নিজস্ব সংবাদদাতাঃ খোঁজ মিলছেনা সরকারের। না রাজ্য, না কেন্দ্র। সরকার যেন ঘোমটা টেনে রান্না ঘরেমুখ লুকিয়ে আছে। ৩০ ঘন্টা অতিক্রান্ত। নিজেদের জাতিসত্ত্বার অধিকার চেয়ে আন্দোলনে অনড় কুড়মি সমাজ। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডে চলছে আন্দোলন। কুড়মি-মাহাতোদের এস.টি তালিকাভুক্ত করা, কুড়মালি ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তপশিলে অন্তর্ভুক্ত করা ও সারনা ধর্মের সরকারি কোড চালু করা মূলত এই তিন দাবিতে ছোটনাগপুর কুড়মি মাহাত সমাজের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালীন এই অবরোধ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া খড়গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে চলছে রেল অবরোধ বা ‘রেল টেকা’ এবং হাওড়া মুম্বাই জাতীয় সড়ক অবরোধ বা ‘ডহর ছেঁকা’। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩২ টি ট্রেন ইতিমধ্যে বাতিল করেছে দক্ষিণপূর্ব রেল।
বহু ট্রেনের যাত্রাপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। সড়কপথেও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। কলকাতা থেকে রাঁচি যাওয়ার পথে প্রায় ১২-১৩ টি দূরপাল্লার বাস রাত থেকেই অবরোধে জেরে আটকে রয়েছে। সমস্যায় পড়েছে বাস যাত্রীরা। অনেকের কাছেই টাকা না থাকায় সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। খাবার কীভাবে কিনবেন ভেবে পাচ্ছেননা তাঁরা। খবর পেয়ে রেশমি কোম্পানির তরফে কিছু খাবার পরিবেশন করা হয় বুধবার সকালে।
কিন্তু সরকারের দেখা পাওয়া যাচ্ছেনা। কুড়মি সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি রাজেশ মাহাত ক্ষোভের সংগে জানিয়েছেন, ” আমরা আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি যে না রাজ্য না কেন্দ্র সরকার কোনোও তরফ থেকেই কেউই আসেননি আলোচনা করতে বা আমাদের দাবি শুনতে। কিন্তু তাতে আমাদের মনোবল ভাঙার পরিবর্তে আরো বাড়ছে কারন নতুন নতুন করে আরও মানুষ আসছেন আমাদের পাশে।”
মঙ্গলবার অবশ্য শুরুতে খড়্গপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (SDPO) আন্দোলনকারী নেতৃত্বদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন আলাদা করে কিন্তু নেতৃত্ব কোনও রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসতে চাননি! তাঁদের দাবি, আলোচনা হবে প্রকাশ্য, যা ঘোষনা করার করতে হবে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেই। ফলে সেই যে ফিরে গেছেন তিনি আর কেউ আসেননি। বের হয়নি কোনোও সমাধান সূত্র। রাজ্য সরকারের তরফে আন্দোলনকারীদের বার্তা পাঠানো হয় এই দাবি সমর্থন করে রাজ্য, আপাতত ‘অবরোধ-আন্দোলন’ তুলে নেওয়ার হোক। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও অবধি কোনো বার্তা আসেনি বলেই সূত্রের খবর। এদিকে ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড় ইত্যাদি রাজ্য থেকে আসা পন্যবাহী লরি জামসেদপুর থেকেই মুখ ফেরাচ্ছে বলে জানা গেছে। পেঁয়াজ, ডিম, বিলাসপুরের মাছ আসছেনা। বন্ধ হতে চলেছে ফলের জোগানও। আন্দোলন আরও গড়ালে পুজোর আগেই সংকটে পড়তে পারে বাংলা।
দক্ষিনপূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, হাওড়া বা সাঁতরাগাছি থেকে ভায়া খড়্গপুর-ঝাড়গ্রাম-টাটানগর বা হাওড়া-পুরুলিয়া বা পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম লাইনে চলা আপ ও ডাউনের প্রায় সমস্ত ট্রেন হয় বাতিল করা হয়েছে কিংবা যাত্রাপথের পরিবর্তন করা হয়েছে। জানা গেছে বাতিল হওয়া ট্রেনের তালিকায় রয়েছে বোকারো স্টিল সিটি – আসানসোল মেমু প্যাসেঞ্জার স্পেশাল, চক্রধরপুর – গোমো মেমু এক্সপ্রেস, টাটানগর – দানাপুর এক্সপ্রেস, টাটানগর – আসানসোল মেমু প্যাসেঞ্জার, ধানবাদ – টাটানগর এক্সপ্রেস, ঝাড়গ্রাম – পুরুলিয়া মেমু স্পেশাল, ঝাড়গ্রাম – ধানবাদ মেমু এক্সপ্রেস, হাওড়া – বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস, হাওড়া – টিটলাগড় এক্সপ্রেস চক্রধরপুর – টাটানগর – খড়গপুর প্যাসেঞ্জার স্পেশাল, চক্রধরপুর গোমো এক্সপ্রেস, টাটানগর – প্যাসেঞ্জার স্পেশাল, খড়গপুর – ঝাড়গ্রাম মেমু স্পেশাল। খড়গপুর – টাটানগর মেমু স্পেশাল, ঝাড়গ্রাম – ধানবাদ এক্সপ্রেস, আদ্রা – বারকানা – আদ্রা মেমু প্যাসেঞ্জার, আসানসোল – রাঁচি মেমু প্যাসেঞ্জার স্পেশাল ইত্যাদি। অবরোধের ফলে মানুষজনের অসুবিধা হচ্ছে স্বীকার করে নিয়েছেন রাজেশ মাহাত। বলেছেন, “আমরা ক্ষমা চাইছি মানুষের দুর্ভোগের জন্য কিন্তু আশা করছি তাঁরা আমাদের পরিস্থিতি উপলব্ধি করবেন। যুগের পর যুগ ধরে কুড়মি সমাজের প্রতি যে অন্যায়, যে অবিচার হয়েছে তার বিরুদ্ধে আজ রাস্তায় নামতে হয়েছে কুড়মিদের। অসুবিধা আমাদেরও হচ্ছে। কিন্তু আমরাও জীবন মরণ সমস্যার মধ্যে। আমরা সবাইকে একটু মানিয়ে নিতে বলব আমাদের পাশে থাকতে বলব।”