নিজস্ব সংবাদদাতা: টিউশিনি পড়ার নাম করে বন্ধুদের সঙ্গে বারে গিয়ে মদ খেয়ে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল ক্লাস নাইনের এক ছাত্রী। ভয়ে তাকে ফেলে পালালো বন্ধুরা। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ওই কিশোরীকে ভর্তি করে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। খবর খেয়েই সাথে সাথে হাসপাতালে ছুটে যায় পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। কিশোরীর বাবা, চিকিৎসক ইত্যাদির সাথে কথা বলার পরই তৎপর হয়ে ওঠে খড়গপুর পুলিশ। রাতভর তল্লাশি চালিয়ে ওই কিশোরীর ৪ নাবালক বন্ধুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর খড়গপুর শহরের অদূরে সালুয়া এলাকা থেকে এক বার কাম ধবার মালিক প্রীতম ছেত্রী ও ম্যানেজার মনোজ সানোয়ারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে খড়গপুর শহরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালবাগিচা এলাকায়। জানা গেছে বাড়ি থেকে টিউশনি যাওয়ার নাম করে বেরিয়েছিল ওই কিশোরী। রাত হয়ে যাচ্ছে দেখে কিশোরীর বাবা তাকে জানতে চায় সে কোথায় আছে? কিশোরী তখনও অবধি জানায় যে সে টিউশনিতেই আছে। তাকে আনতে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এই ফোন করার ১ঘন্টা পরেও ছাত্রীটি বাড়ি ফিরেছেনা দেখে ফের তার বাবা ফোন করে কিন্তু ছাত্রীটি আর ফোন রিসিভ করেনি। বেশ কয়েকবার ফোন রিসিভ না করায় ছাত্রীর পরিবারের লোকেরা খুঁজতে বের হয়।। এরই মধ্যে খবর পাওয়া যায় নেতাজি ব্যায়ামগারের কাছে একটি কিশোরী অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে তাঁর মুখ দিয়ে গাঁজলা উঠছে। পরিবারের লোকেরা গিয়ে দেখে এই মেয়ে তাঁদেরই পরিবারের। সাথে সাথে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে।
পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, স্থানীয় একটি স্কুলের নাইনের ছাত্রীটি তালবাগিচার মধ্যেই টিউশনি পড়তে যেত। কিন্তু ইদানিং তার স্বভাবে কিছুটা পরিবর্তন আসছিল। বেপরোয়া, উৎশৃঙ্খল হতে দেখা যাচ্ছিল তাকে। ফলে ছাত্রীটির পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার ফোন করা হত তার অবস্থান জানতে চেয়ে। সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে ছাত্রীর বাবা যখন তাকে ফোন করে তখন সে বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে সালুয়া নো-শুটিং এলাকায় একটি ধাবায় বসে বন্ধুদের সাথে বসে মদ খাচ্ছিল। বাবার ফোন পেয়েই সে বন্ধুদের সাথে বাড়ির পথে রওনা দেয়। কিন্তু মদের মাত্রা বেশি হওয়ায় সে অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়ায় তাকে নিয়ে সমস্যায় পড়ে বন্ধুরা। এরপর বাড়ি থেকে ৭৫০ মিটার মত দুরে পুরোপুরি জ্ঞান হারায় কিশোরী। ভয়ে তার সঙ্গীরা সেখানেই ফেলে পালায়।
খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে পৌঁছে যান খড়গপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (SDPO Kharagpur) দীপক সরকার, খড়গপুর গ্রামীণ থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক (OC Kharagpur Local PS) মহম্মদ সানি। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। এরপর রাতেই তল্লাশি চালিয়ে আটক করা হয় কিশোরীর সঙ্গে থাকা চার পড়ুয়াকে। এরাও তালবাগিচা, রবীন্দ্রপল্লী এলাকার বলেই জানা গেছে। তাদের কাছে সবকিছু জানার পর পুলিশ রেইড করে সালুয়া ও গোপালীর মধ্যবর্তী একটি ধাবায়। ওই ধাবাটির নাম হংকং দা ধাবা (Hongkong the Dhaba)। খড়গপুরের দায়িত্বে থাকা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (Adl. SP Kharagpur) রানা মুখার্জী জানিয়েছেন, ‘এই ঘটনায়
গ্রেফতার করা হয়েছে বারের মালিক ও ম্যানেজারকে। নাবালক-নাবালিকাদের মদ বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের।’ জানা গেছে দুজনকে আদালতে পেশ করে তাঁদের নিজস্ব হেফাজতে নিয়ে বারের লাইসেন্স, কাগজপত্র খতিয়ে দেখার পর পুলিশ বারটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আইনি প্রক্রিয়া নিতে চলেছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় নো-শ্যুটিং এলাকার হংকং বার কাম রেস্টুরেন্টের কোনও যোগাযোগ নেই বলে জানিয়ে ওই বারটির মালিক গৌতম দহল বলেছেন, আমাদের রেস্টুরেন্ট কাম বার সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ম মেনেই চলে। কেউ কেউ বিষয়টি আমাদের বারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন। এটা ঠিক নয়। আমাদের বার ও রেস্টুরেন্ট স্বাভাবিক আছে।’