নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর সভার চেয়ারম্যানকে সরানোর লড়াই এবার ভিন্ন মাত্রা গ্রহণ করল। বুধবার তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন দলেরই ১৭ জন কাউন্সিলর। বিদ্রোহী ওই ১৭ জন কাউন্সিলর তাঁদের অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন, পুরপ্রধান এবং তাঁর কয়েকজন অনুগামীর রীতিমত জমায়েত করছেন বিদ্রোহী কাউন্সিলরদের আর তার ফলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তাঁরা। গত কয়েকদিন ধরেই প্রদীপ সরকারকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করার উদ্যোগে সামিল হয়েছেন তৃনমূলের কাউন্সিলরদের একটি অংশ এবং তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ট বলেই মনে করা হচ্ছে। বুধবার সেই প্রক্রিয়ারই নবতম সংযোজন হল প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে খড়গপু্র টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের।
প্রদীপ সরকার বিরোধী ওই গোষ্ঠীর কাউন্সিলরদের অভিযোগ করেছেন যে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত তিনজন কাউন্সিলরের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বি প্রভাবতীর বাড়িতে কয়েকজন গিয়েছিলেন। এই ব্যাপারে বি প্রভাবতী জানিয়েছেন যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই দলের কর্মী। তাঁকে বলা হয়েছে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে না যাওয়ার জন্য। পাশাপাশি ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়ন্তী সিংয়ের বাড়ির সামনে বহু লোক জড়ো হয়েছিল বলে অভিযোগ। যদিও কোথাও কোনও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়নি। কিন্তু অভিযোগকারী কাউন্সিলরদের দাবি তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার অবশ্য বলেছেন ” আমি এমন কোনও অভিযোগের কথা জানিনা। যদি করা হয়ে থাকে তাহলে সেটি একেবারে ভিত্তিহীন। আর অভিযোগ করলেই তো হবে না। প্রমাণ দিতে হবে।”
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য বুধবার দিনভর প্রদীপ সরকারকে সরানো নিয়ে বিদ্রোহী কাউন্সিলদের পরিকল্পনা কিছুটা ধাক্কা খায় জেলার তৃনমূল সভাপতি সুজয় হাজরার হস্তক্ষেপে আর তারপরই এই নয়া কৌশল অবলম্বন করেছেন। উল্লেখ্য এই মুহূর্তে জানা যাচ্ছে খড়গপু্র পুরসভার ২৫ জন কাউন্সিলের মধ্যে ২০ থেকে ২১জন প্রদীপ বিরোধী অবস্থানে রয়েছেন। এঁরা যে কোনও মূল্যে প্রদীপকে হঠাতে মরীয়া। বুধবার দুপুরে এঁদের মধ্যে ১৭ জন এদিন খড়গপুর শহরের ঝাপেটাপুর এলাকায় একটি দলীয় কার্যালয়ে রূদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন।
সেই বৈঠকে বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলররা ছাড়াও উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে কয়েকজন প্রাক্তন কাউন্সিলর ও তৃনমূলের হোমড়া চোমড়া নেতা ছাড়াও খড়গপুর শহর সভাপতি সূর্যপ্রকাশ রাওকে। উপস্থিত ছিলেন খড়গপুরের উপপুরপ্রধান তৈমুর আলি খান সহ অধিকাংশ চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল সদস্য। ঠিক ছিল এখান থেকেই তাঁরা সরাসরি খড়গপুর মহকুমা শাসক বা এসডিওর কাছে প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেবেন। কিন্তু সেই কর্মসূচি বাতিল করে তাঁরা বৈঠক শেষে চারটি গাড়িতে চেপে সকলে পৌঁছে যান মেদিনীপুর শহরে জেলা সভাপতির কার্যালয়ে।
সেখানে জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার সাথে প্রদীপ বিরোধী কাউন্সিলররা সহ নেতারা আলোচনা করেন। জানা গিয়েছে প্রত্যেকেই বর্তমান পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন আর কোনোভাবেই পুরপ্রধান হিসাবে প্রদীপ সরকারকে মানতে রাজি নন। জানা গেছে জেলা সভাপতি প্রদীপ বিরোধী কাউন্সিলর ও নেতাদের কাছ থেকে একদিন সময় চেয়ে নেন। অনুরোধ করেন দলের সম্মানের কথা মাথায় রেখে এদিন অনাস্থা প্রস্তাব জমা না দিতে। সেখান থেকে ফিরে আসার পরই থানায় এই অভিযোগ দায়ের করার ঘটনাটি ঘটে।
একদা প্রদীপ ঘনিষ্ঠ ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোহন দাস বলেন ” প্রদীপ সরকারের সঙ্গে কাজ করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমাদের মত নতুন কাউন্সিলরদের কোনও গুরুত্ব না দিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।” এই কাউন্সিলরদের দাবি শুধু জেলাস্তরেই খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও তাঁরা এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন যে প্রদীপ সরকারকে আর তাঁরা মানতে পারছেন না। ২১ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।