নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুরে সাট্টার গদিতে গোলমালের জেরে এক ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। খড়গপুর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাঙালি পাড়ার মল্লিক গলির এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে মৃত ব্যক্তির নাম সোনা মল্লিক। ৪৩ বছরের সোনা খড়গপুর শহরের ট্রাফিক গোলখুলির হনুমান মন্দির লাগোয়া খড়গপুরের কুখ্যাত সাট্টা ডন তপন দত্তের গদিতে কাজ করত বলে জানা গেছে। মূলতঃ সন্ধ্যের পর থেকে মধ্যরাত অবধি সাট্টার খেলা চলে। তাই সন্ধ্যের পরই কাজে যেত সোনা, ফিরত মধ্যরাতে। বৃহস্পতিবারও সোনা সন্ধ্যায় বাড়ির লোকেদের জন্য সিঙ্গাড়া এনে তা দিয়ে মুড়ি খেয়ে কাজে গেছিল। ফিরে আসে রাত ১২টা নাগাদ। রাতের খাবার খাওয়ার পর শুতে যাওয়ার সময় তার শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্ন লক্ষ্য করে তাঁর স্ত্রী তনুশ্রী। কারন জিজ্ঞাসা করায় সে জানায় গদিতে তাঁকে কয়েকজন মারধর করেছিল। রাতে মাথা যন্ত্রনা ও বমি শুরু হয় সোনার। পরিবারের লোকজন সোনাকে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে বলেন। মেদিনীপুরে স্ক্যান করা হলে তাঁকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। পিজিতে জায়গা না থাকায় নিয়ে যাওয়া হয় নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে। শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ সেখানেই মৃত্যু হয় সোনা মল্লিকের।
সোনা মল্লিকের স্ত্রী তনুশ্রী জানিয়েছেন, ‘ আমার স্বামী খড়গপুর শহরের ট্রাফিক গোলখুলি এলাকার সাট্টা ডন তপন দত্তর গদিতে কাজ করত। দু’মাস হল সেই কাজে যোগ দিয়েছিল সে। পেশাগত কারণেই প্রতিদিন বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা হয়ে যেত। বৃহস্পতিবারও রাত ১২টা নাগাদ বাড়ি ফেরে। এরপর রুটি এবং তরকারি খেয়ে শুয়ে পড়ে। শোবার সময় যখন সে পোশাক পরিবর্তন করছিল তখনই তাঁর শরীরে কিছু কালচে দাগ নজরে পড়ে। বুকে, পেটে, কানের নিচে সেই দাগ ছিল। যা কিনা কাউকে মারলে হয়। আমার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করায় সে বলেছিল, সাট্টার গদিতে তাঁর সঙ্গে কয়েক জনের বচসা হয়। তারাই তাঁকে মারধর করেছে। এরপর শুতে যাই আমরা। কিছুক্ষণ পরেই আমার স্বামী মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে বলে ছটপট শুরু করে। মারাত্মক যন্ত্রণার সাথে বমি শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি আমার শাশুড়ি ও জা কে ডাকি। সবাই মিলে তাঁকে সুস্থ করার জন্য হাতে পায়ে মালিশ ইত্যাদি করছিলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলনা।”
সোনার মা মালা মল্লিক দাবি করেছেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা অবধি পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। আমার ছেলে সিঙ্গাড়া কিনে এনেছিল। আমরা সবাই মুড়ি খেয়েছিলাম। এরপর সাড়ে ৭টা নাগাদ সাইকেল নিয়ে কাজে চলে যায় আমার ছেলে। তপন দত্তর গদিতে কাজ করত সে। সাট্টা যেহেতু রাতের দিকেই বেশি খেলা হয় এবং ফলাফল, লেনদেন ওই সময় হয় তাই প্রতিদিনই ফিরতে রাত হয়। বৃহস্পতিবার ও রাতে খেয়ে শোয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। বৌমার ডাকে ছুটে গিয়ে দেখি বমি করছে। বমির সঙ্গে উঠে আসছে সন্ধ্যা ও রাত্রের খাবার। সঙ্গে খিঁচুনি ও চোখমুখ উল্টে যাচ্ছিল। পাড়ার লোকজনের সহায়তায় তাকে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক দেখামাত্রই তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে বলে। মেদিনীপুরে সিটিস্ক্যানে আমার ছেলের মাথার ডানদিকে রক্তজমাট বেঁধে আছে দেখতে পাওয়ার পরই চিকিৎসকরা তাকে এসএসকেএমকে পাঠায়। রাতে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর স্থান না মেলায় তাকে নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর।”
মৃত সোনা মল্লিকের বাবা কানাইলাল মল্লিক বলেছেন, ” সাট্টার গদিতে হিসাবপত্রে কিছু গরমিল করা হচ্ছিল যা ধরে ফেলে আমার ছেলে। সেইসব নিয়ে প্রতিবাদ করার পরই গদির মালিক তপন দত্ত ও তার কয়েকজন কর্মী মিলে মারধর করে আমার ছেলেকে। তার ফলেই মৃত্যু হয়েছে আমার ছেলের।” কানাইলাল খড়গপুর টাউন থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে তাঁর ছেলেকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগও দায়ের করেছেন। সোনার দেহ শনিবার এন্টালি থানার আওতায় ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। খড়গপুর টাউন থানা থেকে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে যেখানে অভিযুক্ত তপন দত্তের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।