতে চালাতে নিশ্চিত হয় যে ঘটনার পেছনে রয়েছে রঞ্জন। এরপরই মঙ্গলবার রঞ্জনকে সবং থেকে গ্রেফতার করে হলদিয়ার ভবানীপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। বুধবার তাঁকে আদালতে পেশ করে নিজস্ব হেফাজতে নিয়ে ৬ দিন আগের খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করাতে পারে পুলিশ এমনটাই জানা গেছে।

- Advertisement -
Latest news
Related news