নিজস্ব সংবাদদাতা : যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানা পুলিশের। বুধবার বেলদা স্টেশন চত্ত্বর থেকে ফের গ্রেফতার করা সম্ভব হল সোমবার সকালে থানা থেকে পালানো বন্দি সোমনাথ ঘোড়াই ওরফে গেরুকে। যদিও তারই মধ্যে পুলিশকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে ওই বন্দি কারন হিসাব অনুযায়ী তাকে মঙ্গলবার আদালতে পেশ করার ছিল যা পুলিশ পারেনি।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/Screenshot_20220310-002439_PicsArt.jpg)
উল্লেখ্য বেলদার এক ব্যবসায়ীর গুদামে চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সোমনাথের জড়িত থাকার জানতে পারে বেলদা পুলিশ। শনিবার রাতে কেশিয়াড়ীর এলাসাইয়ের বাসিন্দা ২১ বছরের সোমনাথকে কেশিয়াড়ী বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। রবিবার তাকে দাঁতন এসিজেএম আদালতে পেশ করার পর আরও কিছু তথ্য পাওয়ার জন্য আসামীকে দুদিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসে বেলদা পুলিশ।সেই হিসাবে মঙ্গলবার ধৃতকে ফের আদালতে পেশ করার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই থানা থেকে চম্পট দেয় সে।
পুলিশ জানিয়েছে পালানোর জন্য বেশ ভালোই ছক কষেছিল সোমনাথ। সোমবার সকালে অদ্ভুত আচরণ শুরু করে আসামী। সে থানার লকআপের গারদে ক্রমাগত মাথা ঠুকতে থাকে। বিচারাধীন বন্দি পাছে গারদের মধ্যে আহত রক্তাক্ত হয়ে পড়ে সেই আশঙ্কায় তাকে বাইরে বের করে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকের সামনের বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়। কর্তব্যরত আধিকারিক যখন অন্যান্য মামলার তদবির করছিলেন তখন আসামী পেচ্ছাব করার নাম করে বাথরুমের দিকে যায় সুযোগ বুঝে থানা থেকে বেরিয়ে পালায়। কিছুক্ষণ পরে টনক নড়ে পুলিশের। পুলিশ যখন আশেপাশে খোঁজ শুরু করে ততক্ষনে বেলদা চত্ত্বর থেকেই হাপিস হয়ে যায়।
এদিকে পরের দিনই বন্দিকে আদালতে পেশ করার কথা। ফলে তটস্থ হয়ে ওঠে পুলিশ কারন নিয়ম অনুযায়ী বিচারাধীন বন্দি আদালতের আওতাধীন। পুলিশ তাকে আদালত থেকেই নিজেদের হেফাজতে এনেছে। সময়মত তাকে আদালতে হাজির করতে না পারলে আইনি জটিলতায় পড়বে পুলিশই। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “তারও চেয়ে বড় কথা যদি ওই বন্দির ভালোমন্দ কিছু হয়ে যায়। যদি সে পলাতক অবস্থায় দুর্ঘটনায় মারা যায় কিংবা আত্মহত্যা করে অথবা একই অপরাধের সঙ্গে জড়িত অন্য আসামীরা নিজেদের বাঁচাতে ওই বন্দিকে খুন করে ফেলে তা’হলে পুলিশের বিরুদ্ধেই মারাত্মক আইনি প্রক্রিয়া চালু হয়ে যায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের চাকরি নিয়ে টানাটানি, জেল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তাই প্রচন্ড দুর্ভাবনায় ছিলাম। ভগবানকে ধন্যবাদ যে আসামি ফের ধরা পড়েছে।”
সোমবার সকাল থেকে বুধবার বিকাল অবধি প্রায় ৫২ ঘন্টা ধরে পুলিশ আশেপাশের সমস্ত সম্ভাব্য এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে গেছে পুলিশ। আশেপাশের থানা গুলিকেও বিষয়টি জানিয়ে সতর্ক করা হয়। পুলিশের নিজস্ব ইনফর্মার, সিভিক ইত্যাদিদের সতর্ক করা হয়। শেষমেশ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে খবর আসে বেলদা স্টেশন লাগোয়া একটি এলাকায় রয়েছে সোমনাথ। এরপরই পুলিশ ছুটে যায় সেখানে। ধরে আনা হয় তাকে। বেলদা থানার চত্ত্বরে গাড়ি থেকে নামিয়ে থানার ভেতর নিয়ে যেতেই বড়বাবুকে দেখে হাত জড়ো করে বলে, স্যার খুব ভুল হয়ে গেছে, আর এরকম করবনা।’ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে সোমনাথ। বড়বাবু তাকে আশ্বস্ত করেন মারধর করা হবেনা বলে। ফের বৃহস্পতিবার আদালতে পেশ করা হবে তাকে।