নিজস্ব সংবাদদাতা: দক্ষিণপূর্ব রেলের খড়গপুর ডিভিশনের রেলকর্মী যুবক পয়েন্টস ম্যান সতীশ কুমারকে সম্বর্ধনা দিলেন বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির সদস্যরা। জানালেন, যাঁদের জন্য এখনও মানুষ বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের নিরাপদ ভাবেন তাঁদেরই একজন সতীশ কুমার। গত ২৩ জুন, সকাল সাড়ে ৫টা। বালিচকে রেলস্টেশনের ২নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে লাইনের ওপর পড়ে গেছিলেন এক ভিক্ষাজীবী।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/06/IMG-20220623-WA0006.jpg)
মাত্র ৩০সেকেন্ডের ব্যবধানে ওই লাইনেই ছুটে আসছিল মালগাড়ি। সেই গাড়িটিকেই সবুজ সংকেত দেওয়ার জন্য পতাকা হাতে প্ল্যাটফর্মের ওপর ছিলেন ৩২ বছরের সতীশ কুমার। আর তখুনি তাঁর নজরে পড়ে ঘটনাটি। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়নি সতীশের, লাইনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কোলে করে সরিয়ে নেন সেই ভিক্ষাজীবীকে। তার মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে লাইনের ওপর দিয়ে চলে গেছিল মালগাড়িটি।
রেলের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, “এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে একটা দ্বিধাগ্রস্ততা কাজ করে যা হল চাকরি বনাম মানবতা। ট্রেনটিকে সবুজ পতাকা দেখানোই ছিল সতীশের চাকরি। কিন্তু পতাকা ফেলে সতীশ রেললাইনে ঝাঁপায় একটি মানুষকে বাঁচানোর জন্য। পরে বিপরীত দিক থেকে অন্য একজন পতাকাটা তাঁর দিকে ছুঁড়ে দেন কিন্তু সেই পতাকা চালক দেখতে পেয়েছিলেন কিনা জানা নেই। যদি চালক সঠিক পতাকা না দেখে থাকেন তবে সতীশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে চাকরির শর্ত অনুযায়ী গুরুতর শাস্তির মুখে পড়তে পারেন সতীশ। দ্বিতীয় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা’হল, তাড়াহুড়ো করে লাইনে লাফিয়ে পড়ে আর্ত মানুষটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে যদি সতীশ নিজেই আহত হয়ে লাইনের ওপর পড়ে যেতেন? এই সব দ্বিধাগ্রস্ততা কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সতীশকে এবং শেষ অবধি সবটাই নিখুঁত ভাবেই হয়েছে। এটাও কৃতিত্ব সতীশের।”
রবিবার বালিচক রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার, আরপিএফ ওসি-র উপস্থিতিতে আজ তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সতীশ কুমারের হাতে একটি মেমেন্টো তুলে দিয়ে তাকে সম্বর্ধনা জানান বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির সহ-সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডক্টর মোহিনী মোহন মাইতি। ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান কমিটির সভাপতি সুভাষ চন্দ্র মাইতি এবং সহ-সভাপতি ভারত রঞ্জন দে।
কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারী এবং বিশ্বজিৎ ভূঁইয়া বলেন, “সতীশ কুমার যেভাবে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছেন তা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত দুর্লভ একটি ঘটনা। আমরা সবাই তার জন্য গর্বিত। আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তাঁকে সম্বর্ধনা জানানোর মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে মানুষের বিপদে মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজে এগিয়ে আসে তাকেও উৎসাহিত করতে চেয়েছি। পাশাপাশি রেল দপ্তরের কাছে আমাদের আবেদন, তাঁর এই সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য তাঁকে ‘ব্রেভারি অ্যাওয়াড়’ দেওয়া হোক এবং কর্মক্ষেত্রে তিনি যাতে তাঁর যোগ্য সম্মানে উত্তীর্ণ হতে পারেন সে ব্যাপারেও উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।” উল্লেখ্য সতীশকে ঘটনার দিন বিকেলে পুরস্কৃত করা হয়েছিল খড়গপুর রেল ডিভিশনের পক্ষ থেকে।