নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুরের ৩৫টি ওয়ার্ডের ৩টি ওয়ার্ড যেখানে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতীকের পাশাপাশি জয়ের জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আছেন নির্দল প্রার্থীরা। এই তিনটি ওয়ার্ড হল ১৯, ৩৫ এবং ৩০নম্বর ওয়ার্ড। ১৯ নম্বরে খোকা-খুকি প্রতীকে লড়াই করছেন সত্যদেও শর্মা, ৩০নম্বরে উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে কস্তুরী দাস এবং ৩৫নম্বর ওয়ার্ডে চশমা প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন জয়া পাল। ঘটনা চক্রে তিনটি আসনই আগের বার দখলে ছিল শাসকদলের আর এই তিন আসনেই এবার নাভি:শ্বাস উঠেছে শাসকদলের প্রার্থীদের। আসন ধরে রাখতে পারা যাবে কিনা তাই নিয়ে ভ্রু কুঁচকে গেছে শাসকদলের কর্মীদের। বলা যেতে পারে এরমধ্যে ১টি ওয়ার্ডে লড়াই প্রায় ছেড়ে দেওয়ার অবস্থায় শাসকদল। ১টি ওয়ার্ডে হাল ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টা চলছে আর অন্যটিতে এখনও মৃদু সম্ভবনা জিইয়ে রাখছেন কর্মীরা।
এরই মধ্যে অবাক করা কান্ডটি ঘটছে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে যেখানে প্রাক্তন কাউন্সিলর জয়া পাল লড়াই করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় রঙ নীল সাদা কম্বিনেশনে। এঁদের পতাকা থেকে দলীয় প্রার্থীর ফ্লেক্স, ব্যানার, ফেস্টুন সবই ওই নীল সাদায় মাখামাখি। দেখা যাচ্ছে এই চশমা প্রতীক সম্বলিত নীল সাদা পতাকা কমতে শুরু করেছে হঠাৎ। জয়া পালের কর্মীদের অভিযোগ, রাত দুটা আড়াইটার পর কেউ কেউ এই পতাকা খুলে তা লোপাট করে দিচ্ছে। কে বা কারা এটা করছে জানা যায়নি তবে কিছু পতাকার হদিস মিলেছে এমন জায়গায় যা থেকে স্পষ্ট একটা ধারণা করা যায় যে পতাকা কারা লোপাট করছে।
প্রার্থী জয়া পাল এক সময়ে জয়ী হয়েছিলেন ৩৩নম্বর ওয়ার্ড থেকে। পরে আসনটি সংরক্ষিত হওয়ায় ছেড়ে দিয়েছিলেন দলেরই এক কর্মীর স্ত্রী কবিতা দেবনাথকে। কিন্তু কবিতা পরাজিত হন। এবার ৩৩ নম্বর অসংরক্ষিত হওয়ায় তৃনমূল সেখানে প্রার্থী করেছে জহর পালকে। পাশাপাশি দল এবার মহিলা সংরক্ষিত ৩৫ নম্বরে ফের দাঁড় করিয়েছে কবিতা দেবনাথকে। পরাজিতা প্রার্থীকে মেনে নিতে পারেনি স্থানীয় তৃনমূলের একটি বড় অংশই। ওয়ার্ডের সভাপতি, মহিলা সভাপতি এবং যুব সভাপতি ও দলের বৃহত্তম অংশ প্রার্থী করেছে জয়া পালকেই। স্বভাবতই জয়া পাল দলীয় প্রতীক পাননি কিন্তু প্রচারে বেছে নিয়েছেন ‘দিদি’র ফেভারিট রঙ নীল সাদাকে। আর সেই নীল সাদা পতাকা কমায় যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী জয়া পালের বক্তব্য, ‘ লড়াইয়ের শুরুতে একটা তো আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমার শ্বশুরমশাইয়ের সাজানো ওয়ার্ড আমাকে ফেরাবেনা। এখন সেই আত্মবিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়ে গেল। যত আমার জেতার সম্ভবনা প্রবল হচ্ছে ততই ভয় পাচ্ছে ওরা আর তাই পতাকা সরাচ্ছে। কিন্তু ওই পতাকা এখন মানুষের মনে বসে গেছে ওখান থেকে তাকে সরাবে কী করে?’
জয়া পালের কর্মীরাও যথেষ্টই আত্মবিশ্বাসী লড়াইয়ের শেষ বেলায়। এক কর্মীর কথায়, দল ওদের হাতে দলের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল কিন্ত ওরা সেটাও পারেনি। মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ তালবাগিচায় প্রচার করার সময় আমরা দেখতে পাই যে আমাদের প্রাক্তন কাউন্সিলর জহরলাল পালের তৈরি করা একটি দলীয় কার্যালয়ে ঝুলছে বিজেপির ফ্ল্যাগ। আমরা অবাক দেখলাম নব্য তৃণমূলীদের কোনও প্রতিবাদ নেই। এতেই পরিস্কার হয়ে গেছে কাদের সঙ্গে কাদের আঁতাত চলছে। আমরা চিৎকার চেঁচামেচি করার পর ওদের ঘুমভাঙে। সরানো হয় বিজেপির পতাকা। এলাকার মানুষের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে আসলে কে দিদির সঙ্গে আছে আর কে ছুরি মারছে পেছন থেকে। মানুষের এই মনোভাব স্পষ্ট হতেই ভয় পাচ্ছে ওরা তাই আমাদের নীল সাদা পতাকা হাপিস করছে।
জয়া পালের লোপাট হয়ে যাওয়া কিছু নীল সাদা পতাকার হদিস মিলেছে তালবাগিচা বাজারের একসময়ের ভাঙা যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের ছাদের ওপর। পতাকার লাঠিগুলি ভেঙে মুচড়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। কর্মীরা বলছেন, ‘স্থানের দিক থেকেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি। একটা সম্ভাব্য আভাস পাওয়া যায় যে কোন বাহাদুরের দল এটি করেছে। সেই ছবি সংগ্ৰহ করে পাঠানো হয়েছে যথাযথ জায়গায়। বাকি ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হবে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তালবাগিচার মানুষ এমনিতেই জেনে গেছেন এরা কারা। এই ছবি আরও ভালো করে জানিয়ে দেবে।’