Saturday, July 27, 2024

Midnapore: রাজনৈতিক নেতাদের কথায় চলার মাশুল! ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিডিও-র

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্য জুড়েই শাসকদলের হয়ে ওকালতি, দালালি করার অভিযোগ চরমে উঠেছে সরকারি আমলা কিংবা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে। কম বেশি মাশুলও দিচ্ছেন অনেকে। জেলে রয়েছেন শান্তি প্রসাদ সিনহা, কল্যাণময় গাঙ্গুলী, এস মির্জা, অশোক মিশ্রের মত আধিকারিক কিংবা পুলিশ কর্তারা। সুতোর ওপর ভবিষ্যৎ ঝুলছে আলাপন বন্দোপাধ্যায় সহ আরও এক ঝাঁক আমলা কিংবা পুলিশ আধিকারিকদের। এবার শাসক দলের নেতাদের কথায় কাজ করার মাশুল দিয়ে এবার ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ পেয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এক বিডিও। স্থানীয় শাসক দলের কথা মত এক পরিবারের রায়ত জায়গার ওপর দিয়ে রাস্তা বানানোর অপরাধে ওই ক্ষতিপূরনের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা আদালত। আগামী ২ মাসের মধ্যেই ওই ক্ষতিপূরণ না মেটালে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হতে পারে তাঁকে।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ১ ব্লকের নন্দনপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের। ২০২০ সালে রবিদাসপুর নদীবাঁধ থেকে তিওরবেড়িয়া হাই স্কুল পর্যন্ত ঢালাই রাস্তা তৈরির সময় একটি পরিবারের ৪৬ শতক জমি জোর করে দখল নিয়ে নেওয়া হয়। পরিবারের এক সদস্য জানান, “রাতের বেলায় প্রায় ৫০ টি হ্যাজাক জ্বালিয়ে ৩০০ শ্রমিক নামিয়ে ওই রাস্তা করা হয়েছিল। আমরা যাতে বাধা দিতে না পারি তারজন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আমরা সেই রাতে কী করতে পারি এই সরকারি গুন্ডামির বিরুদ্ধে?” পরে পরিবারটি সেই সময় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, ব্লক প্রশাসন, মহকুমাশাসক, জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্য মেলেনি।” এরপর পরিবারের তরফে বিএলএলআরও কাছে জমির মালিকানা নিশ্চিত করতে আবেদন জানানো হয়। ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিক জানিয়ে দেন জমি তাঁদেরই। কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবার। আদালতে ক্ষতিপূরণরনের আবেদন করেন তাঁরা।

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ ২০১৩ সালের ক্ষতিপূরণের আইন মেনে পরিবারটিকে ৪৬ শতক জমির বাজারমূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন গ্রাম পঞ্চায়েতকে। গ্রামপঞ্চায়েত জানায় রাস্তা তাঁরা নয়, রাস্তা তৈরি করেছে দাসপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি কর্তৃপক্ষ। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কল্যাণী দোলইয়ের দেওয়াত। তথ্যের ভিত্তিতে ডিভিশন বেঞ্চ ব্লকের বিডিওকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ঘটনা এটাই যে, ২০২০ সালের র ২৮ ফেব্রুয়ারি বিডিও বিকাশ নস্কর ঠিকাদার রামকৃষ্ণ দাসকে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ফলে রাস্তা তৈরির জন্য যাবতীয় দায় দাসপুর – ১ নম্বর বিডিওরই।”

পশ্চিম মেদিনীপুরের এক প্রাক্তন বিডিও বলেছেন, কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের চাপ আসে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কায়েম করার জন্য শাসকদলের লোকেরা তো চেষ্টা করবেই। কিন্তু একজন বিডিও হিসাবে তাঁকে দেখতে হবে সেই সিদ্ধান্ত সরকারের নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে কিনা। একটা রাস্তা কেন রাতের বেলায় তৈরি হচ্ছে এই প্রশ্ন ওনার করা উচিৎ ছিল। তাছাড়া আমরা আইএএস বা ডব্লুবিএসএস আধিকারিকরা দেশের সংবিধান বলবৎ করার প্রাথমিক সৈনিক। সেই সংবিধান আমাকে বলছে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির অধিকার রক্ষা করতে হবে। পঞ্চায়েত সমিতির নেতারা চাইলেও একজন বিডিও হয়ে সেই অধিকার উনি কেন খর্ব করতে গেলেন?”

এদিকে বর্তমানে বাজারমূল্য অনুযায়ী পরিবারের দখল করে নেওয়া জমির দাম প্রায় এক কোটি দশ লক্ষ টাকা বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে শুভাশিস কাপাস। তিনি বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি, কে ক্ষতিপূরণ দেবে তা তো আদালত ঠিক করে দিয়েছে। আমাদের আমাদের চাই জমির ক্ষতিপূরণ। দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না পেলে আমরা আদালত অবমাননার মামলা করব।” এই বিষয়ে বিডিও বিকাশ নস্কর এক সংবাদপত্রকে
বলেন, , “কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় আমি জেনেছি। এই নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতিতে আলোচনা করা হবে। তবে নন্দনপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের রবিদাসপুর গ্রামে ওই রাস্তা তৈরিতে গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূমিকা কী ছিল তা জানতে চেয়ে প্রধানকে শোকজ করা হয়েছে। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন,‌ “অত টাকা তো নেই পঞ্চায়েত সমিতির। ওই পরিবারটির সঙ্গে আমরা কথা বলব।”

- Advertisement -
Latest news
Related news