শশাঙ্ক প্রধান: পিংলা শিশুমৃত্যু রহস্যের কিনারা হল মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যেই। শেষ অবধি পুলিশ ও প্রতিবেশীদের চাপে সত্য সামনে এল এবং সে সত্য বড়ই মর্মান্তিক। দুপুর থেকে সাজানো মায়ের গল্প ফাঁস হয়ে গেল অবশেষে। জানা গেছে লেপে চাপা পড়ে নয় কিংবা স্তনপান করানোর সময় প্রেমিকের সঙ্গে ফোনে প্রেমালাপ করছিলেন মা। ওই সময় স্তন পান করতে গিয়ে বৃন্তে কামড়ে দিলে প্রেমালাপে বাধা পেয়ে ক্রোধে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেছে শিশুটিকে।
উল্লেখ্য শনিবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার অন্তর্গত বাখনাবাড় গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত উত্তরবাড় গ্রামে ২বছরের শিশুকন্যার নাম দীপ্তি জানার মৃত্যু হয়। দীপ্তির মা পূজা জানায়, দুপুর বেলায় বাড়ির উঠোনে লেপ রোদে দিয়েছিলেন তিনি । সেই লেপের মধ্যেই খেলছিল শিশুটি। এরপর মা রান্না করতে চলে যায়। পরে সে এসে দেখে মেয়ে লেপের মধ্যে অপদমস্তক জড়িয়ে রয়েছে। মা লক্ষ্য করেন বুক ওঠানামা করছেনা মেয়ের। নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখেন শ্বাসপ্রশ্বাস পড়ছেনা। মৃত্যু হয়েছে শিশুকন্যার।
যদিও এই গল্প বিশ্বাস করেনি পুলিশ।প্রতিবেশীরাও সন্দেহ প্রকাশ করেন যে লেপে জড়িয়ে কী করে মৃত্যু হতে পারে। পূজাকে ঘিরে প্রতিবেশীরা প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। এরপরই বদলে যায় পূজার বয়ান। সে বলে শিশুটি স্তন পান করার সময় তাঁর বৃন্তে কামড়ে দিলে যন্ত্রনায় ক্রোধে শিশুটিকে বালিশ চাপা দিয়ে দেন তিনি। তিনি বুঝতে পারেননি যে এরফলে মেয়ে মারা যাবে।
যদিও এই তত্ত্বও মানতে রাজি নয় পুলিশ। এবার প্রশ্ন ওঠে যদি শিশুটি হঠাৎই মায়ের স্তনবৃন্তে কামড় দেয় তাহলে অনেক মা যন্ত্রনা, ক্রোধ সংবরন করতে না পেরে শিশুকে চড় থাপ্পড় মারতে পারে। সেটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু বালিশ চাপা দিয়ে মারবে কেন? তা’হলে কী তৃতীয় কোনও এরপর শুরু হয় অন্য ঘটনার খোঁজ সেই খোঁজ করতে গিয়ে এবার উঠে আসে প্রতিবেশী দেবাশিস মন্ডলের নাম। জানা গেছে স্বামী দেবাশিস জানা কর্মসূত্রে আন্দামানে থাকে। লকডাউনে দেড়বছর ঘরে থাকার পর ৫দিন আগেই ফের আন্দামান গেছে সে।
আগে থেকেই স্বামী দেবাশিস জানার অনুপস্থিতিতে প্রতিবেশী দেবাশিস মন্ডলের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন ওই গৃহবধূ। দেড়বছর স্বামী ঘরে থাকায় লুকিয়ে চুরিয়ে চলছিল প্রেম। ৫ দিন আগে স্বামী চলে যাওয়ায় সেই প্রেম আবার জমে ওঠে। গৃহবধূর বোন জানিয়েছে তাঁর দিদিকে তাকে জানিয়েছিল যে ‘দেবা’র সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাঁর দিদির। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য নিজের গহনা বিক্রি করে ফোন কিনেছিল সে। এই দেবাশিস তাঁকে মাঝে মধ্যে টাকাও দিত। ঘটনার সময় পূজা ফোনে কথা বলছিল প্রেমিক দেবাশিসের সাথে। সেই সময় মেয়ে স্তনপান করছিল। তখনই শিশু মায়ের বৃন্তে কামড়ে দিলে হয়ত প্রেমিকের সঙ্গে কথায় বাধা প্রাপ্ত হয়েই ক্রোধে এই কাজ করে থাকতে পারে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে দেবাশিস ও পূজার বিয়ে হয় বছর তিনেক আগে। দীপ্তি তাঁদের একমাত্র সন্তান। দেবাশিসের মা ও বাবা রয়েছেন। বাবাও রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ঘটনার সময় তিনি কাজে গেছিলেন অন্যত্র। দেবাশিসের মা অর্থাৎ পূজার শাশুড়ি বাড়ির কয়েকটি ছাগল নিয়ে সামান্য দূরত্বে চরাতে গেছিলেন। এই সময়েই রান্না করতে করতে প্রেমিকের সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। মধ্যে ঘটে যায় এই মর্মান্তিক ঘটন। প্রতিবেশীরা দেবাশিস মন্ডলকে ধরে আনে। দুজনকেই অল্প মারধর করা হয়। পরে পুলিশ এসে দুজনকেই গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। খুনে দেবাশিসের কোনও মদত রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।