নিজস্ব সংবাদদাতা: আপাততঃ জল্পনার অবসান ঘটালেন অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। খড়গপুর সদর বিধায়ক বিজেপি বিধায়ক জানিয়ে দিলেন তৃনমূলে যাচ্ছেননা তিনি। ২রা মার্চ ফল ঘোষণার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয় যে অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়কেই চেয়ারম্যান করে খড়গপুর পুরবোর্ড গঠন করতে চলেছে তৃনমূল কংগ্রেস। ঘটনাক্রমে কতগুলি কার্যকারণ সম্পর্ক সেই জল্পনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে যারমধ্যে অন্যতম হল ভোটে জিতেই হিরণ তোপ দাগেন যে তাঁকে যারা হারাতে চেয়েছে সেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিজেপি নেতাদের মুখোশ খুলে দেবেন তিনি। পাশাপাশি রাজ্য বিজেপি আয়োজিত বিজয়ী কাউন্সিলরদের সম্বর্ধনা সভা এড়িয়ে যান তিনি।
তারও চেয়ে বড় দুটি ঘটনা কার্যত হিরণের তৃনমূলে যোগদানের জল্পনাকে ফুলে ফলে পল্লবিত করে। প্রথমত, খড়গপুর পৌরসভার যে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে অভিনেতা হিরণ জয়ী হয়েছিলেন তারই লাগোয়া ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী তৃনমূল প্রার্থী কবিতা দেবনাথ। হিরণ আর কবিতার ফেস্টুন একই গাড়ির দু’পাশে বেঁধে ডি জে বাজিয়ে বিজয় উল্লাস করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। দ্বিতীয়ত, টানা ৫ দিন শহর জুড়ে এই জল্পনা চলা স্বত্ত্বেও হিরণ এই সম্ভবনাকে নীরব থেকে জিইয়ে রাখেন। কখনই সরাসরি বলেননি যে তিনি তৃনমূলে যাচ্ছেননা। একাধিকবার তাঁকে সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলেও তিনি এড়িয়ে যান। অবশেষে সোমবার রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে এসে সেই জল্পনা উড়িয়ে দিলেন অভিনেতা বিধায়ক।
হিরণ বলেন, ‘‘পুরসভায় ২০টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। তাই ওরাই বোর্ড করবে এটাই স্বাভাবিক। আমি বিরোধী দলের বিধায়ক ও বিরোধী দল বিজেপি-র প্রতীকেই কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছে। তাই কোনও ভাবেই খড়গপুর চেয়ারম্যান হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।’’ কিন্তু তিনি এই কথাটাই আগে বললেননা কেন? কেন গোড়াতেই এই জল্পনার শেকড় না কাটার পরিবর্তে তাতে জল ঢেলে আসছিলেন? প্রত্যুত্তরে অভিনেতা হিরণের জবাব , ‘‘ একজন অভিনেতা হিসেবে এই গসিপ আমার ভালো লাগছিল যে আমাকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু এসবের কোনও কিছুই সত্য নয়।” যদিও অভিনেতা বলেই তাঁর এই জবাব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।
হিরণের এই স্বীকারোক্তি চাউর হবার পরও যদিও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেননি খড়গপুর তৃনমূল নেতারা। বিশেষ করে যাঁরা চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এক তৃনমূল নেতা জনিয়েই দিলেন, ‘ দেখুন আমাদের দলে সব কিছুই তো ওপর থেকে চাপানো হয় এবং আমাদের তা গিলতেও হয়। তাই হিরণ চেয়ারম্যান হতে পারে এই জল্পনায় অস্বাভাবিক কিছুই দেখিনি। বিজেপি থেকে ফিরে এসে সব্যসাচী দত্ত বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান হয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদ্যশ্রাদ্ধ করে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দলে ফিরেছেন। সেই তুলনায় হিরণ চট্টোপাধ্যায় কী এমন ব্যাপার! আর আজ উনি বলছেন ফিরবেননা কিন্তু এই জল্পনা যখন রাজ্য ব্যাপী ছড়িয়ে ছিল তখন আমাদের রাজ্য নেতৃত্ব জেনেও তো বললেননি যে হিরণের আসার কোনও প্রশ্ন নেই। সুতরাং এখনও অবধি যা আছে সেটাই সত্যি, কাল কী হবে কে বলতে পারে ? চেয়ারম্যান নির্বাচন না হওয়া অবধি আমি অন্ততঃ না বলতে পারছিনা।’