নিজস্ব সংবাদদাতা: বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দিক পরিবর্তন করলেও উত্তাল হবে দিঘার সমুদ্র এমন প্রচার ছিলই। তারই সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনটাও প্রচার হয় দিঘাতে নাকি ২৫ ফুট উঁচু ঢেউ উঠছে। ঘূর্ণঝড় সিত্রাং না হলেও সূর্যের পড়ন্ত আলোয় দিঘার জলোচ্ছাস দেখার আনন্দ উপভোগ করা যাবে এমন ভাবনা নিয়েই কালী পূজার ছুটির অবকাশ কাটাতে একটি চারচাকা গাড়ি নিয়ে ৪ জন গিয়েছিলেন। কিন্তু বাড়ি ফেরা হলনা ৩ জনের। দিঘা থেকে ফেরার পথে নিজেদের বাড়ি থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার আগেই এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ৩ যুবকের। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও এক যুবক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত ও আহতরা প্রত্যেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি থানা এলাকার বাসিন্দা। মৃত ৩ জন হলেন রাণীবসান এলাকার বাসিন্দা গৌতম দাস(২৪) ও সৌরেন প্রধান(৩৪) এবং মুকুন্দপুরের কাঞ্চন সাউ(৪০)। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন রঞ্জন দেবনাথ নামে আরও এক যুবক। তিনি কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ১১৬ বি জাতীয় সড়কে রামনগর থানার সাপুয়ার কাছে। দুরন্ত গতিতে থাকা ওই সুইফট ডিজার গাড়িটি কোনও কারনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা একটি
গাছে ধাক্কা দিয়ে নয়ানজুলিতে উল্টে যায়। একাধিক বার পাক খেয়ে জল ভর্তি নয়ান জুলিতে ঢুকে পড়ে।
রামনগর থানার ওসি সৌরভ চিন্না বলেন, ‘গাড়িটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল। তার জেরেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক উদ্ধারকার্য শুরু করেন
স্থানীয় বাসিন্দারাই। তাঁদেরই এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ” কালীপূজার বাজার বলে সাপুয়া বাজার এলাকায় ভিড় জমজমাট থাকলেও ঘটনাটি ঘটেছে একটু দূরে ফাঁকা জায়গায়। আমি সেই সময় সাইকেল চালিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। সেই সময় প্রায় ঝড়ের গতিতে আমার গা ঘেঁষে চলে যায় ওই গাড়িটা। আমার তখুনি মনে হচ্ছিল কোনও অঘটন না ঘটে যায়। মুহুর্তের মধ্যেই একটা প্রকান্ড শব্দ হল। মুখ তুলে দেখি গাছে ধাক্কা মেরে সাদা রঙের গাড়িটা নাচতে নাচতে যেন গড়িয়ে যাচ্ছে নয়ানজুলির দিকে। গাড়ির হেডলাইটের আলো দুটোর রশ্মি সার্কাস পার্টির সার্চ লাইটের মত দুবার আকাশে তাক করে নিচে নেমে গেল। বুঝলাম পাক খাচ্ছে গাড়িটা।”
ঘটনাটি দেখতে পেয়েই ছুটে আসেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরই প্রথমে পুলিশে খবর দিয়ে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। ধরাধরি করে গাড়িটিকে তুলে আনার পর দেখা যায় গাড়ির ডানদিকের অংশ গুঁড়িয়ে তোবড়ে গিয়েছে। দরজা ভেঙে চারজনকে বের করে পুলিশের উদ্যোগে চারজনকেই কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছুক্ষনের মধ্যেই তিনজনের মৃত্যু হয়। গাড়ির চালক ও সঙ্গীরা মদ্যপানের জন্য বেপরোয়া গাড়ি ছোটাচ্ছিল কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মৃতদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই চিত্রটা পরিষ্কার হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আপাতত: বজেয়াপ্ত করা হয়েছে গাড়িটি। অস্বাভাবিক খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।