নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘চাইনা মোরা লক্ষ্মীভাতা,
ওরা করুক শিক্ষকতা।
বেকার যুবক হচ্ছে লাশ,
লক্ষ্মী ভাতায় সর্বনাশ।’ এক মা-ও করুন আর্তি মাখা পোস্টার নিয়ে হাজির হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সদর মেদিনীপুর শহরের রাজপথে। গত কয়েকবছর ধরেই ২০১৪ সালে প্রাথমিকের টেট পাস এবং ও প্রশিক্ষিত ‘নট ইনক্লুডেড’ চাকরিপ্রার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে ফেটে পড়তে দেখেছে পশ্চিমবাংলা। নানা সময়ে নানা ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এই চাকরি প্রার্থীরা। কিন্তু এবার সেই চাকরি প্রার্থীদের হয়ে রাস্তায় নামতে দেখা গেল মায়েদের। যে মায়েরা বললেন, আমাদের লক্ষ্মী ভান্ডার চাইনা, মুখ্যমন্ত্রী ছেলে-মেয়েদের চাকরি দিন। আর সেই মিছিলেই বয়ে আনতে দেখা গেল বেকার যুবকের জিন্দা লাশকে।
গত নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী চালু করেছিলেন সাধের লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্প। মহিলারা লাইন দিয়ে সেই প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছেন। সরকার সেই প্রকল্পে টাকাও দিচ্ছেন। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে লক্ষ্মী ভান্ডারের বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় বিরক্ত হয়ে উঠছেন মানুষ। ট্রেনে বাসে, হাটে বাজারে শুরু হয়েছে গুঞ্জন, ‘লক্ষ্মী ভান্ডারের নাম করে রাজ্যে এক সর্বনাশা দিক শুরু হয়েছে। সরকারের জনমোহিনী রূপ বজায় রাখতে গিয়ে সরকারের নিয়োগ, উন্নয়ন কাজ বন্ধ। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভায় অবসর প্রাপ্ত কর্মচারীদের পেনশন বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে আবার দাবি করছেন, লক্ষ্মীভান্ডারের টাকা জোগাতে ট্রাফিক আইনে পরিবর্তন এনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফাইনের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লোকে ব্যঙ্গ করে বলছেন, ছেলের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ফাইন আদায় করে মা কে মাসে ৫০০ টাকা ভাতা দিচ্ছে সরকার।
আবারও উত্তাল হল মেদিনীপুর শহর। পৌরসভা ভোটের মুখে এমন উত্তাল বিক্ষোভ সহ পথ অবরোধ কর্মসূচিতে প্রসাশন কে লাগিয়ে শাষকদল হেনস্তা করার চেষ্টা চালিয়েও ব্যার্থ হয়। চাকুরী না পাওয়া এমন শিক্ষিত বেকার টেট পাশ করা যুবক যুবতী সহ তাদের পরিবার সামিল হয় পথ অবরোধ সহ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে। মেদিনীপুর শহরের রিংরোড জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়। শ্লোগান ওঠে প্রতারক ও দূর্নীতি গ্রস্ত সরকার রাজ্যের শিক্ষিত কর্মহীন দের স্বপ্নকে চুরমার করে শশ্মানের লাশ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী ২০২০ সালে নভেম্বর মাসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন টেট পাশ করা সবার চাকুরি ২০২১ এর মার্চের মধ্যে নিয়োগ পত্র দেবে। তিনি প্রতিশ্রুতি পালন না করে আবারও প্রতারনা করেছে রাজ্যের যুব সমাজের সাথে।
শুক্রবার মেদিনীপুর শহরের মায়েরদের হাতে থাকা পোস্টার আর মুখের শ্লোগানেও যেন তেমনই অর্থ সুচিত হয়েছে। মায়েরা বলেছেন, ‘বেকার যুব হচ্ছে লাশ, লক্ষী ভাতার সর্বনাশ।’ এদিন ট্রলি ভ্যানে যেমন জ্যান্ত লাশ বয়ে হাঁটা হয়েছে মিছিলে তেমনই রাজ্য সরকারের দূয়ারে মদ প্রকল্পের কর্মী সেজে, কেউ বা চাপরাশি সহ মুটে মজুর সেজে মিছিলে হেঁটেছেন। বলেছেন, পরিযায়ী শ্রমিক হতে চাইনা! আমাদের বাংলার মাটিতে বাঁচতে চাই। এদিন জেলা শাসক দপ্তরের সামনে সড়ক রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ অবস্থান চলে প্রায় দুঘন্টা। তার আগে এক ঘন্টা ধরে শহর জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন এমন চাকুরি প্রার্থী সহ তাদের পরিবার। পথ অবরোধ বিক্ষোভ চলাকালীন ভাজা হয়েছে তেলে ভাজাও।
বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, ‘ দুই মেদিনীপুর জেলায় এমন চাকুরি প্রার্থীদের সংখ্যা তিন হাজার অধিক।
রাজ্য জুড়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার D.El.Ed ও B.Ed পাস টেট উত্তীর্ণ, ইন্টারভিউ দেওয়া চাকুরী প্রার্থীরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত। এমনি করে চলতে থাকলে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও পথ থাকবেনা। নিজেদের দাবীপত্র তাঁরা জেলাশাসক মাধ্যমে নবান্নে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জমা দেন। পুরভোটের মুখে এই বিক্ষোভ নিশ্চিতভাবেই চাপে ফেলেছে শাসকদলকে।