নিজস্ব সংবাদদাতা: মেদিনীপুর থেকে ধেড়ুয়া হয়ে ঝাড়গ্রাম যাওয়ার জঙ্গল পথে রাতের অন্ধকারে আস্ত শালগাছ কেটে ফেলে রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল গুড়গুড়িপাল থানার জামশোল এলাকায়। কে বা কারা এই কান্ড ঘটালো তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
কিন্তু ঘটনাকে কেন্দ্র করে যথেষ্ট আতঙ্ক ছড়িয়েছে পথচারীদের মধ্যে। মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রাম যাওয়ার সহজ এবং নিরাপদ এই রাস্তায় অসংখ্য মানুষ ব্যবহার করেন। ঝাড়গ্রাম ছাড়াও ধেড়ুয়া, চাঁদাড়া, গুড়গুড়িপাল সহ একাধিক জায়গায় স্কুল, গ্রামপঞ্চায়েত এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এমন বহু মানুষ মেদিনীপুর শহরে বসবাস করেন এবং এই রাস্তা ব্যবহার করেন। এছাড়াও প্রচুর কৃষক, দুগদ্ধ বিক্রেতা ইত্যাদি মানুষ জন মেদিনীপুর শহরে যাতায়াত করেন এই পথেই। রাতের অন্ধকারে জঙ্গল বেষ্টিত এই রাস্তা কী তবে ছিনতাইবাজদের কেন্দ্র হয়ে উঠছে? এমনই দুশ্চিন্তা কাজ করছে তাঁদের মধ্যে। কারন অনেককেই সন্ধ্যা কিংবা রাতে বাড়ি ফিরতে হয়।
রবিবার রাতে কিছু মানুষ মেদিনীপুর ফেরার পথে জামশোলের জঙ্গলে রাজ্য সড়কের ওপর আড়াআড়িভাবে পড়ে থাকতে দেখেন একটি প্রমান সাইজের শালগাছ। রাস্তার পাশের ওই শালগাছটি গোড়া থেকে কেটে শুইয়ে দেওয়া হয়েছিল। বেশ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। অপেক্ষমান মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় গুড়গুড়িপাল থানার পুলিস। বিশালাকার ওই গাছটি রাস্তার ওপর থেকে সরাতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় পুলিশকে। লোকজন ডেকে কয়েকটি খণ্ডে কেটে গাছটি সরাতে হয়। ঘটনার পর চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। কারা কেনই বা এই ঘটনা ঘটালো তাই নিয়ে ধন্দে পড়ে যায় মানুষ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক অতীতে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। প্রায় একযুগ আগে এই এলাকায় তৎপর ছিল মাওবাদীরা। তখন মাঝে মধ্যে এই জঙ্গলপথে এই ধরনের ঘটনা ঘটত। পুলিশের গতিবিধি আটকানোর জন্য মাওবাদীরা এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকত।যদিও দীর্ঘদিন এমন ঘটনা ঘটেনি। এই এলাকায় তেমন সক্রিয়তাও নেই মাওবাদীদের। প্রশ্ন উঠছে তাহলে এই ঘটনা কারা ঘটালো আর কেনই বা ঘটালো?
এলাকাবাসীর একাংশের মনে করছেন ছিনতাই করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে দুষ্কৃতিদের দল। অন্য একটি মতে গাছ কেটে লুটের উদ্দেশ্যে এই কাজ। রাস্তার পাশাপাশি গাছ কাটলে দ্রুত তা পাচার করার সুবিধা গাড়িতে তুলে নিয়ে। তবে পথ আটকে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে এই কাজ করার চেষ্টা হলে তা মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে। খুবই অনিরাপদ হয়ে পড়বে রাস্তাটি।
পুলিশ এই ঘটনাকে যথেষ্টই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে দাবি করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিস সুপার দীনেশ কুমারের দাবি, একদল দুষ্কৃতী ঘটিয়েছে এমন ঘটনা। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, মাসখানেক আগেই কেটেছে মাওবাদীদের শহিদ সপ্তাহ। গোয়েন্দা দপ্তরের এক রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে এবং ঝাড়খন্ড লাগোয়া বেশ কয়েকটি এলাকায় বেড়েছে মাওবাদীদের আনাগোনা। যদিও এই অঞ্চলে মাওবাদীরা তৎপর রয়েছে এমন দাবি মানতে নারাজ পুলিশ। অন্যদিকে সাধারণ মানুষজনের দাবি, এতবড় গাছ কাটতে বেশ কয়েকঘন্টা সময় লাগার কথা। তাহলে তা টহলরত পুলিশের নজরে পড়লনা কেন তাহলে কী পুলিশ ঠিকমত টহল দিচ্ছেনা! সাধারণ মানুষের দাবি আরও বেশি বেশি টহল দেওয়া হোক রাস্তার জঙ্গল অংশে।