![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220304-WA0010-1.jpg)
নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর পুরসভার ৩৫ টি আসনের মধ্যে মাত্র ২টি ওয়ার্ডে জিতেছেন বামদলের প্রার্থীরা। কিন্তু সেই দুটি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ওয়ার্ডের ব্যবধান রীতিমতো তাক লাগানোর মত। মনে করা হচ্ছে রাজ্যে সদ্য অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ১০৮ টি পুরসভার ২২৭৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে হারজিতের ব্যবধানের সর্বাধিক রেকর্ডটি খড়গপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই এসেছে এবং সেই সর্বাধিক ব্যবধানের জয় পেয়েছেন খড়গপুর শহরের ডাকসাইটে সুন্দরী গৃহবধূ নার্গিস পারভীন। ৩৮ বছর বয়সী পারভীন তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃনমূল কংগ্রেসের মমতাজ কুদ্দুসিকে পরাজিত করেছেন ৫২১৭ ভোটে। উল্লেখ্য রাজ্য জুড়ে ২২৭৪টি আসনে জয়ের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন প্রায় ৮ হাজার প্রার্থী।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220305-WA0023-1.jpg)
উল্লেখ্য ২৭শে ফেব্রুয়ারি ওই ১০৮টি পুরসভার ভোট গ্রহণ হয়েছিল যার ফলাফল ঘোষণা হয় ২রা মার্চ। ভোট গণনার দিন ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় বারংবার উঠে আসছিল বেশি ব্যবধানে জয় পাওয়া প্রার্থীদের মুখ। সেদিন বেশি ব্যবধানে জয়ী যে সমস্ত প্রার্থীর নাম একাধিকবার টিভির পর্দায় ভেসে উঠছিল তাঁর মধ্যে ছিলেন তৃনমূল বিধায়ক মদন মিত্রের পুত্রবধূ মেঘনা মিত্রের নাম। জানা গেছে কামারহাটি পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী মেঘনা তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৪৫৭০ ভোটে পরাজিত করেছেন। খুব সম্ভবতঃ কলকাতা লাগোয়া বলেই মিডিয়ার কাছে গিয়ে পৌঁছায়নি নার্গিসের নাম। আরও একটা সম্ভাব্য কারণ হল বাম এলার্জিতে ভোগা মিডিয়া হয়ত ইচ্ছা করেই এড়িয়ে গেছিল নার্গিসের নাম অথবা মফঃস্বল বলেই উপেক্ষিতা হয়েছেন তিনি। না’হলে সম্ভাব্য সর্বাধিক ব্যবধানে জয়ী নার্গিসের প্রতি এমন সতীনসুলভ বৈরীতার কারন কী?
যাইহোক শুধুমাত্র সর্বাধিক ব্যবধানই নয়, সম্ভবতঃ ভোট প্রাপ্তির শতাংশ হারের নিরীখেও রাজ্যের বিরোধী যে সমস্ত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন তাঁদের মধ্যেও রেকর্ড হয়ে থাকতে পারে নার্গিসের। খড়গপুর পুরসভার ওই ওয়ার্ডে মোট ভোট পড়েছিল বা বৈধ ভোটের পরিমান ছিল 9861 যার মধ্যে নার্গিস পেয়েছেন 7473টি ভোট।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/03/Screenshot_20220304-133253_Facebook.jpg)
অর্থাৎ নার্গিস প্রদত্ত ভোটের প্রায় 76% ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃনমূল কংগ্রেসের মমতাজ কুদ্দুসি 2256টি ভোট পেয়েছেন যা কিনা প্রদত্ত ভোটের মাত্র 23% ! এই ওয়ার্ডে ত্রিমুখী লড়াই হয়েছিল যেখানে তৃতীয় প্রার্থী খড়কুটোর মতই উড়ে গিয়েছেন।
তিন কন্যার মা নার্গিসের বাপের বাড়ি হাওড়া জেলার বাকড়া এলাকায়। গ্রাজুয়েশন করার পর দেড়দশক আগে তাঁর বিয়ে হয়ে খড়গপুর শহরের পাঁচবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা সেক সাইজাদের সঙ্গে। সাইজাদ একজন বড় মাপের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী। শহরের গোলবাজার এলাকায় পেঁয়াজের সর্বভারতীয় কারবারিদের মধ্যে একজন হলেন সাইজাদ যাঁর ওই বাজারেই আড়ত রয়েছে। একসময়ের তৃনমূল কংগ্রেস সমর্থক সাইজাদ ২০০৫ সালে তৃনমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এই ওয়ার্ড থেকেই কিন্তু বামপন্থার দুর্গ এই এলাকা থেকে জয়ী হতে পারেননি তিনি। ২০১০ সালে এই আসন থেকে তৃনমূলেরই হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন খোদ নার্গিস কিন্তু সেবারও লালঝান্ডার কাছে পরাজয় হয়ে নার্গিসের। প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন সাইজাদ ও নার্গিসের বিরোধী পক্ষে থাকা মমতাজ কুদ্দুসি কিংবা তাঁর স্বামী সেক হানিফ।
২০১৫ সালে এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন সিপিআই প্রার্থী সেক হানিফ। সেবার অবশ্য সাইজাদ বা নার্গিসকে টিকিট দেয়নি তৃনমুল। ভোটে জেতার পর সেক হানিফ তৃনমূল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং খড়গপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পদে চলে আসেন। সেই সময় থেকেই ক্ষোভে ফুটতে থাকেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বামমনোভাবাপন্ন ভোটাররা। তৈরি হতে থাকেন হানিফকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে। ২০১৯ সালে সেক সাইজাদ সিপিআইয়ে যোগ দেন। এবার আসনটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় সাইজাদ ফের নার্গিসকেই এগিয়ে দেন লড়াইয়ে। আর তারপরই ইতিহাস!