নিজস্ব সংবাদদাতা: গত সাতদিনের মধ্যে পর পর ৩ মহিলার হার ছিনতাইয়ের মূল পান্ডা তথা লিঙ্কম্যানকে গ্রেপ্তার করল খড়গপুর পুলিশ। পুলিশের দাবি গ্রেপ্তার হওয়া এই লিঙ্কম্যানের সরবরাহ করা তথ্য অনুযায়ীই ছিনতাই করত দুই দুষ্কৃতি। পুলিশের আরও দাবি যে ওই দুই ছিনতাইকারী যে বাইকটি ব্যবহার করত সেটিকেও আটক করেছে তারা। আশ্চর্যের ঘটনা এই যে এই বাইকটি একজন আইনজীবীর। গোটা ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। এই পরপর ছিনতাইয়ে যেমন ‘নতুন পদ্ধতি’ ব্যবহার করতে দেখেছে পুলিশ তেমনই ছিনতাইয়ের জন্য ‘লিঙ্কম্যান’ ও একজন আইনজীবীর বাইক ব্যবহার পুলিশকে অবাক করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ধৃত ওই লিঙ্কম্যান যুবকের নাম রাজা দাস(৩২)। রাজার বাড়ি খড়গপুর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের গেটবাজার এলাকায়। একটি নির্দিষ্ট সূত্রে খবর পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে গেটবাজার এলাকায় একটি স্থানে হানা দিয়ে রাজাকে গ্রেপ্তার করে খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ। শুক্রবার রাজাকে খড়গপুর এসিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে ধৃতের ৪দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছে। তারপর থেকেই রাজাকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে রাজা দাসের কাজ ছিল কোথায় কোন মহিলা গলায় নেকলেস পরে রয়েছে। মহিলা এই মুহূর্তে কোথায় রয়েছেন, কী করছেন, আশেপাশে কেউ রয়েছে কিনা এই সব খবর মোবাইল মারফৎ জানিয়ে দিত দুষ্কৃতিদের। এরপরই দুষ্কৃতিরা অপারেশন শুরু করত। আরও জানা গেছে দুষ্কৃতিরা অপারেশনের জন্য যে বাইকটি ব্যবহার করত সেটি একজন আইনজীবীর। একটু বেড়িয়ে আসার নাম করে আইনজীবীর পরিচিত ওই যুবক বাইকটি নিয়ে যেত এবং অপারেশনের আগে বাইকটির নম্বর প্লেট খুলে নিত।
এরপর কোনও একটি বাড়ি বা স্থানের ঠিকানা জানতে চাওয়ার নাম করে মহিলার একেবারে কাছাকাছি চলে ওই দুই যুবকের এক যুবক। অন্য যুবক বাইক চালু করে দাঁড়িয়ে থাকত। মহিলা যখন ঠিকানা মনে করার জন্য চিন্তা করত বা অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ত তখনই তাঁর গলার নেকলেস ছিনতাই করে পালাত। এভাবেই গত শুক্রবারে দুই মহিলা ও বুধবার এক মহিলার কাছ থেকে গলার হার ছিনতাই করে। ওই তিন মহিলার বর্ননা অনুযায়ী পুলিশ বুঝতে পেরেছিল প্রতিটি ঘটনায় একই চেহারার দুই দুষ্কৃতি জড়িত রয়েছে। আর ব্যবহার করা হয়েছে হালকা রঙের নম্বর প্লেট বিহীন একটি মোটরবাইক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে আটক মোকরবাইকটি শুক্রবার সনাক্ত করেছেন পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের এম এস টাইপ এলাকার বাসিন্দা প্রৌঢ়া কে উমা যাঁর গলা থেকে সাড়ে ৩ভরির হার গত শুক্রবার সকালে ছিনতাই করেছিল দুষ্কৃতিরা। রাজার কাছ থেকেই এই মোটরবাইকটির খোঁজ পায় পুলিশ। পাশাপাশি রাজার সূত্র ধরেই পুলিশ ওই দুই দুষ্কৃতির ছবি জোগাড় করেছে। বুধবার যাঁদের নেকলেস ছিনতাই হয়েছিল সেই কে উমা ও কে মিনাক্ষী ওই ছবি দেখে জানিয়ে দিয়েছে যে এই ছবির ব্যক্তিরাই সেই দুই ছিনতাইকারী। এরপরই পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে ওই দু’জনের। সনাক্ত করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য, রাজা দাস মামুলি লিঙ্কম্যান নয় বরং বলা যেতে পারে সেই ছিনতাই চক্রের মূল পান্ডা। ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী। কোথায় কখন কে একা একা মন্দিরে যায়, কে বাড়ির সামনে আল্পনা দেয় এসবই আগে থেকে রেইকি করে ছক বানাতো তারপরই অপারেশনের পরিকল্পনা বানিয়ে নিয়ে সবুজ সংকেত পাঠাত ওই দুষ্কৃতিদের। এলাকার ভালো ছেলে বলে পরিচিত ওই দুষ্কৃতিরা এরপর আইনজীবীর বাইকটি ধার নিত দুষ্কর্মের জন্য। খড়গপুর পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন ছিনতাইকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হয়ে গেছে বাকি খালি ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা যা এবার সহজ গেল। এদিকে শুক্রবারই খড়গপুর শহর বিজেপির পক্ষ থেকে খড়গপুর টাউন থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়।