নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের মধ্যযুগীয় বর্বরতার স্বাক্ষী রইল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানা এলাকা। পরকীয়ার অভিযোগ তুলে এক সন্তানের জননী গৃহবধূকে ব্যাপক মারধরের পর তাঁর চুল কেটে নিল গ্রামবাসীদের একটি অংশ। পুরো ঘটনাই ঘটেছে ওই গৃহবধূর স্বামী এবং নাবালিকা ও পরিবারের সামনেই। ঘটনায় মারাত্মকভাবে মানসিক অবসাদে ভুগছেন ওই গৃহবধূ। ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করেছে ৬ গ্রামবাসীকে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও ব্যক্তিদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে ঘাটাল শহর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দুরে অজগনগর গ্রামে। মাস দেড়েক আগে এই গ্রামে কীটনাশক পান করেন খোকন বরদোলাই নামে এক যুবক। কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় খোকনের। খোকনের পরিবারের অনুযোগ ছিল যে প্রতিবেশী এক গৃহবধূর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল খোকনের আর তারই জেরে আত্মহত্যা করেছে খোকন। যদিও এ নিয়ে কোনও অভিযোগ জানায়নি খোকনের পরিবার।
এদিকে ঘটনাচক্রে ওই সময় নিজের বাপের বাড়ি চলে গেছিলেন ওই গৃহবধূ। আজই, রবিবার ফিরে আসেন তিনি। এরপরই তাঁর ঘরে চড়াও হয় খোকনের পরিবারের সদস্য ও বেশ কিছু গ্রামবাসী। অভিযোগ গৃহবধূকে বাড়ির দাওয়া থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের একটি স্থানে এবং ব্যাপক মারধর, হেনস্থা করা হয়। তারপর তাঁর চুলও কেটে নেওয়া হয় কাঁচি দিয়ে। তাঁকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন তাঁর স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পরই থানায় অভিযোগ করেন গৃহবধূর স্বামী। তিনি জানান, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ওই যুবকের কোনও সম্পর্কই ছিলনা।
পুলিশ জানিয়েছে, যেভাবে ওই গৃহবধূ বাড়িতে ফেরার সাথে সাথে গ্রামবাসীদের একাংশ ওঁর ওপর চড়াও হয়েছে, মারধর করেছে তাতে পরিস্কার যে ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। তাছাড়া আগে থেকেই কাঁচিও জোগাড় করে রেখেছিল তারা। ওই গৃহবধূর বিরুদ্ধে আগে কোনও অভিযোগই জানায়নি মৃত খোকনের পরিবার। তা’হলে হঠাৎ করে এই ঘটনার কারন কী তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘাটাল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবাংশু ভৌমিক জানিয়েছেন, ‘এই বর্বরতা বরদাস্ত করা হবেনা। আমরা ৬ জনকে গ্রেফতার করেছি। বাকি কারা কারা এই মারধরে জড়িত তারও খোঁজ চলছে। ঘটনায় জড়িত কাউকেই রেহাই দেওয়া হবেনা।’