নিজস্ব সংবাদদাতা: ২৪ঘন্টা পেরুলোনা, প্রার্থী বদল চেয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়ে গেল খড়গপুর শহরে। দলের ঘোষিত প্রার্থীকে বদল না করলে ওয়ার্ডে কাজ তো করবেইনা প্রয়োজনে বিকল্প প্রার্থী ঘোষণা করেই লড়াই শুরু হবে বলে জানিয়ে দিল এলাকার তৃনমূল নেতৃত্ব। শুক্রবার প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই ফুঁসছিলেন খড়গপুর পৌরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃনমূল নেতা কর্মীরা। শনিবার সরাসরি রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু হয়ে গেল। দলের ঘোষিত প্রার্থীকে বদলানোর দাবিতে তালবাগিচা বাজার এলাকায় নজিরবিহীন বিক্ষোভের স্বাক্ষী রইলেন আমজনতা। ক্ষুব্ধ তৃনমূল কর্মীদের এদিন তালবাগিচা এলাকায় প্রতিবাদ মিছিলের পাশাপাশি বাজারের মোড়ে টায়ারে আগুন লাগিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়তেও দেখা গিয়েছে।
উল্লেখ্য খড়গপুর পৌরসভার ৩৫নম্বর ওয়ার্ডের জন্য রাজ্য কমিটি ঘোষণা করেছে কবিতা দেবনাথের নাম। মহিলা সংরক্ষিত এই আসনের বিদায়ী কাউন্সিলর জেলা ও শহরের পরিচিত তৃনমূল নেতৃত্ব তথা খড়গপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান জহরলাল পাল। এবার তাঁকে সরে যেতে হয়েছে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ৩৩নম্বর ওয়ার্ডেই গতবার পরাজিত হয়েছিলেন কবিতা দেবনাথ। সিপিএমের কাছে পরাজিত হন তিনি। সেই ৩৩ নম্বর ছিনিয়ে আনার দায়িত্বে এবার জহরলাল পাল। অন্যদিকে তাঁর ছেড়ে আসা জেতা আসনে প্রার্থী করা হয়েছে গতবারের পরাজিত প্রার্থীকে আর এখানেই ক্ষোভ ৩৫নম্বর ওয়ার্ডের নেতা কর্মীদের।
তাঁদের বক্তব্য, পরাজিত হওয়ার পর যে প্রার্থীর মুখই দেখেনি জনতা। সাত বছর ধরে যিনি ঘরে ঢুকে রইলেন ভোটের আগে তাঁকে কোন যুক্তিতে প্রার্থী করল দল? আর প্রার্থী করা নিয়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কোনও অলোচনা করা হলনা কেন। তাঁরা এই ওয়ার্ডে জহরলাল পালের পুত্রবধূ খড়গপুর শহর যুব তৃনমূল সভাপতি অসিত পালের(ছোটকা) স্ত্রী গোপা পালকে প্রার্থী করার দাবী জানিয়েছেন। ৩৫নম্বর তৃনমূল ওয়ার্ড সভাপতি
অরুন দাস বলেছেন, ‘ ৩৩ এবং ৩৫ মিলিয়ে একসময় ১টি ওয়ার্ড ছিল যা সিপিএমের হাত থেকে ছিনিয়ে আনেন জহরলাল পাল। পরে ২০১০ সালে ওয়ার্ড বিভাজন হয়। সেই সময় দুটি আসনই ছিনিয়ে নেয় জহরলাল পাল এবং তাঁর এক পুত্রবধূ জয়া পাল। ২০১৫ সালে ৩৩নম্বর আসনটি তফসিলী জাতির জন্য সংরক্ষিত হয়। তখন দলে কোনও তফসিলী মহিলা না মেলায় কবিতা দেবনাথকে প্রার্থী করা হয়। তিনি জিততে পারেননি। যিনি আমাদের ২০বছরের জেতা আসন জিততে পারেননি তাঁকেই আবার প্রার্থী করা কেন?”
কিন্তু দলের গাইডলাইন অনুযায়ী একই পরিবার থেকে ২জন প্রার্থী হতে পারেনা। এই কথা বলতেই ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃনমূল মহিলা সমিতির সভানেত্রী
বাসন্তী বিশ্বাস বলেন, ‘ তাকিয়ে দেখুন তো কলকাতায় এই নিয়ম পালিত হয়েছে কী না? বিধায়ক মদন মিত্রের পুত্রবধূকে পুরসভায় প্রার্থী করেনি দল? বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বাবা গোপাল দাস, তৃনমূল নেতা তারক পাল আর তার দুই ছেলে মেয়ে মিলিয়ে ৩জনই তো কাউন্সিলর। মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর ছেলে, বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার ছেলে পুরসভায় টিকিট পাননি? যত নিয়ম জহর পালের বেলায়? কেন, খড়গপুর পুরসভার ২২বছরের কাউন্সিলর বলে?’ বোঝা গেল বেশ হোমওয়ার্ক করেই রাস্তায় নেমেছেন এঁরা।
৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের যুব সভাপতি রাজীব ব্যানার্জী বলেন, ‘ করোনা অতিমারির ২বছর ৩৩ এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে লাগাতার জনতার পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করে গেছি আমরা। সেই সময় ওই কবিতা দেবনাথ বা তাঁর স্বামী পিংকা দেবনাথকে দেখা মেলেনি। নিজের ব্যবসা নিয়ে পড়েছিলেন আর এখন ভোটপাখী উড়ে এসেছে ভোটে লড়তে?” বিক্ষোভ রত কর্মীরা পরিস্কার বলে দিয়েছেন হয় প্রার্থী বদলাও নচেৎ পরাজয়ের জন্য তৈরি থাকুক দল। দলের একটিও কর্মী রাস্তায় নামবেনা। প্রয়োজনে নির্দল হয়ে লড়াই করা হবে। বিষয়টি নিয়ে গোপা পালের স্ত্রী অসিত পালকে প্রশ্ন করা হলে খড়গপুর শহর যুব সভাপতি জানান, ‘আমি জানিনা কে কোথায় কী করছে। বাবাকে ৩৫নম্বরে লড়াই করতে বলা হয়েছে দলের পক্ষে। ওটা আমাদের হারা ওয়ার্ড, জেতানোই চ্যালেঞ্জ। আমি ৩৩নম্বর নিয়েই পড়ে আছি।’ অন্যদিকে জহরলাল পালের বক্তব্য, ‘কিছু পাগল আছে যারা আমাকে প্রচুর ভালোবাসে। শকটা সামলাতে পারেনি হয়ত। তাই এসব করছে। আমার কাছেও এসেছিল। আমি বলে দিয়েছি ওসব না করার জন্য।’