নিজস্ব সংবাদদাতা: গরম পড়ার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেছে রক্তের তীব্র চাহিদা। মানুষ সচারচর এই গরমে রক্তদান করতে আগ্রহী হননা কিন্তু তাবলে থেমে থাকেনা রক্তের চাহিদা। অসুখ বিসুখ তো আছেই তার সাথে রয়েছে দুর্ঘটনা, প্রসবজনিত প্রয়োজন ইত্যাদি নানা কারণে গ্রীষ্মকালে রক্তের চাহিদা তুঙ্গে উঠে যায়। ব্লাডব্যাঙ্কগুলিকে হিমশিম খেতে হয় রক্তের চাহিদা মেটাতে। এই দারুন দুঃসময়ে অভিনব উদ্যোগ নিলেন মেদিনীপুরের এক শিক্ষক দম্পতি। একান্ত উদযাপন নয়, সমবেত সম্মিলনে নিজেদের অষ্টমবর্ষ বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করলেন ওই শিক্ষক দম্পতি, আহ্বান তাঁদের এই আনন্দমুহুর্তকে স্মরণীয় করতে বন্ধুরা উপহার নিয়ে নয়, আসুন রক্তদান করার জন্য।
রবিবার, মেদিনীপুর শহরের চিড়িমারসাইয়ের বাসিন্দা ওই শিক্ষক দম্পতি মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত ও চন্দনা পইড়া সামন্তের এই অভিনব অষ্টম বিবাহবার্ষিকী আয়োজিত হয়ে গেল মেদিনীপুর রেডক্রশ সোসাইটি হলে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, মেদিনীপুরের সহ সম্পাদক স্বামী মায়াধীশানন্দ, খড়গপুর গ্রামীনের বিধায়ক দীনেন রায়, সমাজসেবী সুজয় হাজরা,কৃষ্ণেন্দু বিষই, ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী, শান্তনু দে প্রমুখরা। শুধুই বন্ধুদের আহ্বান জানানো নয়, শিক্ষক দম্পতি মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত ও চন্দনা পইড়া সামন্ত নিজেরাই রক্তদান করে এই অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। তাঁদের পাশাপাশি আরও ২৮ জন আমন্ত্রিত রক্ত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে রক্তদাতাদের মধ্যে ৬ জন মহিলা ছিলেন। ৯ জন জীবনের প্রথম রক্তদানের গৌরব অর্জন করেছেন এই বিবাহবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে।
জঙ্গল মহলে অবস্থিত নয়াগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক সংগৃহীত এই রক্তদান অনুষ্ঠানে সর্বনিম্ন ১৯ বছরের তরুণ তন্ময় মাহাত ও সর্বোচ্চ ৪৬ বছর বয়সী অক্ষয় মন্ডল রক্তদান করেছেন বলে জানা গেছে। মেদিনীপুর ছাত্র সমাজের সম্পাদক শিক্ষক কৃষ্ণগোপাল চক্রবর্তী জীবনের ১৯তম বার রক্তদান করেছেন ওই শিক্ষক দম্পতির আহ্বানে সাড়া দিয়ে। রক্তদানের পাশাপাশি ওই শিক্ষক দম্পতি মরণোত্তর দেহদানেরও অঙ্গীকার করেছেন এই অনুষ্ঠান থেকে। মা ও বাবার এই অভিনব উদ্যোগের স্বাক্ষ্য থেকেছে শিক্ষক দম্পতির একমাত্র সন্তান ৪ বছরের ঐশী। অনুষ্ঠানে রক্তদান সম্পর্কিত একটি আলোচনা চক্রও অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অগনিত রক্তদান আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিত্ব,শিক্ষা ও সংস্কৃতি জগতের কুশীলবরা। বিবাহবার্ষিকীর আরও একটি অভিনব উদ্যোগ ছিল আমন্ত্রিতদের প্রীতিভোজের বাইরেও শহরের দুঃস্থ পরিবারের প্রায় ৫০জনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা। ছাত্র সমাজের কৃষ্ণ গোপাল চক্রবর্তী,ফারুক মল্লিক সহ মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত রাঙামাটি রেললাইন সন্নিহিত এলাকায় ওই খাবার বিতরন করেন।