নিজস্ব সংবাদদাতা: পথ কুকুরদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত করার চেষ্টায় কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করলেন মিডনাপুর এন্ড খড়গপুর স্ট্রিট আ্যনিমেল লাভার্স গ্রুপের সদস্যরা। প্রথম দফায় খড়গপুর শহরে বেশ কয়েকটি কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার পর এবার মেদিনীপুর শহরের পথ কুকুরদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। মিডনাপুর এন্ড খড়গপুর স্ট্রিট আ্যনিমেল লাভার্স গ্রুপের সদস্য শিবু রানা জানিয়েছেন, ‘দুই শহর মিলিয়ে আমরা ৬৩টি পথ কুকুরের লাইগেশন করিয়েছি। যারমধ্যে মেদিনীপুর শহরের ৪১টি এবং খড়গপুর শহরের ২২টি মা কুকুর ছিল।’ শিবু জানিয়েছেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল দুই শহরের ৫০টি করে ১০০টি কুকুরের লাইগেশন করানো। কিন্তু আমরা পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্ৰহ করতে পারিনি। একেকটি কুকুরের লাইগেশন ও অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসার জন্য অন্ততঃ আড়াই হাজার টাকা দরকার হয়।’
জানা গেছে এপ্রিল মাসের দুটি দিনে খড়গপুর ও মেদিনীপুরে দুটি ক্যাম্পের মাধ্যমে এই ৬৩টি কুকুরের লাইগেশন করা হয়েছে। খড়গপুরের হিজলী স্বাস্থ্য কেন্দ্র সংলগ্ন একটি এলাকায় খড়গপুরের ক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হয়। এখানে যে ২২টি কুকুরের লাইগেশন করানো হয়েছে তারমধ্যে ১০টি ছিল আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসের। শিবু দাস জানিয়েছেন, “আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপিকা সুদেষ্ণা কোলের প্রভূত সাহায্য পেয়েছি আমরা। উনি ক্যাম্পাসের ১০টি কুকুর এনেছিলেন ক্যাম্পে। করেছেন আর্থিক সাহায্যও। ওই এলাকায় লাইগেশন ক্যাম্পের জন্য একটি স্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডঃ পম্পা রায়।”
দ্বিতীয় দফায় ক্যাম্প হয়েছিল এপ্রিল মাসের শেষে মেদিনীপুর শহরের পাল বাড়ি এলাকায়। পালবাড়ির বাসিন্দা নীলকমল সিনহা একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সেখানে একে একে ৪২টি কুকুরের লাইগেশন করা হয়। দুই শহরেই লাইগেশন করেছেন ভেটিনারি সার্জেন বা পশু শল্য চিকিৎসক রাকেশ মন্ডল। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা রাকেশ বাবু রায়গঞ্জ সরকারি পশু চিকিৎসালয়ের চিকিৎসক। গত ২ বছর ধরে সংগঠনের উদ্যোগে পথ কুকুরের লাইগেশন করে চলেছেন তিনি। শিবু রানা বলেছেন, মিডনাপুর এন্ড খড়গপুর স্ট্রিট আ্যনিমেল লাভার্স গ্রুপের সদস্যদের উদ্যোগে এই নিয়ে দ্বিতীয় বছর ক্যাম্প হল। গত বছর মাত্র ২৯টি কুকুরের লাইগেশন করাতে পেরেছিলাম এবার আরও ৩৪টি বেশি করানো সম্ভব হল। পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্ৰহ করতে পারলে হয়ত আরও কিছুটা বেশি করা যেত। আমরা চেষ্টা করছি সামনের বছর দুই শহর মিলিয়ে অন্ততঃ ১০০টি কুকুরের লাইগেশন করাতে।’
জানা গেছে, লাইগেশনের জন্য মা-কুকুর নির্বাচন ও সেগুলিকে ক্যাম্প অবধি নিয়ে আসা, লাইজেশনের পর সেগুলিকে সুস্থ স্বাভাবিক করে আবার নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিয়ে আসা এই বিশাল পরিশ্রম এবং সময় সাপেক্ষ কাজটিতে অংশ নিয়েছিলেন মিডনাপুর এন্ড খড়গপুর স্ট্রিট আ্যনিমেল লাভার্স গ্রুপের শুভম দাস,রিমা কর্মকার, ভাস্বতী ভট্টাচার্য্য, কৌশানি রায় দাস, অগ্নিপ্রভ সেন,সমীর দত্ত, প্রিয়া, প্রিয়াঙ্কা, নীলাদ্রি দাস, শিল্পা ঘোষ, আনন্দ শংকর মন্ডল, দেবরাজ চক্রবর্তী, সুরজিৎ চৌধুরী, সুরজিৎ দাস, সঞ্জয় মন্ডল, বাবিন মল্লিক প্রমুখরা। সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে পুলিশ আধিকারিক সব্যসাচী মুখার্জী, ডঃ অপূর্ব চক্রবর্তী, সুমন সমাদ্দার মহাশয়কে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পর্যায়ে জাতীয় কিংবা রাজ্য সড়কের দুর্ঘটনা প্রবন স্থান, মানুষের সঙ্গে কুকুরের সংঘাত রয়েছে সেই জায়গা গুলি বেছে নেওয়া হয়েছে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। ধিরে ধিরে অন্য এলাকা গুলিতেও কাজ করা হবে।