Saturday, July 27, 2024

Debra Hoax: ডেবরায় যক্ষ গুজব! পথে নামলেন রাধামোহনপুর বিজ্ঞান চক্রের কর্মীরা

- Advertisement -spot_imgspot_img

নিজস্ব সংবাদদাতা: অসাবধানতায় পুকুরে ডুবে মারা গেছেন একাধিক ব্যক্তি। প্রতিকার হিসাবে ‘যক্ষ’র খোঁজে পুকুরের জলটাই ছেঁচে ফেলে দেওয়া হল! নিদান, তান্ত্রিকের! তান্ত্রিকের খরচ মেটাতে পুকুরের মাছ বিক্রি করে দেওয়া হল। এই প্রচন্ড গরম আর তীব্র দাবদহে পুকুর পাড়ে বসবাসকারী মানুষজনের প্রাণ ওষ্ঠাগত। জল গেল, মাছ গেল কিন্তু যক্ষের খোঁজ মিললনা। বুজরুকির ফাঁদে পা দিয়ে বর্তমানে দুর্দশার শেষ নেই। এলাকার মানুষের মধ্যে বুজরুকির এই প্রভাব কাটিয়ে ওঠাতে শেষ অবধি পথে নামলেন বিজ্ঞান আন্দোলনের কর্মীরা। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত ডেবরা থানার রাধামোহনপুর দক্ষিণ মৌজা এলাকার।

আরো খবর আপডেট মোবাইলে পেতে ক্লিক করুন এখানে

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে এই দক্ষিণ মৌজার একটি পুকুরে এক ব্যক্তি জলে ডুবে মারা যান। তারও কিছুদিন ওই পুকুরের জলে ডুবে মৃত্যু হয় একটি শিশুর। সেই ঘটনার কয়েক মাস আগে মৃত্যু হয়েছিল আরও একটি শিশুর। স্থানীয়দের একটি অংশের মতে শিশুদের মৃত্যু হয়েছিল অসতর্কতার জন্য। বয়স্ক ব্যক্তি সম্ভবতঃ নেশা করে পুকুরের পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় ভারসাম্য হারিয়ে পুকুরে পড়ে গেছিলেন। কয়েক মাসের ব্যবধানে এই পর পর দুর্ঘটনাগুলিকে যক্ষ নামক অপদেবতার নামে চাপিয়ে দিয়ে শুরু হয় রাত জেগে তান্ত্রিক উপাচার। তান্ত্রিকের খরচ মেটাতে পুকুরের মাছ বিক্রির টাকার পাশাপাশি চাঁদাও তোলাও হয়, অনেকে বাধ্য হন ক্ষমতা না থাকা স্বত্ত্বেও টাকা দিতে। খবর পাওয়া যায় এই তান্ত্রিক উপাচারকে ঘিরে বিশ্বাসী বনাম অবিশ্বাসীদের মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতিও তৈরি হয় যা পুলিশের হস্তক্ষেপে বড়সড় ঘটনার আকার নিতে পারেনি।

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের রাধামোহনপুর বিজ্ঞান চক্রের উদ্যোক্তা শিক্ষক গৌতম চক্রবর্তী জানান, ” এই সমস্ত ঘটনাকে কেন্দ্র এলাকার পরিবেশটাই বদলে যাচ্ছিল। আমাদের সন্দেহ হচ্ছিল ক্রমশঃ এই বুজরুকি জনজীবনের স্বাভাবিক স্থিরতাকে নষ্ট করছে। এই কুসংস্কার ছড়াতে থাকলে কোনও দিন কোনও মানুষকেই হয়ত যক্ষ বলে চিহ্নিত করে দেওয়া হবে ডাইনি খোঁজার নামে যেমনটা চলে। কারও জীবন সংশয় হতে পারে।” বিজ্ঞান চক্রের আশঙ্কা একটি তথাকথিত অপদেবতা খোঁজার নামে যেমন ভাবে একটি পুকুরের জল তুলে ফেলা হল সেই প্রবণতা কাজ করলে তো অন্য কোনও পুকুরে কেউ পড়ে মারা গেলে লোকে পুকুর ছেঁচে ফেলবে অন্ধ বিশ্বাসে। তাছাড়া ধরুন, কেউ পুকুর বোঝাতে চায় বা অন্য কোনও স্বার্থের জন্য পুকুরের জল তুলে ফেলতে এই যক্ষের অজুহাতকে ব্যবহার করল। এমনিতেই ডেবরা এলাকা জলস্তর নেমে যাওয়ার নিরীখে রেড-জোনে রয়েছে। যে কারনে মানুষকে সচেতন করতে আমরা একটি সচেতনতা মূলক শিবির অনুষ্ঠিত করি।

রবিবার বিকালে রাধামোহনপুর দক্ষিণ বাজার দুর্গা মণ্ডপ সংলগ্ন এলাকায় রাধামোহনপুর বিজ্ঞান চক্রের পরিচালনায় একটি যুক্তিবাদী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান চক্রের স্থানীয় সদস্যদের পাশাপাশি বিজ্ঞান আন্দোলনের কর্মী শ্রী নকুল চন্দ্র ঘাঁটির উপস্থাপনায় ওই প্রদর্শনী পরিবেশিত হয়। ঘণ্টা দেড়েকের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত মানুষজনকে প্রদর্শনীর মধ্যে সরাসরি অংশগ্রহণ করানোর মাধ্যমে ওই তথাকথিত যক্ষপর্বের স্বরুপ উন্মোচন করা হয় বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে। এই উদ্যোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর যথেষ্ট সদর্থক প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি করেছেন উদ্যোক্তারা।

- Advertisement -
Latest news
Related news