নিজস্ব সংবাদদাতা: মায়ের কাছে শুয়েছিল দুটি শিশু। ভোরের দিকে হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায় আট বছরের মেয়েটির। সে দেখে পাশে শুয়ে থাকা মায়ের গলার নলি কাটা, রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। আর গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে বাবা। বুধবার ভোরে এমনই দৃশ্য দেখে চিৎকার করে ওঠে মেয়ে রিয়া। দৌড়ে যায় গ্রামের মধ্যেই থাকা মামার বাড়িতে। ছুটে আসেন প্রতিবেশীরাও। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মৃতদেহটি সংগ্ৰহ করেছে। গোটা ঘটনায় হতভম্ব গ্রামের সবাই। রাতারাতি অনাথ ওই দম্পত্তির তিন শিশু। বুধবার ভোরবেলায় এমনই মর্মান্তিক ঘটনা খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার ভেটিয়া গ্ৰাম পঞ্চায়েতের কুচলাতাড়ি গ্ৰামে। পুলিশ জানিয়েছে মৃত দম্পতি হলেন যুগল নায়েক(৩৪) ও বকুল নায়েক (৩১)।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে হাঁসুয়া দিয়ে গলায় ও মুখে কোপ মেরে স্ত্রী বকুলকে খুন করার পরই গলায় দড়ি দিয়ে বাড়ির বাঁশের ধরনা থেকে ঝুলে পড়েছেন যুগল। যদিও ঠিক কী কারণে এই ঘটনা তা পরিস্কার নয় তবে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান মানসিক ভারসাম্যহীনতা থেকেই এমন কান্ড ঘটিয়েছেন যুগল। ঘটনার জেরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনায় বুধবার দুপুরে খড়গপুর গ্ৰামীণ থানায় মৃত বকুলের মা ভাদু মল্লিক একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার ভোর চারটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। মায়ের সঙ্গে একই ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন দুই শিশুকন্যা রিয়া ও প্রিয়া নায়েক। যদিও দুজনের বয়স যথাক্রমে আট ও ছয় বছর। কিন্তু যুগল অন্য একটি ঘরে শুয়েছিল। তাদের দশ বছরের ছেলে তুষার ঘটনার সময় বাড়িতে ছিল না। মামার বাড়িতে ছিল। খবর পেয়ে বাড়িতে এসেছে। সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ প্রথম ঘুম ভেঙে বড় মেয়ে রিয়া ঘটনাটি দেখার পরই বোন প্রিয়াকে ডেকে তুলে ঘরের বাইরে এসে দাদুকে বলে। ওই শিশুকন্যা দুটির কান্নাকাটি ও দাদু মদন নায়েকের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে দৌড়ে আসেন। পৌঁছে যান স্থানীয় গ্ৰাম পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী দেবেন মাহাতো সহ আরও অনেকে।
এরপরই স্থানীয় সিভিক ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে খবর দেওয়া হয় খড়গপুর গ্ৰামীণ থানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে এগারো বছর আগে ঝাড়গ্ৰাম জেলার সাঁকরাইল থানার বাকরা গ্ৰামের বকুলের সঙ্গে দিনমজুর যুগলের বিয়ে হয়। বছর খানেক হয়েছে কিছুটা খ্যাপাটে প্রকৃতির হয়ে যায় যুগল। মাঝেমধ্যেই উগ্ৰ হয়ে উঠত। তখন স্ত্রীকে মারধর থেকে শুরু করে গালাগালি করতেন বলে অভিযোগ। যদিও অন্য সময় স্বাভাবিক থাকত যুগলের আচরণ। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। যদিও মৃত গৃহবধূর মা ভাদু মল্লিকের অভিযোগ আগে মদ্যপ অবস্থায় মেয়েকে মারধর করতেন জামাই। তবে মঙ্গলবার রাতে এই দম্পতির মধ্যে কোনও অশান্তি হয় নি বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশী যুবক রাজু ভক্তা। তিনি জানিয়েছেন এই পরিবারটি বিশেষ করে গৃহবধূ খুবই ভালো ছিলেন। এরকম একটি ঘটনা ঘটে যাবে সেটি তাঁরা প্রতিবেশীরা ভাবতে পারেন নি বলে জানালেন এই যুবক।
মৃত যুবকের বাবা মদন নায়েক বললেন ” আমি রাতে বাড়ির বাইরে শুয়েছিলাম। বউমা এবং নাতনিদের ঘরের দরজা তালা লাগানো ছিল। চাবি ছিল আমার কাছেই। রাত তিনটা নাগাদ ছেলে একবার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে উঠেছিল। এরপর সে আমার কাছে ওই ঘরের চাবি চায়। আমি দিয়ে দিই। তারপর সে বউমা ও দুই নাতনি যে ঘরে শুয়েছিল সেই ঘরে ঢুকে দরজায় ভেতর থেকে খিল দিয়ে দেয়। তারপর সকালে দুই নাতনি ঘর খুলে বাইরে এসে ঘটনাটি বলে। দৌড়ে ঘরে ঢুকে দেখি এই দৃশ্য।” মদন আরও জানান, বছর খানেক ধরে ছেলের মাথার গন্ডগোল দেখা দিয়েছিল। আগে মদ খেলেও বর্তমানে সে মদ ছেড়ে দিয়েছে। তাঁর অনুমান হঠাৎ করে খেপে গিয়ে ছেলে এই কান্ড ঘটিয়েছে। জানা গিয়েছে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে খুনের কাজে ব্যবহৃত হাঁসুয়াটি বাজেয়াপ্ত করেছে।