নিজস্ব সংবাদদাতা: দিন কয়েক রাজ্যের সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থানা। গ্রামের কয়েকজন মাতব্বর গ্রাম কমিটির নামে নিদান দিয়েছিল তাঁদের অনুমতি ছাড়া গ্রামের কেউ জমি-জায়গা বিক্রি করতে পারবেনা। রাজ্য জুড়ে সেই খবর নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হতেই পুলিশ গ্রেফতার করে কয়েকজন মাতব্বরকে। তারই রেশ মিটতে না মিটতেই এবার আরও এক মারাত্মক অভিযোগ উঠে আসল সেই মহিষাদল থেকেই। প্রায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া এক ব্যক্তি ও তাঁর বিধবা মায়ের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে স্থানীয় একটি ক্লাব এমনই অভিযোগ আনলেন ওই পরিবার। অভিযোগ অসহায় ওই পরিবারটির নিজস্ব সম্পত্তি ২টি পুকুর যা তাঁরা লিজ দিয়ে সংসার নির্বাহ করতেন তা এবছর লিজ দিতে দেওয়া হয়নি।
মহিষাদলের বিডিওর কাছে দায়ের করা একটি মর্মান্তিক অভিযোগে কিসমৎ নাইকুন্ডি গ্রামের সাবেক সমৃদ্ধশালী কিন্তু বর্তমানে প্রায় হাঅন্ন পরিবারের সদস্য দীপঙ্কর পতি অভিযোগ করেছেন, তিনি তাঁর ৭৫ বছরের বিধবা মাকে একাই থাকেন। আয় বলতে মায়ের বিধবা ভাতা ও তাঁর সামান্য কিছু উপার্জন। দীপঙ্কর বাবু নিজেও প্রায় পঙ্গু। নানা শারীরিক উপসর্গে ব্যতিব্যস্ত মা ও ছেলে। পূর্বপুরুষের সুরম্য অট্টালিকাটি ভেঙে পড়ছে মেরামতের অভাবে। সেটা সারানো তো দূরের কথা নিজেদের ওষুধ জোগাড় করাই তাঁদের পক্ষে দুষ্কর হয়ে পড়ছে। আর এই অসহায়তার সুযোগ নিয়ে স্থানীয় একটি ক্লাবের কয়েকজন মাতব্বর তাঁদের বিষয় সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে ।
দীপঙ্কর জানিয়েছেন, গত কয়েকবছর ধরেই এই চক্রান্ত ও নির্যাতন চলছিল কিন্তু সম্প্রতি সেই অত্যাচার সীমা ছাড়িয়েছে। তাঁদের পারিবারিক ২টি পুকুর তাঁরা বাৎসরিক ২৫হাজার টাকা লিজে স্থানীয় গুরুপদ বর্মন নামে এক মৎস্যচাষীকে লিজ দিতেন যা দিয়ে তাঁদের চিকিৎসা ইত্যাদি নির্বাহ হত তা বন্ধ করে দিয়েছে ওই ক্লাবের সদস্যরা। দীপঙ্করের ভাষায়, ‘গত ৫ই এপ্রিল ওই ক্লাবের সদস্যদের কয়েকজন এসে আমাকে জোর করে ক্লাবে যেতে বাধ্য করে। সেখানে তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে তাঁদের চাহিদা মত জমি ক্লাবকে দিয়ে দিতে হবে। নচেৎ আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া সরকারি ঢালাই রাস্তা দিয়ে আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহৃত টোটো, অটো কিংবা রিকশা যাওয়া আসা করতে দেবেনা। এমনকি ভবিষ্যতে ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলাও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।’
অসহায় দীপঙ্কর বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনার পর আমার স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত। ক্যাথিটার নিয়ে আমাকে চলাফেরা করতে হয়। আমার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ এবং আমার মা এতই অসক্ত যে বাড়ির বাইরে কোনও কাজের প্রয়োজনে যেতে হলে টোটো, অটো বা রিকশা ছাড়া আমাদের কোনও উপায় নেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা তো না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবো।’ স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ক্লাবের নাম করে পুরানো এই জমিদারের সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টায় রয়েছে এলাকারই এক পান্ডা। সদ্য ফুলে ফেঁপে ওঠা ওই ব্যক্তি চাইছে কম দামে ওই পরিবারের সম্পত্তি হাতাতে। অসহায় পরিবারটির আত্মীয় স্বজনদেরও যোগাযোগ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।