নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বাড়ির মেয়ে ও বাচ্চাদের ফটোশ্যুটিংয়ের আবদার মেটাতে গিয়ে সাপের কামড়ে মৃত্যু হল এক সর্পবন্ধুর। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানা এলাকার তালদা অঞ্চলের সোলেমানপুর গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ওই সর্পবন্ধুর নাম নিতাই প্রধান। ৫৫ বছর বয়সী নিতাই প্রধানের বাড়িও ওই সোলেমানপুর গ্রামে।
স্থানীয় সূত্র মারফৎ জানা গেছে মঙ্গলবার রাতে এক প্রতিবেশীর একটি অর্ধ নির্মিত বাড়ির মেঝের গর্তে ঢুকে পড়েছিল প্রমান সাইজের গোখুরো। বাড়ির লোকেরা খবর পাঠায় নিতাই প্রধানকে। খবর পেয়ে নিতাই প্রধান ঘটনাস্থলে যান। এরপর সাপটির ল্যাজ ধরে টেনে বের করে নিজের আয়ত্তে আনেন। কেউ কেউ সাপ উদ্ধারের ঘটনাটি মোবাইলে ভিডিও বন্দি করছিলেন। বাড়ির মহিলা ও বাচ্চাদের আবদারে তিনি সাপটিকে নিজের গলাতেও জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু খেয়াল করেননি যে সাপটি ওই অবস্থায় তাঁর হাতে ছোবল মেরেছে।
সাপ ধরা থেকে সাপটিকে ওই করসৎ পর্বটি ঘন্টা খানেক ধরেই চলছিল। এরপর সাপটি জঙ্গলে ছাড়তে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার সময় তাঁর খেয়াল হয় হাত থেকে রক্ত পড়ছে। টর্চ মারতেই দেখা যায় সাপের দাঁতের ক্ষত রয়েছে তাঁর হাতে। বিপদ বুঝতে পেরেই নিতাই প্রধান ও সাপটিকে নিয়েই প্রতিবেশীরা রওনা হন পাশের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। ডাক্তাররা সাথে সাথেই চিকিৎসা শুরু করেন। স্যালাইন ও এভিএস দেওয়া হয় কিন্তু বাঁচানো যায়নি তাঁকে। চিকিৎসকদের মতে সাপে কামড়ানোর অন্ততঃ চার ঘণ্টা পরে চিকিৎসা শুরু করা হয় ফলে কাজ করেনি আ্যন্টিভেরাম।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আশেপাশের ১০/১২টি গ্রামের ভরসা ছিলেন নিতাই প্রধান। দিন কিংবা রাত, খবর পেলেই দৌড়ে যেতেন গৃহস্থের ডাকে। ঘরে কিংবা ঘর সংলগ্ন কোনও জায়গায় সাপ দেখা গেলে ডাক পড়ত তাঁর। একটা গামছা সম্বল করেই ছুটে যেতেন সাপ ধরতে। সাপ ধরার পর তাকে নিরাপদে ছেড়ে দিয়ে আসতেন লোকালয়ের বাইরে, জঙ্গল এলাকায়। কিন্তু বিপদটা ঘটে গেল গত মঙ্গলবার রাতে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন এমন একজন নির্ভীক মানুষকে হারিয়ে তাঁরা যথেষ্ট বিপদে পড়ে গেলেন। এরপর এলাকায় সাপের উপদ্রব হলে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ রইলনা। সর্পবিদদের বক্তব্য বিষাক্ত সাপের সাথে খেলা দেখানোর কোন রকমের ঝুঁকিই নেওয়া উচিৎ নয়।