শশাঙ্ক প্রধান : চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারনা করার অভিযোগে এক তৃনমূল নেতাকে ঘন্টার পর ঘন্টা গাছে বেঁধে রেখছে জনতা। জনতার দাবি সমস্ত টাকা মেটানোর পরই মুক্তি দেওয়া হবে ওই নেতাকে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানা এলাকার সত্যপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। গত প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে স্থানীয় একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পেছনের একটি কদম গাছে বাঁধা রয়েছেন ওই নেতা। যদিও এখনও অবধি তাঁকে মারধর করা হয়নি বলেই খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে বালিচক এলাকার বাসিন্দা ওই তৃনমূল নেতার নাম দিলীপ পাত্র। এক সময় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আই এনটিটিইউসির ডেবরা ব্লক সভাপতি ছিলেন।
ডেবরা থানার সত্যপুর এলাকার বাসিন্দা কানাইলাল মুর্মু জানিয়েছেন, ওই দিলীপ পাত্র আমার ভাগ্নে খড়গপুর লোকাল থানার রাজপুরা গ্রামের অরুন হাঁসদা র কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিল রেলে চাকরি করে দেওয়ার নাম করে। সেই সময় দিলীপ বলেছিল ১ মাসের মধ্যে টাকা দিতে পারলে চাকরি তবেই চাকরি হবে। উপায়ন্তর না দেখে অরুনের বাবা এক বিঘা জমি বিক্রি করে ওই টাকা দিলীপের হাতে তুলে দিয়েছিল। এরপর দিলীপ অরুনকে নিয়ে চাকরিতে জয়েন করানোর জন্য কলকাতায় নিয়ে যায়। একমাস অরুনের টাকাতেই কলকাতায় থাকে, খাওয়া দাওয়া করে কিন্তু চাকরি হায়নি। খবর পাওয়ার পর আমি বিষয়টি ডেবরা থানার পুলিশ আধিকারিককে জানাই। আধিকারিক দিলীপকে ডেকে টাকা ফেরত দিতে বলেছিলেন কিন্তু দিলীপ টাকা দেয়নি।
কানাইলাল মুর্মু জানান, দিলীপের খোঁজে যখন আমি বালিচ্ক এলাকায় তার দলীয় কার্যালয়ে যেতাম তখনই ওখানকার মানুষ আমাকে জানায় যে ওই তৃনমূল নেতা এলাকার মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছেন কিন্তু কারুরই কোনও কাজ হয়নি। দিলীপ আমাকে বলে সে চেকে আমাদের ২৫ হাজার টাকা করে ফেরত দেবে। একটা চেকও সে আমাদের দেয় কিন্তু সেই চেক বাউন্স করে। দেখা যায় ওনার অ্যাকাউন্টে মাত্র ৬০০ টাকা পড়ে রয়েছে। এরপর আমি বিষয়টি আমাদের সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহালের নেতাদের জানাই। মহালের মুলুক খোঁজ নিতে শুরু করলে ওই নেতা পালাতে থাকেন। আজ শনিবার শ্যামচক এলাকায় একটি জায়গায় ওই নেতা রয়েছেন এমন খবর পাওয়ার পরই আমরা ওনাকে ধরে এনেছি। আমরা হয় ওনার কাছে টাকা চাই অথবা ওনার হয়ে গ্যারেন্টার চাই নতুবা ওনাকে ছাড়া হবেনা।
ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহালের ডেবরা মুলুকের প্রধান গোপাল মুর্মু জানিয়েছেন, গরীব সহজ সরল আদিবাসী মানুষদের এই ভাবে দিনের পর দিন ঠকিয়ে চলেছেন ওই নেতা। আমরা খবর পেয়েছি আরও একাধিক যুবককে প্রতারিত করা হয়েছে। চাকরি পাওয়ার জন্য সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে। ডেবরা এলাকা জুড়ে এই ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। শুধু টাকা নিয়ে প্রতারনা নয় বহু মানুষের পাট্টা জমি, বর্গা জমিও দখল হয়েছে। আমরা সাবধান করে দিচ্ছি হয় টাকা, জমি নিজে নিজে ফেরত দিয়ে দাও না হলে দিলীপ পাত্রের মত গাছে বাঁধা হওয়ার জন্য তৈরি হও।
অভিযুক্ত দিলীপ পাত্র বলেছেন, ” আমি নিজে টাকা নিয়েছিলাম কারন কলকাতার এক নেতা আমাকে বলেছিলেন, তাঁর সাথে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ আছে। তাঁরই কথা মত ওই টাকা নিয়ে ওকে দিয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারিনি যে ওই নেতা একজন প্রতারক।” সত্যপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি চন্দন বেরা বলেন, আমি জানিনা এরকম ঘটনার কথা। আমাদের দল চাকরির নাম করে টাকা আদায়ের বিরোধী। যদি এরকম কেউ করে তার কঠিন শাস্তি হওয়া উচিৎ।