নিজস্ব সংবাদদাতা: এক আধজন নয় ৭জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, উদ্ধার হয়েছে ১টা বাইকও। বাইক লুটের গ্যাং টাকে ধরতে পেরে নারায়নগড় থানার পুলিশ যখন একটু শান্তির অবকাশ পেয়েছে তারমধ্যেই নতুন খবর এল, আবারও একটা বাইক ছিনতাই করার চেষ্টা হয়েছে আর এটাও একেবারে লোকালয়ের প্রায় মধ্যেই। ফলে ঘুম উড়ে গেছে পুলিশের।
শেষতম ঘটনাটি ঘটেছে মকরামপুর থেকে মাত্র ৩০০ মিটারের মধ্যে, তেমাথানি যাওয়ার রাস্তায় কিষাণ মান্ডি বা কৃষক বাজারের কাছে। দুষ্কৃতিরা চোখে লঙ্কার গুঁড়ো দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু খুব কাছাকাছি লোকালয় থাকায় জ্বালা করা চোখ নিয়েই কোনোমতে লোকালয়ে ঢুকে রক্ষা পেয়ে গেছেন স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত দোলাই।
সুব্রত দোলাই জানিয়েছেন, ‘ জামনায় আমার আত্মীয় বাড়ি মাংস আনার জন্য তিনি ওই রাস্তা ধরে গিয়েছিলাম । সেখান থেকে মাংস কিনে ফেরার পথে ওই কিষাণ মান্ডির কাছেই দাঁড়িয়েছিলাম প্রস্রাব করার জন্য। এরপরই বাইক চালু করে কিছুটা এগুতেই আমার বাঁ চোখ হঠাৎই ভয়ানক জ্বালা করতে থাকে, খুব হাঁচিও পাচ্ছিল। এই সময় একটি কালো বাইকে তিনজন আমার কাছাকাছি ছিল। বাঁ চোখের পাশাপাশি এবার জ্বালা শুরু ডান চোখেও। আমার বাইকের গতি কমে আসে। অন্য বাইকে থাকা তিনজনের একজন ওদের বাইক চালককে বলে, ও বাইক দাঁড় করাচ্ছে আমাদের বাইকটা স্লো কর। তখনই আমি বুঝতে পারি যে আমি ছিনতাইবাজদের কবলে পড়েছি। আমি ওই অবস্থাতেই বাইকের গতি বাড়িয়ে ফাঁকা জায়গাটা পেরিয়ে লোকালয়ে ঢুকে যাই। ওরা পেছন ঘুরে পালায়।’
সুব্রত দোলাই আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই এই এলাকায় চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে বাইক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে এবং তা প্রায় সবাই জানেন। সেই কারণেই আমার চোখ জ্বালা করে উঠতে এবং পাশে একটা বাইকে তিনজনকে দেখে আমি বুঝতে পারি যে ছিনতাইবাজদের কবলে পড়েছি। নাহলে হয়ত দাঁড়িয়েই যেতাম। যদি মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটা আর একটু বেশি হত তাহলে হয়ত বাইকটা থামাতেই হত কারন দুটো চোখ এত জ্বলছিল যে বেশিক্ষণ বাইক চালাতেই পারতামনা।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে খড়গপুর ও নারায়নগড়ের সীমান্তে মকরামপুর লাগোয়া এলাকায় একের পর এক বাইক ছিনতাই হচ্ছে। কখনও তা খড়গপুর গ্রামীন থানার অংশে কখনও আবার নারায়নগড়ের এলাকায়। বাদ যাচ্ছেনা ৬০নম্বর জাতীয় সড়কও। মকরামপুর টোলপ্লাজার কাছাকাছি অংশে ছিনতাইয়ের খবর মিলেছে। নারায়নগড় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে জগদ্ধাত্রী পূজো চলাকালীন খড়গপুর গ্রামীনের খেলাড়ের হাট থেকে বাজার করে ফিরছিলেন গোপাল দলুই। গোপাল ফিরছিলেন মকরামপুরের চিরকুনিয়ায় নিজের বাড়িতে।
রামপুরা রেলগেটের আগে একই ভাবে তাঁর চোখে লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে আটকানো হয়। মারধরও করা হয়। এরপরও গোপাল বাইক না ছাড়লে তাঁকে গুলি করে মারার হুমকি দিলে সে বাইক ছেড়ে পালায়। পুলিশ এই ঘটনারই তদন্তে নেমে ৭জনকে গ্রেপ্তার করে এবং গোপালের বাইকটি উদ্ধার করেছে।
স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে খড়গপুর গ্রামীন থানার কুঁচিয়াভুলুক, জাতীয় সড়ক সহ সংলগ্ন এলাকায় আরও কয়েকটি এই একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে আপনি যদি বাইক নিয়ে বেড়াতে ভালোবাসেন অথবা কাজের প্রয়োজনে আপনাকে বাইক নিয়ে এদিক ওদিক যেতেই হয় তবে আপনার সাবধান হওয়ার সময় এসেছে বিশেষ করে খড়গপুর নারায়নগড় সীমান্ত এলাকায়।
এখনও অবধি যা জানা গেছে এই প্রত্যেকটি ঘটনাই ঘটেছে খড়গপুর সীমান্তের নারায়নগড় থানার অন্তর্গত মকরামপুর বাজার থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে। কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে শ্যামলপুর লাগোয়া এলাকায়।ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুলিশ, আতঙ্কে স্থানীয় জনগন। দুষ্কৃতিরা বাইকের পাশাপাশি যেতে যেতে হঠাৎই আপনার চোখে লঙ্কার গুঁড়ো জাতীয় কিছু স্প্রে করছে। বাধ্য হয়ে মানুষ বাইক থামালেই মারধর করে বাইক নিয়ে পালাচ্ছে।
দিনে কিংবা রাতে অথবা সন্ধ্যা যেকোনো সময় এই দুর্ঘটনা ঘটছে। শেষ ৪টি অপারেশন হয়েছে বেনাপুর থেকে মকরামপুর রাজ্য সড়ক, তেমাথানি থেকে মকরামপুর রাজ্য সড়ক এবং খড়গপুর থেকে মকরামপুর ৬০নম্বর জাতীয় সড়কে। আর একটি ঘটনা খেলাড় থেকে শ্যামলপুরের মাঝখানে শ্যামলপুর-ভেটিয়া রাজ্য সড়কে।