Saturday, July 27, 2024

Midnapore Crime: পিংলায় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে ঘিরে গৃহ অশান্তি! মুক্তির উপায় খুঁজতে স্বামী-স্ত্রী মিলে বিষ খাওয়ালো প্রেমিককে

- Advertisement -spot_imgspot_img

শশাঙ্ক প্রধান: বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে। বেরিয়েও আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু বন্ধু আর স্ত্রী মিলে তাঁকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে নিজেদের সংসারে শান্তি খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। দ্রুত চিকিৎসায় এবারের মত বেঁচে গেছেন ওই ব্যক্তি, খুনের অপরাধে গ্রেফতার হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বড়িশা গ্রামে।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে
হাসপাতালে বিবেক

পুলিশ জানিয়েছে ধৃত দম্পতির নাম দীপঙ্কর পাল ও রুম্পা পাল। পিংলা পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার বাগনাবাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়িশা গ্রামের বাসিন্দা তাঁরা। অন্য দিকে গৃহবধূ রুম্পার প্রেমিকের নাম বিবেক পাত্র। তাঁরও বাড়ি ওই একই গ্রামে। রুম্পা ও দীপঙ্করের মতই বিবাহিত বিবেক পাত্রও। বাড়িতে স্ত্রী ছাড়াও বিবেকের ৩ সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে রুম্পা ও দীপঙ্করের ১টি সন্তান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে দীপঙ্কর ও বিবেক দুজনে দুজনের পরমবন্ধু। একই গ্রামে একই সাথে বেড়ে ওঠার পাশাপাশি দুজনেই একই পেশায় যুক্ত। বড়িশা, বাখনাবাড়, অশ্বত্থতলা ইত্যাদি বাজার এলাকায় পরিবহন শ্রমিকের কাজ করেন দুজনেই। দুজনে একই ইউনিয়নের সদস্য। দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে গত লকডাউনের সময়। কাজকর্ম তেমন না থাকায় আড্ডা জমত দুই বন্ধুর। আর এই আড্ডার বেশিরভাগটাই জমত দীপঙ্করের বাড়িতে। আর চলত খানা পিনাও।

রুম্পা ও দীপঙ্কর

সেই আড্ডার মক্ষীরানী হয়ে ওঠেন দীপঙ্করের স্ত্রী রুম্পা। ক্রমশ: দীপঙ্করের চাইতেও বিবেকের কাছে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন দীপঙ্করের স্ত্রী রুম্পাই। দুজনের মধ্যে নিবিড় শারীরিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে। গভীর প্রেমের সম্পর্ককে মধুময় করে তুলতে বিবেক রুম্পাকে নগদ টাকা ছাড়াও সোনার গহনা গড়িয়ে দিতে থাকেন।

এদিকে গ্রামবাসীদের কাছে ক্রমশ এই অবৈধ সম্পর্কটি ধরা পড়ে। বিষয়টি দৃষ্টিকটু হয়ে পড়ছে দেখে তাঁরা দু-একবার সতর্কও করেন বিবেক ও দীপঙ্করকে। কিন্তু তারপরও বিষয়টি চলতে থাকে লুকিয়ে চুরিয়ে। এদিকে বিবেককে কেন্দ্র করে রুম্পা ও দীপঙ্করের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। এরই মধ্যে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও সদস্যরা মিলে দীপঙ্কর ও বিবেককে নিয়ে আলোচনায় বসেন। সেখানেই বিবেককে সতর্ক করে দিয়ে বলে দেওয়া হয় যদি সে রুম্পার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যায় তাহলে দীপঙ্কর ও বিবেককে ইউনিয়ন থেকে বহিস্কার করা হবে এবং দুজনকেই আর কোনও কাজ দেওয়া হবেনা। বিবেকের বক্তব্য, এই মিটিংয়ের পর থেকেই সে পুরোপুরি দীপঙ্করের বাড়ি যাওয়া ছেড়ে দেয়। যদিও রুম্পা ফোনে তার সঙ্গে কথা বলত এবং তাঁকে তার বাড়িতে আসতে বলত।

পরের ঘটনা গত বৃহস্পতিবার। বিবেক জানিয়েছে, বিকাল বেলায় দীপঙ্কর তাকে ফোন করে তার বাড়িতে যেতে বলে। বিবেক জানিয়ে দেয় যে সে আর ওই বাড়িতে যাবেনা। কিন্তু দীপঙ্কর জানায়, তাকে ঘিরে তাঁদের পারিবারিক অশান্তি বেড়েই চলেছে। তার স্ত্রী রুম্পা এখনও তাকে ভুলতে পারছেনা। বিবেক যেন একবার দীপঙ্করের সামনে দাঁড়িয়ে রুম্পাকে বলে যায় যে সে আর তাকে চায়না। এই শেষবারের মত বন্ধু হিসাবে সে যেন এই টুকু উপকার করে যায় তাঁদের সংসারের শান্তি ফেরাতে। বিবেক জানায়, ‘ দীপঙ্করের কথা মতই সে শেষবারের জন্য গিয়েছিল তার বাড়িতে। সে গিয়ে দেখে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চূড়ান্ত অশান্তি চলছে। একটি আগাছা মারার রাসায়নিক বোতল নিয়ে দু’জনে টানাটানি করছে। বিবেক তখন বলে আমাকে ডেকে তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছ কেন?’ বিবেক বলে, “এরপর হঠাৎই দীপঙ্কর আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে, তোর জন্যই যত অশান্তি আমাদের মধ্যে। দুই বেঁচে থাকলে আমাদের শান্তি ফিরবেনা। আমি নিচে পড়ে যাই। দীপঙ্কর আমার বুকের ওপর চড়ে বসে। রুম্পা আমার পা দুটো চেপে ধরে। এরপর সেই আগাছা মারা রাসায়নিক জোর করে আমার মুখে ঢেলে দেয় দীপঙ্কর। তখন আমি বুঝতে পারি যে এরা দুজনে মিলে পরিকল্পনা করে আমাকে ডেকে এনেছিল। ওরা জোর করে আমার মুখে কিছুটা রাসায়নিক ঢেলে দিয়েছিল। আমি কিছুটা গিলেও ফেলি। এরপর কোনমতে ধাক্কা দিয়ে ওদেরকে সরিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসি।”

ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসতে আসতে পকেট থেকে ফোন বের করে নিজের মামাকে বিষয়টি জানায় বিবেক। তারপর হোঁচট খেয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। বিবেকের মামা বাজারে ছিলেন। কয়েকজনকে নিয়ে দৌড়ে আসেন এবং বিবেককে উদ্ধার করে তমলুক হাসপাতালে নিয়ে যায়। শুক্রবার পিংলা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন বিবেকের পরিবার।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই গৃহবধূ ও তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করে পিংলা থানার পুলিশ। আপাততঃ সুস্থ আছে বিবেক।

- Advertisement -
Latest news
Related news