নিজস্ব সংবাদদাতা : খড়গপুর শহরের দুটি এলাকায় গত কয়েকদিন ধরেই একাধিক কুকুর ও বেড়ালকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার ঘটনা ঘটছে যাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। খড়গপুর শহরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড তালবাগিচা রথতলা ও ৩১নম্বর ওয়ার্ড আরামবাটি এলাকায় কুকুর ও বেড়ালের এই নির্বিচার হত্যায় রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। যেমন রথতলা এলাকায় রাতের বেলায় একসঙ্গে ৮-১০টি কুকুর ঘুরে বেড়াতো, পুরো এলাকাটি পাহারা দিতো। শান্ত স্বভাবের কুকুরগুলোর কয়েকটিকে কে বা কারা বিষ খাইয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। এই দলের ৩টি কুকুর রাস্তার পাশে ছটফট করতে দেখেন এক পথচারী। তারপর একের পর এক হত্যা। স্থানীয় বাসিন্দারা লক্ষ্য করছেন এলাকায় ঘুরে বেড়ানো তিন চারটি কুকুর হঠাৎই বমি করছে এবং ছটপট করতে করতে মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে আরামবাটি এলাকায় এক গৃহস্থ পরিবারে গত দু’দিনে ৫টি পোষ্য বেড়ালকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে যার মধ্যে দুটি মায়ের দুধ পান করা শাবকও রয়েছে।
রথতলা এলাকার গৃহবধূ মুন বিশ্বাস বলেন, “আমাদের এই এলাকায় বেশ কয়েকটি পথ কুকুর রয়েছে। এরা যেমন পথ কুকুর তেমনই আশেপাশের সবার বাড়িতেই যায়, সব বাড়ি থেকেই কিছু না কিছু খাবার পায়। এলাকার সামনে বিরাট ফাঁকা মাঠ যেখানে রাত্রিবেলায় কুকুরগুলো থাকে এবং মাঝরাতে কোনও অপরিচিত মানুষ কিংবা মাঠে কোনও অসামাজিক কাজকর্ম হতে থাকলে ওরা চিৎকার করে আমাদের সতর্ক করে। এই কুকুরদের তিনটি কুকুরকে ১৭ তারিখ আমরা হঠাৎই লক্ষ্য করি যে তারা বমি করছে, যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাচ্ছে এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই ছটপট করতে করতে মারা গেল। ১৯ তারিখ ফের ২টি কুকুরকে একই ভাবে বিষ দেওয়া হয়। এলাকার বাসিন্দারা একজন পশু চিকিৎসককে খবর দিলে তিনি ইঞ্জেকশন ও স্যালাইন দিয়ে একটি কুকুরকে বাঁচাতে সক্ষম হলেও একটি কুকুর মারা যায়।”
স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি নিয়ে খড়গপুর লোকাল থানার দ্বারস্থ হন। থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন তাঁরা। খড়গপুর লোকাল থানার পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে একটি মৃত কুকুর সংগ্ৰহ করে তা ময়না তদন্তের জন্য মেদিনীপুর পশু চিকিৎসালয়ে পাঠিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ তাঁরা যে এলাকায় বসবাস করেন সেটি অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গা তালবাগিচা, রবীন্দ্রপল্লী ইত্যাদি এলাকায় প্রবেশ করতে হলে এই জায়গা দিয়েই প্রবেশ করতে হয়। মনে হচ্ছে দুষ্কর্মের সাথে জড়িত কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এলাকারই কোনও সাকরেদের সাহায্য নিয়ে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। সম্ভবতঃ মাংসের সাথে বিষ মিশিয়ে কুকুরদের দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই তদন্তের গতিপ্রকৃতি ঠিক করা হবে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর তথা খড়গপুর সদরের বিধায়ক হিরন চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল নেতা তথা খড়গপুর পৌরসভার প্রাক্তন পৌর প্রধান জহরলাল পাল ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ওদিকে আরামবাটি এলাকার হরিদাস সিং জানিয়েছেন, “গত ২দিনে তাঁদের পরিবারের ৫টি পোষ্য বেড়ালকে হত্যা করা হয়েছে বিষ প্রয়োগ করে। তিনি বলেন ৩টি বড় বেড়ালের মধ্যে ২টি বেড়াল বাড়িতে এসে ছটপট করতে করতে মরেছে। ১টি বেড়াল সম্ভবতঃ বাড়িতে আসার মত ক্ষমতাই পায়নি। সেটা বিষযুক্ত খাবার খেয়ে অন্য
কোথাও মারা গেছে। আমি সবচেয়ে আশ্চর্য হয়েছি দুটি দুধের শাবকের মৃত্যুতে। এই শাবকগুলি বাইরে যেতনা বা যাওয়ার সুযোগ ছিলনা। এরা বাড়ির খাবার আর মায়ের দুধ খেত। আমাদের উঠোনেই খেলে বেড়াতো। এদের কেও মারা হয়েছে। সম্ভবতঃ রাস্তা থেকে ওদের উদ্দেশ্যে খাবার ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে আমার বাড়ির উঠোনে। মানুষ কত অমানুষ হলে দুধের শিশুদেরও হত্যা করে।”