নরেশ জানা: ডিসেম্বরে প্রথম দফার ক্যাম্পাসিংয়ে আইআইটি খড়গপু্রের এক পড়ুয়া পেয়েছেন বছরে ২.৬ কোটি টাকা বেতনের চাকরি যা কিনা মাসিক ১২ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিদেশে চাকরির অফার পেয়েছেন ৪৫ জন আর দেশ বিদেশ মিলিয়ে ১৬০০ জনের বেশি। সেই আইআইটি খড়গপু্র থেকে পাশ করে কেউ মিস্ত্রির চাকরিও পায়?
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/12/Screenshot_20221224-215253_Chrome-1.jpg)
যিনি কিনা এখন নিজেকে শুধু একজন মালি বলেই পরিচয় দেন? অবাক হতে হয় আরও যখন সেই মালিকেই আবার খড়গপু্র আইআইটি কর্তৃপক্ষ তাঁদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে (68th Convocation) প্রধান অতিথি হিসেবে নিয়ে আসেন। অবাক তো হয়েছিলেন স্বয়ং মালি নিজেও।
শনিবার আইআইটি খড়গপু্রে দীক্ষান্ত ভাষনে (Convocation Speech) বনসাই সম্রাট পিটার চ্যান (Peter Chan) বলেন, ” অক্টোবর মাসে যখন আইআইটি খড়গপু্রের ডিরেক্টর অধ্যাপক বীরেন্দ্র কুমার তেওয়ারি আমার কাছে এই প্রস্তাব নিয়ে আসেন আমি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম আপনি কী বিষয়টি নিয়ে সত্যি নিশ্চিত যে আমার মত একজন মালিকে আপনারাই চিফ গেস্ট হিসাবে চাইছেন?”
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/12/Screenshot_20221224-215039_Google.jpg)
পিটার চ্যানের প্রতিটি কথায় তখন হাত তালির ঝড় ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে। ১৯৬২ সালে আইআইটি খড়গপু্র থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি.টেক করেন পিটার চ্যান। চ্যান বলছেন,” পরের ১৮ মাস আমি চাকরি পাইনি কারন তখন চীন ভারত সীমান্ত সঙ্ঘাত শুরু হয়েছে।” চ্যানের জন্ম চীনে কিন্তু গ্র্যাজুয়েশন ভারতে। ফলে না ভারত না চীন কেউই চাকরি দেয়নি তাঁকে।
এরপর চ্যান ইংল্যান্ডে চলে যান। ১৯৬৩ সালে চ্যান ইংল্যান্ডে গেলেন কিন্তু সেখানে কেউ তাঁকে ইঞ্জিনিয়ার বলে মানতেই চায়না কারন আইআইটি শব্দটার মধ্যে কোথাও বিশ্ববিদ্যালয় কথাটা লেখা নেই। যেন আইআইটি আর আইটিআই একই জিনিস। চাকরি জুটল সামান্য একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রির। তাঁর পরিচয় করাতে গিয়ে আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপিকা রিন্টু ব্যানার্জী বলেন, ” ১৯৬৭ সালে চ্যান শুরু করেন তাঁর শখের বনসাই আর এখন তিনি বিশ্বের সেরা বনসাই ব্যবসায়ী। সারা পৃথিবী তাঁকে চেনে বনসাই সম্রাট হিসাবে। তিনি এমন একজন ব্যাক্তি যিনি আইআইটি প্রাক্তনী হয়েও একটি ব্যতিক্রমী কাজের জায়গা বেছে নিয়েছেন এবং সেখানে তিনি সেরা। তিনি হিরনস বনসাই ( Herons Bonsai Limited) কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ একজিকিউটিভ অফিসার বনসাই নিয়ে তাঁর লেখা বই আর্ট অফ গ্রোয়িং এন্ড কিপিং মিনিয়েচার ট্রিজ ( The Art of Growing and Keeping Miniature Trees)১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়। যা এখনও বনসাইয়ের ওপর বেস্ট সেলার।”
তাঁর দ্য জাপানিজ গার্ডেন (The Japanese Girdein) গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বেস্ট সেলার। বিশ্বের বৃহত্তম বনসাই বাগানটি তাঁর যার আয়তন ৭.৫ একর। নার্সারিকেই তিনি পেশা করছেন। অথচ পরবর্তীকালে তিনি যুক্তরাজ্যের বিদ্যুৎ বিষয়ক পরামর্শদাতা এবং ২০ বছর ধরে তিনি যুক্তরাজ্যকে পরামর্শ দিয়েছেন। পিটার চ্যানকে একই সাথে যুক্তরাজ্য বা ইংল্যান্ডের নিউক্লিয়ার পাওয়ারের জন্য পরামর্শ দাতা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। ৮২ বছর বয়সী পিটার চ্যান আইআইটি ছাত্রদের তিনটি পরামর্শ দিয়েছেন, সেরা হওয়ার দৌড় নয় নিজেকে উত্তম থেকে উত্তমতর করে গড়ে তুলতে হবে, জীবনে সমস্যা থাকবেই এবং সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে তুমি পারবেই, গাড়ি বাড়ি ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নয় মানুষকে সাহায্য ও উদ্বুদ্ধ করতে পারাটাই মানুষের সফলতার মাপকাঠি। তিনি বলেন, পরিশ্রম, পরিশ্রম এবং পরিশ্রমই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।