নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে একটি ১০শয্যার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (ICU) ওয়ার্ড চালু হল ওই হাসপাতালে। বুধবার ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে এটাই স্বান্তনা হয়ে রইল খড়গপুর মহকুমার জন্য। স্বান্তনা এটাই যে আইসিইউ-র প্রয়োজনে যাঁদের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করতে হত তাঁদের হয়ত আর মেদিনীপুরে পাঠাতে হবেনা। এই আইসিইউ ওয়ার্ডের উদ্বোধন করতে এসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসক রশ্মি কোমল জানিয়েছেন, ‘খড়গপুর শহর ছাড়াও এই মহকুমার ১০টি ব্লকের বাসিন্দারা এই আইসিইউ-র সুযোগ নিতে পারবেন। “জেলাশাসক আরও বলেন, ‘খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে আইসিইউ বেড না থাকায় রুগীদের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠাতে হত। এরফলে রুগীদের যেমন অসুবিধা হত তেমনই চাপ পড়ছিল মেডিক্যাল কলেজের ওপর। এবার দুই পক্ষই সুবিধা লাভ করবে। বরং এখানে আইসিইউ বেড খালি থাকলে আমরা মেদিনীপুর মেডিক্যালের আইসিইউ সঙ্কট থাকলে ওখান থেকে রুগীকে এখানে পাঠাতে পারব।”
খড়গপুরের মহকুমা শাসক আজমল হোসেন বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে খড়গপুরে এসে জানিয়ে গেছিলেন যে এখানে আইসিইউ চালু হবে। সেই মত সরকার টাকাও বরাদ্দ করেছিল। আমাদের কাজ শুরু হয়ে গেছিল। আজ থেকে আইসিইউ চালু হয়ে গেল। রোগী আসলে এবং তাঁর প্রয়োজন হলে আইসিইউতে ভর্তি করে নেওয়া যাবে।’ হোসেন আরও জানিয়েছেন, আইসিইউর জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স বরাদ্দ করা হয়েছে।’
মহকুমা শাসক আরও জানিয়েছেন প্রাথমিকভাবে ১০শয্যা দিয়েই শুরু হচ্ছে। এরপর ধাপে ধাপে শয্যার সংখ্যা বাড়বে। অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশন সুবিধা যুক্ত একটি পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ ইউনিটের যা যা সুবিধা সমস্তটাই পাওয়া যাবে এই ওয়ার্ড থেকে।
৭৩ তম প্রজাতন্ত্রের এই মহতি সরকারি অনুষ্ঠানেও দলতন্ত্রের কালি লেগেছে। যেখানে মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়াকে দেখা গিয়েছে সেখানে আমন্ত্রিত হননি খড়গপুর শহর বিধায়ক অভিনেতা হিরন চট্টোপাধ্যায়। খড়গপুর শহর বিধানসভায় পরাজিত হয়েও দলীয় সুপারিশে পুর প্রশাসক হওয়ার সুবাদে যথারীতি অনুষ্ঠানের মধ্যমনি হয়ে জায়গা করে নিয়েছেন প্রদীপ সরকার। হাজির ছিলেন পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যাক্ষ নির্মল ঘোষ। তৃনমূল কংগ্রেসের খড়গপুর শহর সভাপতি দীপেন্দু ঘোষ প্রমূখরা। কেন বিধায়ককে আমন্ত্রণ করা হয়নি এর জবাব দিতে গিয়ে প্রদীপ সরকার বলেছেন, কে হিরন চট্টোপাধ্যায়? তিনি কোন দলের? জবাব দিতে গিয়ে হিরন আবার প্রদীপ সরকারকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বখাটে’ সন্তান বলে ব্যঙ্গ করেছেন।
অন্যদিকে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধাকে অনেকেই নাকের বদলে নরুন পাওয়া বলে কটাক্ষ করেছেন। আইসিইউ ওয়ার্ডটি যেখানে তৈরি হয়েছে তার বিপরীত মুখেই রয়েছে ১দশক ধরে পড়ে থাকা চালু না হওয়া ট্রমা ইউনিটটি। খড়গপুর শহরের পূর্ব-পশ্চিমে মুম্বইগামী ৬ নম্বর এবং উত্তর-দক্ষিণে রয়েছে ওড়িশাগামী ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। আর রয়েছে বিস্তৃত রেলপথ। ফলে হামেশাই দুর্ঘটনা ঘটে। সে কথা মাথায় রেখে খড়্গপুরে ট্রমা ইউনিট খোলার সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্র সেই সময় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করে। মূল্যবান যন্ত্রাংশ কেনা হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার ট্রমা ইউনিটের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী বরাদ্দ করতে না পারায় ট্রমা ইউনিট চালু করা যায়নি। মাইনর ও মেজর অপারেশন কক্ষ সহ পড়ে পড়ে মান হারাচ্ছে মহা মূল্যবান যন্ত্রাংশ। বিরোধীদের কটাক্ষ পুরসভা ভোটের আগে আইসিইউ হয়েছে এই ঢের।