নিজস্ব সংবাদদাতা: দুজনেরই নিজস্ব পরিবার সন্তান সন্ততি রয়েছে কিন্তু সেসব ছেড়েই ছিলেন লিভ টুগেদারে। প্রায় ৬ বছর গ্রাম থেকে একটু দূরে বাসা বানিয়ে থাকতেন দু’জনে। কিন্তু পরিণতি হল মারাত্মক। লিভ টুগেদারের ঘোর কাটতেই প্রেমিকাকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ উঠল প্রেমিকের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগে গ্রেফতার হলেন প্রেমিক।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/11/IMG-20221130-WA0002.jpg)
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর গ্রামীন থানার অন্তর্গত কলাইকুন্ডা লাগোয়া ভালুকমাচা গ্রামের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে ধৃত যুবকের নাম তরুণ সিং। অন্যদিকে মৃতা মধ্য তিরিশের প্রেমিকার নাম পবিত্রা সিং। মঙ্গলবার একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গ্রামেরই অদূরে একটি জঙ্গলের ভেতরে কবর থেকে পবিত্রার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে ভালুকমাচা গ্রামের তরুণ ও পবিত্রা একসম়য় আলাদা আলাদা বিবাহিত ছিলেন। কিন্তু তরুণ আর পবিত্রা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পবিত্রা নিজের স্বামী ও দুই সন্তানকে ত্যাগ করেছিলেন। অন্যদিকে তরুণ নিজের বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তানকে ত্যাগ করেছিলেন। তারপর দুজনেই গ্ৰামের এক কোনায় জঙ্গলের পাশে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি তৈরি করে লিভ টুগেদারে থাকতেন।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/11/IMG-20221130-WA0001.jpg)
গ্রামবাসীরা সবটাই জানতেন কিন্তু কেউ এনিয়ে মাথা গলাননি। প্রায় এমনই চলছিল কিন্তু ছয় বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে ভাটা পড়ে। বিশেষ করে তরুণের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে সে গত কয়েক মাস যাবত পবিত্রার ওপর অত্যাচার চালাতেন। আর তারই চূড়ান্ত পরিণতি হল পবিত্রাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে। অভিযোগ শেষ অবধি পবিত্রাকে মেরে মাটিতে পুঁতে দেয় তরুণ।
পুলিশ সেই খবর জানতে পেরেই সোমবার রাতেই হানা দেয় খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার অর্জুনী গ্ৰাম পঞ্চায়েতের ভালুকমাচা গ্ৰামে। রাতেই আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয় তরুণকে। পরে কল্পনা সিং নামে এক গ্ৰামবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলা দায়ের করে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্যদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ভালুকমাচা জঙ্গলের ভেতরে মাটি থেকে পবিত্রার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। সেইসময় উপস্থিত ছিলেন খড়গপুর এক নম্বর ব্লকের বিডিও দেবদত্ত চক্রবর্তী সহ পুলিশের খড়গপুরের সিআই অতীন্দ্রনাথ দত্ত ও খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার ওসি আসিফ সানি।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে সোমবার বিকালে কাজ করে ফিরে আসার পর দিনমজুর তরুনের নজরে পড়ে বাড়িতে স্ত্রী মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তাঁর মুখে গ্যাজলা বেরিয়েছিল। তখনই তিনি গ্ৰামবাসীদের শরণাপন্ন হন। নিয়ম পালন করে মৃতদেহ সৎকারের জন্য তাঁদের অনুরোধ করেন। তখন তাঁকে বলা হয় অনেকেই কাজে গিয়েছেন। সকলে ফিরুক। তারপর যা করার করা হবে। কিন্তু তারমধ্যেই তরুন একক প্রচেষ্টায় মৃত প্রেমিকার দেহ কাছেই জঙ্গলে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মাটির নিচে পুঁতে দেন। তারপর সন্ধ্যাবেলায় গ্ৰামবাসীরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করতে শুরু করেন। তখন তাঁরা দেখেন বাড়িতে মৃতদেহ নেই। তারপরেই গোটা ভালুকমাচা গ্ৰামে শোরগোল পড়ে যায়। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তরুনকে জেরা করে পুলিশ নিশ্চিত হয় মৃতদেহটি জঙ্গলের ভেতরে তরুন মাটি চাপা দিয়ে পুঁতে দিয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন পরকীয়ার টানে দুজনে সাত বছর আগে দুজনেই হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়। তার কয়েক মাস পর ফের গ্ৰামে ফিরে আসেন দুজনেই। তবে কেউ নিজেদের সংসারে ফিরে যান নি। জঙ্গলের ধারে একটি ছোট্ট ঝুপড়ি তৈরি করে তাঁরা লিভ ইন সম্পর্কে বসবাস করতে শুরু করেন। কয়েক বছর সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু বছর দেড়েক আগে থেকে দুজনের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। প্রায়ই মারধর করত তরুন প্রেমিকা পবিত্রাকে। এই ব্যাপারে এঁদের প্রতিবেশী সুহানি সিং জানালেন মাস খানেক আগে অসুস্থ পবিত্রাকে গ্ৰামবাসীরা নিজেদের খরচে অ্যাম্বুলেন্স এনে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায়।
কিছুদিন পরেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই তরুন প্রেমিকা পবিত্রাকে হাসাপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। তারপরেও তাঁকে রেহাই দেওয়া হয় নি। ওই অসুস্থ শরীরে মারধর করত তরুন। এরকমই অভিযোগ এই মহিলার। আর এই মারধর করেই খুন করা হয়েছে পবিত্রাকে এরকমই ধারনা এই মহিলা সহ সকলের। এদিকে তরুনের প্রথম পক্ষের স্ত্রী সন্ধ্যা সিং বললেন ” আমাদের সঙ্গে ১০ বছর ধরে কোনও সম্পর্ক নেই। কি হয়েছে জানতে চাই না।” আর বাবা শত্রুঘ্ন সিং বললেন ” যদি সে খুন করে থাকে শাস্তি পাবে। বলার কিছু নেই। ওর ব্যাপারে আমাদের কোনও আগ্ৰহ নেই।” তবে পবিত্রার বাড়ির কাউকে পাওয়া যায় নি। গ্ৰামবাসীরা জানালেন ওর স্বামী দুই সন্তানকে নিয়ে এখন পুরুলিয়াতে থাকেন। তরুণ অবশ্য দাবি করেছেন খুন নয়, পবিত্রা অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পরই তিনি দেহ পুঁতে দেন।