নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্য জুড়ে শিক্ষা ও শিক্ষককে হেয় করার একটা পরিকল্পিত প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই। অনেকের অভিযোগ এই প্রচেষ্টা নাকি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আরও পরিপুষ্ট হয়ে চলেছে। কিন্তু শিক্ষক যে সর্বাংশেই শিক্ষক হতে পারেন তাঁরই নজির রাখলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের শিক্ষক অরুন কুমার শাসমল। ১৯০৫ সালে ইংরেজদের বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা রোধ করার জন্য হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ যে রাখীবন্ধন উৎসবের সূচনা করেছিলেন সেই আদর্শকে মাথায় রেখেই শিক্ষক অরুন কুমার শাসল নিজের বিরল গ্রুপের রক্ত দিয়ে জীবন রক্ষা করলেন এক মুসলিম গৃহবধূর।
জানা গেছে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই মহিলার নাম লুৎফিনা বেগম। বেশ কয়েকটি অপারেশনের পর রক্তস্বল্পতায় ভুগছিলেন লুৎফিনা। পরিবারের দাবি ‘ও’ নেগেটিভ রক্ত হওয়ার কারণেই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাদেরকে, এমনকি ব্লাড ব্যাংকের সন্ধান করো রক্ত মেলেনি । কোন উপায় না পেয়ে ঘাটাল মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন ওই পরিবার। ঘাটাল মহকুমা আধিকারিক সুমন বিশ্বাস
জানান, আমাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে
‘বিরল রক্ত সন্ধানী’ বলে। আমরা সেখানেই আমাদের এই জরুরি বার্তা পাঠিয়েছিলাম। তাতেই সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন দাসপুরের শিক্ষক অরুণ কুমার শাসমল। বৃহস্পতিবার রাখির দিনে দুপুরে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক এসে রক্ত দান করেন অরুণ বাবু।”
রক্ত পেয়ে খুশি লুৎফিনা বেগম এবং তাঁর পরিবার। হিন্দু ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া জানানোর পাশাপাশি হাসপাতালেই তাঁর হাতে রাখী পরিয়ে দেন লুৎফিনার পরিবারের এক মহিলা। রাখী উৎসবের দিনটিতে রক্ত দিতে পেরে খুশি অরুণ বাবুও। তিনি বলেন, কিছু মানুষ যখন আমাদের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতিতে ফাটল ধরাতে চাইছে, বিষ ঢালতে চাইছে তখন তার বিরুদ্ধে গিয়ে এমন একটি কাজ করতে পেরে ধন্য। রবীন্দ্রনাথ এই সম্প্রীতি অটুট রাখার জন্যই রাখীবন্ধন উৎসবের সূচনা করেছিলেন। এই অনবদ্য ঘটনার স্বাক্ষী হতে এবং রক্তদাতাকে অভিনন্দন জানাতে ঘাটাল হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজের হাতে রাখী পরিয়ে দেন মহকুমা শাসক।