নিজস্ব সংবাদদাতা: একটু আগেই তিনি ছিলেন খড়গপু্রের মহানাগরিক! শহরের এক নম্বর ব্যক্তি, বুধবার বিকাল পাঁচটার পর তিনি সাধারন ভোটার। না, এখনও অবধি তিনি একটা পদে রয়েছেন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। বুধবার বিকাল চারটা নাগাদ নিজের সভ্য সমর্থকদের একটা বড়সড় মিছিল করেই এদিন খড়গপু্র মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন প্রদীপ সরকার। যদিও এদিন তাঁর চোখে মুখে সেরকম আত্মবিশ্বাস নজরে পড়েনি। মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে পৌঁছেই তিনি চলে যান সরাসরি মহকুমা শাসকের চেম্বারে। কিছুক্ষন বেরিয়ে এসে জানান, ” মহকুমা শাসকের সঙ্গে আমার যা কথা হয়েছে তাতে আজ নয় পদত্যাগ করব আগামী সপ্তাহে পুরসভার সভাকক্ষে সমস্ত কাউন্সিলদের উপস্থিতিতেই। সেদিন আমি আমার পদত্যাগপত্র তুলে দেব পুরসভার একজিকিউটিভ অফিসারের হাতে। সেদিন উপস্থিত কাউন্সিলরদের মতামত নেওয়া হবে। যদি ১৮ জন কাউন্সিলর আমার পক্ষে থাকেন তবে আমিই আবার পুরপ্রধান হব।”
প্রদীপ সরকার এই যুক্তি সম্ভবত আইনি পরামর্শ মেনেই মহকুমা শাসককে দিয়েছিলেন। কারন সাধারনভাবে সেটাই নিয়ম। প্রদীপের এই আইনি প্যাঁচে মহকুমা শাসকও সম্মত হয়ে যান। তখন মনে হচ্ছিল এ যাত্রায় আরও এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেল প্রদীপের পদত্যাগ। কিন্তু বিষয়টির ওপর কড়া নজর রাখছিলেন প্রদীপ বিরোধী জোটের নেতা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখেই তিনি সরাসরি ফোন করেন তৃনমূল পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি কে। বুঝিয়ে দেন ভোটাভুটির পরিস্থিতি তৈরি হলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। প্রদীপকে সরাসরি পদত্যাগ করতে বলুন। সূত্রের খবর এরপরই অজিত মাইতি কথা বলেন মহকুমা শাসকের সাথে। বুঝিয়ে দেন বিষয়টি আস্থা বা অনাস্থার নয়। প্রদীপ পদত্যাগ করবেন সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত কারন দেখিয়ে। সেই পদত্যাগ যেন সাথে সাথে গ্রহন করা হয়। প্রদীপকে দ্বিতীয় বার ডাকা হয় মহকুমা শাসকের তরফে।
এবার প্রদীপ সাংবাদিকদের সামনে বলে, আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আমি দলের নির্দেশে ইস্তফা দিয়েছি। মহকুমা শাসক বিবেচনা করছেন। কিন্তু এই ঘটনায় আবারও কোনও চাল থাকতে পারে মনে করে প্রদীপ বিরোধী নেতা ফের যোগাযোগ করেন অজিত মাইতির সঙ্গে। অজিত মাইতি এবার সরাসরি ফোন করে প্রদীপ সরকারকে বলেন, কোনোও বিবেচনা নয়, মহকুমা শাসক ইস্তফাপত্র গ্রহন করেছেন এটাই ঘটনা। বাধ্য হয়ে প্রদীপ তৃতীয়বার সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়ে বলেন, তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং মহকুমা শাসক সেই ইস্তফাপত্র গ্রহন করেছেন। আর তারপরই খড়গপু্রে প্রদীপ জমানার অবসান ঘটে।