নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রায় ১০ঘন্টা বেঁধে রাখা হল এক গৃহবধূ ও তাঁর সঙ্গে পরকীয়ায় অভিযুক্ত প্রেমিক যুবককে। চলল মারধর, ভিডিও করা ও কুৎসিত গালাগালি কিন্তু জানতেই পারলনা পুলিশ। শনিবার সকালে সেই ভিডিও ভাইরাল হতেই টনক নড়ে পুলিশের। দ্রুত ছুটে গিয়ে ওই দুজনকে উদ্ধার করে পুলিশ। আইন হাতে তুলে নিয়ে মোড়লির আরেক লজ্জ্বাকর নিদর্শন হয়ে রইল পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা থানা এলাকার একটি গ্রাম। দুজনকে উদ্ধার করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করানোর পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। যদিও এই ঘটনায় এখনও অবধি কেউ গ্রেফতার হয়নি। এই মারধরের ঘটনায় গ্রামের কিছু মহিলাও যুক্ত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ঘটনা চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের মনোহরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুলদহ গ্রামে। ওই গ্রামের এক ব্যক্তি স্বর্ণশিল্পী হওয়ার সুবাদে ভিনরাজ্যে থাকেন। তাঁরই স্ত্রীর সাথে নাকি মনোহরপুর গ্রামের এক যুবকের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে এমনই অভিযোগ কুলদহ গ্রামের মোড়লদের। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই যুবক কুলদহ গ্রামে ওই গৃহবধূর বাড়িতে আসা মাত্রই পাকড়াও করা হয় তাকে। বাড়ি থেকে বের করে আনা হয় গৃহবধূকেও। এরপরই গ্রাম্য মাতব্বরদের নিদান, দুজনকেই খুঁটিতে বাঁধা হোক। তারপরই অতি উৎসাহীর দল দুজনকে একটি বিদ্যুৎস্তম্ভে বেঁধে ফেলে। চলে মারধর, কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি আর গালিগালাজ। চলে ভিডিও করা, ছবি তোলা। রাতের মধ্যেই মানুষের মোবাইলে মোবাইলে ভাইরাল হয় ভিডিও। জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। দুই যুবক যুবতীকে ঘিরে রাত জাগে মোড়লের দল ও জনতা। যুবককে যেমন পুরুষরা মারধর করেছে তেমনই গৃহবধূকে মারধর করেন মহিলারা।
একদলের আবার দাবি দুজনকে নাকি আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গেছিল যদিও গ্রামেরই আরেকদল জানিয়েছেন, কোনও আপত্তি রকম অবস্থাতেই ছিলনা ওই দুজন, তার সুযোগও ছিলনা কারন কিছু উৎসাহী মানুষ বহুদিন ধরেই তক্কে তক্কে ছিলেন তাঁদের মধ্যে আবার কেউ কেউ গৃহবধূকে আগে প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁদেরই উৎসাহ ছিল বেশি। ফলে যুবক গৃহবধূর বাড়িতে ঢোকামাত্রই ঘিরে ফেলা হয় তাকে। তারপর চলে রাতভর শারীরিক ও মানসিক অকথ্য অত্যাচার। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সূর্যকান্ত দোলাই জানিয়েছেন, ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই, পুলিশকে বলা হয়েছে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে ঘটনার সময় কী করছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য?
গোটা ঘটনায় বিভিন্ন মহলে যেমন নিন্দার ঝড় উঠেছে তেমনি শাসকদলের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কেন পঞ্চায়েত সদস্য রাতারাতি পুলিশকে খবর দিলনা? ওই বেঁধে রাখা ও মারধরের পেছনে কী ভূমিকা ছিল তৃনমূল কর্মী সমর্থকদের? সিভিক পুলিশ কোথায় ছিল? ইত্যাদি প্রশ্ন উঠছে। কারও মারফৎ থানায় খবর পৌঁছালে রাতেই উদ্ধার করা যেত ওই দুজনকে। কারা মোবাইলে এই ভিডিও ভাইরাল করল, কারা এই অত্যাচারের নিদান দিয়েছিল সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক পুলিশ অধিকার। ওই আধিকারিক বলেন, ” কেউ যদি অন্যায় করেও থাকেন তবে তাঁর সাথে ওই বর্বরতা করা যায় নাকি? আমরা সিভিক পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ঘটনায় অংশ নেওয়া সব্বাইকেই খুঁজছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।”