শশাঙ্ক প্রধানঃ নিত্য দিনের অশান্তি! সন্ধ্যা হলেই পাড়া জুড়ে দুই ভাইয়ের চিল চিৎকারে টেকা দায়। না, শুধু চিৎকার চেঁচামেচি বা হৈ হট্টগোলই নয়, মাঝে মধ্যে হাতাহাতি এমন কী লাঠালাঠিও চলে। চলে তুমুল ঝগড়া আর অশ্রাব্য গালাগালিও। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে কান পাতা যায়না সেই খিস্তি খেউড়ে জ্বালায়। নিতান্ত বাধ্য হয়েই তাই দুই ভাইয়ের লড়াই থামাতে গিয়েছিলেন প্রতিবেশী বৃদ্ধ কিন্তু সেটাই যে তাঁর জীবনের কাল হয়ে যাবে কে জানত? হ্যাঁ, মঙ্গলবার এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার অন্তর্গত চকপালশা গ্রামে। ওইদিন সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুর শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে সবং পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত ১ নং দেভোগ অঞ্চলের বাদলপুর সংলগ্ন এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চকপালশা গ্রামের দুই ভাই ভোলানাথ শিট এবং মদন মোহন শিটের মধ্যে প্রায় অশান্তি লেগে থাকে। এই অশান্তির কারন মূলত ছোট ভাই মদন মোহন। মদন মদ্যপ, সন্ধ্যা বেলায় মদ পান করে বাড়িতে ফিরে গালাগালি, অশান্তি করে থাকে। মঙ্গলবার রাত্রি প্রায় আটটা নাগাদ সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। দুই ভাই ভোলানাথ শিট এবং মদন মোহন শিট এর মধ্যে তুমুল বচসা হতে থাকে যা কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝগড়া মারামারিতে পরিণত হয়। মদন মোহন লাঠি নিয়ে বড় ভাই ভোলানাথকে মারতে উদ্যত হয়। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে ছুটে আসে ৫৯ বছর বয়সী প্রতিবেশী হরিপদ শিট। বাধা পেয়ে ক্ষুব্ধ নামে মদন মোহন বৃদ্ধ ওই প্রতিবেশীকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে ঘটনস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ওই ব্যাক্তি। অন্যান্য প্রতিবেশীরা আহত বৃদ্ধকে অতি সংকটজনক অবস্থায় তড়িঘড়ি সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার পরেই অভিযুক্ত মদন মোহন শিট এলাকা থেকে ফেরার হয়ে যান। তাঁর দাদা ভোলানাথ শিট জানিয়েছেন, “ছোট ভাই মদন মোহন বাড়িতে এসে প্রায় নেশাগ্রস্থ অবস্থায় বাড়িতে এসে গন্ডগোল শুরু করতো, এদিনও বাড়িতে এসে দু এক কথা নিয়ে ঝগড়া শুরু করে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে,সেইনসময় আমাকে মারতে উদ্যত হলে আমাদের এক প্রতিবেশী হরিপদ তাকে আটকানোর চেষ্টা করলে,তাঁকে মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত হানে,ঘটনার সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হরিপদ বাবু।এরপর তাঁকে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়েছেন। ঘটনার পর থেকেই ভাই মদন মোহন ফেরার রয়েছে। আমরা সবং থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। কঠিন শাস্তি চাইছি ওঁর।” ঘটনায় ইতিমধ্যেই ওই ব্যাক্তির খোঁজ শুরু করেছে সবং থানার পুলিশ। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। অন্যদিকে পুজোর মুখেই এই ঘটনায় শোকে মুহ্যমান হরিপদ শিটের পরিবার! শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে বুধবার সকালে সবং থানারই তেমাথানি থেকে মদনমোহন কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।