নিজস্ব সংবাদদাতা: সারা রাজ্য জুড়ে যখন শিক্ষা ক্ষেত্রে একের পর এক দুর্নীতি নিয়ে জেরবার সেই সময়ে দাঁড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান পদ থেকে কৃষ্ণেন্দু বিষয়ীর ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল জেলায়। রবিবার নিজের ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা করেছিলেন কৃষ্ণেন্দু। জানিয়েছিলেন ব্যক্তিগত কারণে তিনি পদত্যাগ করছেন বলে। বছর না ঘুরতেই কৃষ্ণেন্দুর এই পদত্যাগ বেশ কিছু বিতর্ককেও সামনে নিয়ে চলে আসে। কৃষ্ণেন্দু নিজে প্রকাশ্যে এ নিয়ে কিছু না বললেও তাঁর কিছু অনুগামী বিষয়টিকে শিক্ষার চলতি ব্যবস্থার ওপরে তাঁর বীতশ্রদ্ধ মনোভাব বলেই চালানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু এরই মধ্যে ফাঁস হওয়া একটি সরকারি চিঠিতে জানা গেল ইস্তফা নয়, কোচবিহারের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান তৃনমূল নেতা হিতেন বর্মনের মতই অপসারিত করা হয়েছে কৃষ্ণেন্দু বিষয়ীকে। এই চিঠির তারিখ ২৪শে জুন আর কৃষ্ণেন্দু তাঁর ইস্তফার কথা জানিয়েছেন ২৬শে জুন।
উল্লেখ্য ২৩ তারিখ অপসারিত করা হয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে। শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই যখন অভিযোগের আঙুল তুলেছে তাঁরই দিকে সেই সময়ই কল্যাণময়ের অপসারণ বুঝিয়ে দিয়েছে আদালতের শুনানি পর্বে উঠে আসা অভিযোগ গুলিকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ঠিক দু’দিন পরই সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায় হিতেন বর্মনের অপসারণের কথা। জানা যায় কল্যাণময়কে অপসারণের পরের দিনই অপসারিত করা হয়েছে হিতেন বর্মনকে।
হিতেন বর্মনকে ঠিক কেন অপসারিত করা হল তা সঠিকভাবে জানা গেলেও একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রাথমিক শিক্ষকদের সমস্ত নথিপত্র চেয়ে পাঠায় রাজ্য শিক্ষা দফতর। অন্যান্য জেলার পাশাপাশি কোচবিহার জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের কাছেও সেই নির্দেশ এসে পৌছায়। কিন্তু কোচবিহার জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ দেখে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ অফিসে বহু শিক্ষকের নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর জেলা বিদ্যালয় সংসদের তরফে প্রাথমিক শিক্ষকদের নথিপত্র চেয়ে স্কুল পরিদর্শকদের নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরই জেলা সংসদের চেয়ারম্যান পদ থেকে হিতেন বর্মনকে অপসারিত করার নির্দেশিকা জারি হয়।
সূত্র মারফৎ জানা গেছে ওই একই দিনে অর্থাৎ ২৪শে জুনই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষয়ীকেও অপসারিত করা হয়। দ্রুত তাঁর দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশও দেওয়া হয় জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনার আইন মোতাবেক ৫২ ধারার কথা এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যার অর্থ রিমুভাল বা অপসারিত করা। প্রশ্ন হচ্ছে এটা জানার পরও কৃষ্ণেন্দু কেন তাঁর ফেসবুক পেজে বিষয়টিকে পদত্যাগ বলে চালাতে চাইলেন?
শালবনীর একটি স্কুলের শিক্ষক কৃষ্ণেন্দুর রাজনৈতিক পরিচয় তিনি গোপন রাখেননি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর নিজের একটি অনুগামী গোষ্ঠী রয়েছে যাঁরা তাঁকে আদর্শ বলে মনে করেন। সেই গোষ্ঠীর কাছেই নিজের ইমেজ ধরে রাখার জন্যই তিনি এই কাজ করলেন?