নিজস্ব সংবাদদাতা: এক তরফা কাজ করছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আর কাজের নামে লুট হচ্ছে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা। বিডিওর কাছে চিঠি লিখে এমনই অভিযোগ করলেন উপপ্রধান সহ ৭জন পঞ্চায়েত সদস্য। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান। অন্যদিকে বিজেপির অভিযোগ এই ঘটনায় প্রকাশ্যে চলে এসেছে পঞ্চায়েতের টাকা নিয়ে বখরাবাজির কোন্দল। একদল কামাচ্ছে আর অন্যদল কামাতে পারছেনা। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরে বেলদা থানার অন্তর্গত হেমচন্দ্র গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার। এই গ্রামপঞ্চায়েতটি নারায়নগড় পঞ্চায়েত সমিতির অধীন।
মঙ্গলবার, ১৮ই জানুয়ারি নারায়নগড় বিডিওকে লেখা একটি অভিযোগ পত্রে হেমচন্দ্র গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গৌতম পুষ্টি এবং আরও ৬জন পঞ্চায়েত সদস্য জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধান তাঁদের কোনও গুরুত্বই দিচ্ছেনা। গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে তাঁদের যুক্ত করা হচ্ছেনা। এমন কী ওই পঞ্চায়েত সদস্যদের সংসদ এলাকার কাজেও তাঁদের যুক্ত করা হচ্ছেনা। উপপ্রধান আরও জানিয়েছেন, আসলে কোথাও কোনও কাজই হচ্ছেনা। কাজের নামে টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। লুট করা হচ্ছে এলাকার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পঞ্চায়েতের টাকা।
উপপ্রধান জানিয়েছেন, ‘ যে কাজ হয়ে গেছে বলে খাতায় কলমে দেখানো হয়েছে তা আদতে হয়নি। অথচ তাঁর জন্য বরাদ্দ অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। কোনও বনসৃজন হয়নি কিন্তু সরকারি খাতায় দেখানো হচ্ছে বনসৃজন হয়ে গেছে কিন্তু বাস্তবে গাছ লাগানোই হয়নি। বনসৃজনের জন্য শ্রমিকদের বরাদ্দ টাকা প্রধান এবং তাঁর সহযোগীরা আত্মসাৎ করেছেন।’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কাকলী গুছাইত। তিনি বলেন, ‘এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। নিয়ম মেনেই সমস্ত কাজ করা হয়েছে। তাছাড়া সরকারি প্রকল্পে প্রধান একা কোনও কাজ করতে পারেনা। সরকারি আধিকারিক, জব আ্যসিটেন্টরা কাজের তদারকি করেন। ওঁরা কেন এই অলীক অভিযোগ করেছেন জানিনা।’
বিজেপির তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে পুরো লড়াইটাই আসলে লুটের টাকার ভাগ বাঁটোয়ারার লড়াই। নারায়নগড় দক্ষিণ মন্ডল বিজেপি সভাপতি রমারঞ্জন দাস বলেন, ‘একদল লুট করছে আর অন্যদল পাচ্ছেনা। কিন্তু এই দুই গোষ্ঠীই আবার এক হয়ে যায় অন্যদলের সদস্যদের বিরুদ্ধে। আমাদের ২জন নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য রয়েছেন যাঁদের কার্যত অফিসেই ঢুকতে দেওয়া হয়না। কিছুদিন আগেই এক সদস্যকে মেরে হাত ভেঙে দেয় ওরাই। এখন একদল ভাগ পাচ্ছে আর অন্যদল পাচ্ছেনা এই লড়াই তারই। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে গোটা ঘটনাই নারায়নগড় এলাকার চিরায়ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফসল। এই দুই গোষ্ঠীর এক গোষ্ঠীর নেতা হলেন ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ অন্য গোষ্ঠীর নেতা বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট। সূর্যকান্ত অট্ট বিধায়ক হওয়ার আগে এই গ্রাম পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রক ছিলেন মিহির অনুগামী উপপ্রধান গৌতম পুষ্টি। তখন নারায়নগড় জুড়েই মিহির অনুগামীরাই দলে ভারী ছিলেন। কিন্তু সূর্য অট্ট বিধায়ক হওয়ার পর থেকেই তাঁর পাল্লা ভারী হতে শুরু করে। একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত গুলির পরিচালন ক্ষমতায় এখন তারাই।