শশাঙ্ক প্রধান: পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানা এলাকায় প্রায় ৪৫০ একর জায়গা জুড়ে মাছের ভেড়ি করার জন্য মরিয়া এক অংশ।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/12/IMG-20211215-WA0011.jpg)
বিরোধিতায় নেমেছে গ্রামবাসীদের একটি বড় অংশ। অভিযোগ টাকার জোর খাটিয়ে প্রশাসনের একাংশের গোপন মদতে কৃষিযোগ্য জমিকে জলায় পরিণত করার জন্য কূটকৌশল থেকে বাহুবল সবই প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রতিবাদী মানুষেরা। রাতের অন্ধকারে বোমা বন্দুক ছুঁড়ে ভয় দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
সবং পঞ্চায়েত সমিতির বুড়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রামভদ্রপুর মৌজার এই ৪৫০ একর বা ৫৫০ বিঘা জমি খুঁড়ে ঝিল বানানোর প্রচেষ্টায় রাতারাতি জেসিপি মেশিনও নামানো হয় কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে গ্রামবাসীরা সেই জেসিপি মেশিন আটকে রেখে দিয়েছেন। ফলে এলাকায় একটি চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। সেই উত্তেজনা আরও বেড়েছে জেসিপি আটকে দেওয়ার পরই রামভদ্রপুরে রাতের অন্ধকারে বোমাবাজি ও গুলি চালানোর ঘটনায়। কৃষি জমি রক্ষায় এলাকার মানুষরা ভূমিরক্ষা কমিটিও গড়ে তুলেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং এক প্রান্তিক চাষি তথা ভেড়ি বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ তুলসী পাল জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে ভেড়ি মাফিয়ার দল এখানকার তিন ফসলি জমিকে অচাষযোগ্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জমিগুলির জমা জল যে অংশ দিয়ে নেমে যায় সেখানকার স্লুইসগেটটি বন্ধ করে দিয়ে ক্ষেতের ফসল পচিয়ে দেওয়া হয়। আবার এই চারশ একর জমিতে থাকা জলসেচের প্রয়োজনে থাকা প্রায় ৩০টি স্যালোপাম্প বন্ধ করে রাখার জন্য মালিকদের চাপ দেয়। সব মিলিয়ে প্রায় ২বছর আমাদের জমির চাষ নষ্ট করা হয়েছে। এটা দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে যে এখানকার জমিতে চাষ হয়না। অথচ বছরে ২বার ধান আর একবার সর্ষের চাষ আমরা করে আসছি পূর্ব পুরুষ পরম্পরায়।
রামভদ্রপুরের গৃহবধূ লক্ষীরানী পাল জানিয়েছেন, ‘এই জমি থেকে আমরা শুধু যে তিনটি ফসল পাই তা’নয়, চাষের অতিরিক্ত সময় এই জমির ঘাসপালা খেয়েই আমাদের গরু বাছুর ছাগল ইত্যাদি বেঁচে থাকে। অর্থাৎ এই জমিই আমাদের সারা বছরের বাঁচার সম্বল সেই জমিতে যদি ঝিল কাটা হয় তবে আমরা তো না খেয়ে মরব।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2021/12/IMG-20211215-WA0009.jpg)
আমরা পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসন, বিডিও থেকে পুলিশ সবার দ্বারস্থ হয়েছি। সবাই আমাদের সামনে বলছে এ জমিতে ভেড়ি হবেনা কিন্তু এদের বড় অংশই মদত দিচ্ছে ভেড়ি মাফিয়াদের। না’হলে কী করে আমাদের চাষের জল বন্ধ করে দেওয়া হয় স্যালো মালিকদের হুমকি দিয়ে? কী ভাবে দিনের পর দিন স্লুইস গেট ফেলে রেখে জল জমিয়ে ফসল পচিয়ে দেওয়া হয়?’
আরও এক গৃহবধূ মোনালিসা পাল বলেন, ‘সবংয়ে আপনি ভুলেই যাবেন যে স্বাধীন দেশে রয়েছে। ইংরেজরা যেমন কৃষকদের নিজের জমিতে ধান চাষের বদলে নীল চাষ করতে বাধ্য করত এরা তেমনই আমাদের জমিতে ভেড়ি করার জন্য জোর জুলুম করছে। আমাদের চাষ করতে দিচ্ছেনা। জমিতে কখনও জল ঢুকিয়ে দিচ্ছে আবার কখনও সেচের জল নিতে দিচ্ছেনা। পঞ্চায়েত, নেতা, পুলিশ সব এদের কেনা। এরা বাইক বাহিনী নিয়ে আসছে, হুমকি দিচ্ছে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার, মহিলাদের কটু কথা বলছে। পরিস্থিতি ক্রমশঃ উত্তপ্ত করছে। অশান্তির পরিবেশ তৈরি করছে। একটা ভয়ানক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি আমরা।’
যদিও ভেড়ি নির্মাণের পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের বক্তব্য তাঁদের পক্ষেই বেশি মানুষের সমর্থন রয়েছে। অল্প সংখ্যক মানুষ এর বিরোধিতা করছে। ভেড়ির সমর্থক এক কৃষক অর্নব বেরা জানিয়েছেন, একটির বেশি ফসল এখানে হয়না। এককাটা জমি ধান চাষ করে যেখানে আমাদের ৩০০টাকা লাভ হয়না সেখানে ভেড়ি হলে আমরা ৩০০০টাকা পাব। তাহলে কেন আমরা ধান চাষে পড়ে থাকব? ভেড়ি নির্মাণের বিরোধিতায় ইতিমধ্যে হাইকোর্টে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এখনোও সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। অভিযোগ কোর্টে সেই মামলা চলাকালীন কয়েকদিন আগে ওই অসাধু ব্যক্তিরা আবারো ভেড়ি নির্মাণের জন্য জোরপূর্বক জেসিপি দিয়ে জমি খোঁড়ার কাজ শুরু করে। বর্তমান সেই জেসিপি আটকে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া বলেন, ‘ ভেড়ি এবং বেআইনি ইটভাটার জন্যই সবংয়ে নতুন করে বন্যা শুরু হয়েছে। সবংয়ে কোনও ভাবেই ভেড়ি করতে দেওয়া হবেনা।’ রামভদ্রপুরের বাসিন্দারা বলছেন, যেখানে মন্ত্রী বলছেন সবংয়ে ভেড়ি করতে দেবেননা তখন পুলিশ এবং তাঁর দলের নেতারা আমাদের ভেড়ি করতে দেওয়ার জন্য কখনও চাপ, কখনও অনুনয় বিনয় করছে কেন?