নিজস্ব সংবাদদাতা: মাস দু’য়েক আগে খড়গপুর জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো হার ছিনতাইয়ের দলের হদিস করতে গিয়ে পুলিশ একটি বাইক চিহ্নিত করেছিল। ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ওই বাইকটির মালিকের খোঁজ করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। বাইকের মালিক একজন উকিল। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে ওই উকিলের কাছ থেকে বাইকটি ক’দিনের জন্য চেয়েছিলেন তাঁর এক বন্ধু। বন্ধুটিও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। কিন্তু সেই বন্ধুর কাছ থেকে খুব জরুরি দরকার আছে বলে বাইকটি সাতসকালে বাইকটি চেয়েছিল প্রতিবেশী এক যুবক। ওই দিন সকালেই সেই বাইকে করে হার ছিনতাই। উকিলের বন্ধু জানতেন না যে তাঁর কাছ থেকে বাইক নিয়ে যাওয়া যুবকটি অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত।
শুক্রবার গোলবাজার ব্রিজের ওপর জোম্যাটো বয়ের মোবাইল ছিনতাই হওয়ার পর ছিনতাইবাজদের ৩কিলোমিটার তাড়া করে একজনকে ধরে ফেলেছিল খড়গপুরের যুবক বি স্যামুয়েল। উদ্ধার হয় ছিনতাইয়ের জন্য ব্যবহৃত স্কুটিও। ২জন পালিয়ে যায়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ধরা পড়ে যাওয়া কিশোর আদতে ছিনতাইয়ের বিন্দু বিসর্গ জানতনা। সন্ধ্যাবেলায় বাবার স্কুটি নিয়ে একটু বেড়াতে বেরিয়েছিল ওই নাবালক। পাড়ার দুই ‘দাদা’ তাকে নিয়ে বলে চল গোলবাজার ঘুরে আসি। তারপর ছিনতাই। পালাবার সময় স্কুটি পড়ে গেলে ওই দুষ্কৃতি পালিয়ে গেলেও নাবালক ছেলেটি পালাতে পারেনি এমনকি পালাতে চায়নি কারন স্কুটি না নিয়ে সে বাড়ি ফিরলে বাবার কাছে কী কৈফিয়ত দেবে?
ওই নাবালক কিশোরকে পাড়ার যে দুই দাদা ফাঁদে ফেলেছিল তাঁদের একজন কুখ্যাত ছিনতাইবাজ, বেআইনি অস্ত্রের কারবারি শের খান। বেআইনি অস্ত্র রাখার মামলায় ক’দিন আগেই জেল থেকে জামিন পেয়ে বেরিয়েছিল শের খান এবং তার অপর সঙ্গী। খড়গপুরে মাস দুয়েক আগে হার ছিনতাই কান্ডেও শের খান ও তার সঙ্গী জড়িত ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদের নিজস্ব কোনও বাইক নেই। প্রকৃতপক্ষে কোনও ছিনতাইবাজেরই নিজস্ব বাইক নেই। পরিচিত জনের কাছ থেকে ‘জরুরি’ দরকারের নামে বাইক চেয়ে নেয় এক দু’ঘন্টার জন্য। তারপর অপারেশন সেরে বাইক ফেরৎ দেয়। আর পরিচিত নাবালকের কাছে স্কুটি কিংবা বাইক পেলে তো পোয়া বারো। আ্যডভেঞ্চার কিংবা অন্য কোনও লোভ দেখিয়ে অপরাধের সঙ্গী করে নেওয়া হয় নাবালকের নিজের অজান্তেই।
তবে নাবালক ও কিশোরদের অপরাধ চক্রে জড়িত করার সবচেয়ে ভালো উপায় তাদের পাতা বা ড্রাগ সেবনে অভ্যস্থ করানো। খড়গপুর পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দু একবার মুফতে পাতা খাইয়ে দিয়ে মজা লাগিয়ে দিলেই অনেকটা কেল্লা ফতে। এরপর ওই নাবালককে দিয়ে বাড়ির মূল্যবান জিনিস চুরি করানো থেকে ছিনতাই চক্রে সামিল করে নেওয়া সহজ হয়। সেরকম কাজও করছে শের খানের মত দাগী অপরাধীর দল। খড়গপুরে অনেক সময় যে নাবালক বা তরুণ অপরাধীরা ধরা পড়েছে তার মধ্যে অনেকেই ‘পাতা’ টাকা জোগাড় করতেই অপরাধে নামছেন। খড়গপুর পুলিশের তাই পরামর্শ নিজের বাইক, স্কুটি কাকে ব্যবহার করতে দিচ্ছেন যাচাই করে নিন। আর বাড়ির নাবালক ভাই কিংবা ছেলে কার সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে নজর রাখুন। নিজের অজান্তেই আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ অপরাধ চক্রে চলে আসছেন না তো?