নিজস্ব সংবাদদাতা: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বালিচকে আধুনিক বাস টার্মিনাস নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র (এন.ও.সি) দিতে রাজী রয়েছে রেল তবে তার জন্য জেলাশাসককে রেলের কাছে আবেদন করতে হবে। এমনটাই জানালেন দক্ষিণপূর্ব রেলের খড়গপুর ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (DRM) মনোরঞ্জন প্রধান। সোমবার এই বাস টার্মিনাস নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি সহ ১৪ দফা দাবি নিয়ে শ্রী প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির সদস্যরা। সেই আলোচনা থেকে বালিচক স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকায় উন্নয়নের জন্য রেলের তরফে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আশ্বাস মিলেছে যাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উন্নয়ন কমিটির সদস্যরা।
স্টেশন উন্নয়ন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারী এবং বিশ্বজিৎ ভূঁঞ্যা বলেন, ” রেলের কাছে আমরা এনওসি-র প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। রাজ্য প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, বালিচকের রেল স্টেশন এলাকায় বাস স্ট্যান্ড তৈরীর ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ডেবরা বিধানসভার বিধায়ক মাননীয় হুমায়ুন কবির মহাশয়কে এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমরা তাঁর কাছে দাবি জানাবো। সাথে সাথে জেলাশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমরা জোরালোভাবে দাবি তুলে ধরব।” কমিটির সহ সভাপতি কালিশংকর গাঙ্গুলী বলেন,” বাস টার্মিনাসের জমির ছাড়পত্রের পাশাপাশি রেল কর্তৃপক্ষর কাছ থেকে আমরা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আশ্বাস পেয়েছি যারমধ্যে অন্যতম হল বালিচক রেলস্টেশনের উত্তর দিকে বছর বছর বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্থায়ী জল নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ডিআরএম আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বর্ষার আগেই খাল সংস্কার করে দেওয়া হবে। আমরা চেয়েছিলাম বালিচকের পাওয়ার স্টেশনের উত্তর দিকের খালটি চওড়া করে সংস্কার করতে হবে এবং ঐ জায়গায় যে কালভার্ট রয়েছে সেটিকে চওড়া করে পুনর্নির্মাণ করতে হবে।”
বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবিও রেল মেনে নিয়েছে তা’হল বালিচকে সংকীর্ণ ফুট ওভারব্রিজের পরিবর্তে প্রশস্ত একটি ফুটওভারব্রিজ দাবি দীর্ঘদিন থেকে তুলে ধরা হয়েছে। সেই দাবি অনুযায়ী নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের টেন্ডার হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতির জন্য সেই কাজটি থমকে ছিল। এই বিষয়টি কার্যকরী হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে ডিআরএম জানিয়েছেন।
এছাড়াও এছাড়া রাস্তা সংস্কার, বন্ধ টিকিট কাউন্টার চালু, রিজার্ভেশন কাউন্টার চালু ইত্যাদি বিষয়ে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, করোনা কালে বন্ধ থাকা সমস্ত ট্রেন চালু এবং বেশ কিছু নতুন লোকাল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের দাবি জানালে ডিআরএম বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে বহু রেকের ভ্যালিডিটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই একটু সময় লাগছে। ধীরে ধীরে বন্ধ থাকা ট্রেনগুলি চালু করা হবে। কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য শিবু দাস বলেন, ” আমাদের আরও একটি দাবি ছিল বালিচক স্টেশন রোডকে আরো চওড়া করে ৫ মিটার প্রশস্ত করে নির্মাণের। সেই প্রসঙ্গে রেলের তরফে জানানো হয়েছে বালিচক ফ্লাইওভার নির্মাণের পর এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা হবে।”
কমিটির অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী জানান, ” জেলার আশেপাশের বেশ কয়েকটি থানার পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলারও কয়েকটি থানার ট্রেন ধরার জায়গা এই বালিচক। কমিটির দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে যেমন আমরা উড়ালপুলের দাবি আদায় করেছি যা বাস্তবায়নের পথে। আবার তারই সঙ্গে উঠে আসছে নতুন নতুন বাস্তব চাহিদা। এর সবটাই রেল করতে পারবে এমনটা নয় কিছু কাজ রেল এবং রাজ্য সরকারের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে গড়ে উঠবে। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই সমন্বয় করতে চাইছি আমরা। আমরা যেমন রেলের কাছে যাচ্ছি তেমন সরকারের কাছেও গেছি এবং আবারও যাবো। আমরা মনে করছি আমাদের এই ধারাবাহিক উদ্যোগ বালিচক স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকাকে সময়োচিত একটি আধুনিক ব্যবস্থাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পারবে।”