নিজস্ব সংবাদদাতা: দাসপুরে এক ব্যক্তি খুনের রহস্যের কিনারা করল পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ আর রহস্যের উদঘাটন করতে গিয়ে পুলিশের সামনে উন্মোচিত হল খুনের এক অদ্ভুত মোটিভ। জানা গেল ওই ব্যক্তিকে খুন করেছে এক বিধবা গৃহবধূর একমাত্র তরুণ সন্তানই।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/05/IMG-20220516-WA0000.jpg)
পুলিশ আরও জানতে পেরেছে মায়ের সাথে এক অন্তরঙ্গ মুহুর্তে ওই ব্যক্তিকে দেখে ফেলেছিল বছর ঊনিশের ওই তরুণটি আর তারপরই মায়ের প্রেমিককে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। গ্রেফতার হওয়ার পর শুধু পুলিশের কাছেই নয়, সাংবাদিকদেরও নিজের সেই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কথা অকপট স্বীকারোক্তিতে জানিয়ে দিল তরুণ। যা শুনে হতবাক সবাই। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার অন্তর্গত কিসমত নাড়াজোল গ্রামের।
উল্লেখ্য রবিবার সকালে কিসমৎ নাড়াজোল গ্রামের একটি পুকুরের পাড় থেকে প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার হয় ৬২ বছরের অসিত মাইতির আহত, রক্তাক্ত দেহ। শনিবার রাত থেকেই নিখোঁজ ছিলেন অসিত মাইতি। রবিবার তাঁকে উদ্ধারের পরই তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার একটি হাসপাতালে। চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর কিন্তু চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে রবিবার বিকালেই মৃত্যু হয় তাঁর। অসিতকে উদ্ধারের পর তার শারীরিক অবস্থা দেখে খটকা লাগে পুলিশের। পুকুরপাড়ের যে জায়গায় অসিতকে পাওয়া গিয়েছিল সেখান দিয়ে একটি যাতায়াতের স্থানীয় পথ থাকলেও অসিত যে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছেন এমনটা মনে হয়নি পুলিশের। বরং পুলিশের শুরু থেকেই মনে হয় কেউ অসিতকে খুনের চেষ্টা করেছিল।
ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নিশ্বর চৌধুরী বলেন, “অসিত মাইতির মাথায় ও মুখে গুরুতর চোট ছিল। সেই আঘাতের প্রকার ও চিহ্ন স্পষ্ট বলে দিচ্ছিল তাকে ভারী, ভোঁতা শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এটাও বোঝা যাচ্ছিল যে এই আঘাতের উদ্দেশ্য ছিল অসিত মাইতিকে প্রাণে মেরে ফেলার।” শুরু থেকেই পুলিশ খুনের মোটিভ খুঁজছিল কিন্তু রবিবার বিকালে অসিতের মৃত্যুর খবর আসার সাথে সাথেই তদন্ত জোরালো করে পুলিশ। গ্রামের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে গিয়ে উঠে আসে
ওই পাড়ারই তুফান গিরি নামে এক তরুনের নাম। পুলিশ এও জানতে পারে যে নিহত অসিত মাইতির সঙ্গে তুফানের মায়ের একটি ‘সম্পর্ক’ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ তুফানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তার বাড়িতে যায় কিন্তু দেখা যায় রবিবারই বেলার দিকে গ্রাম ছেড়েছে তুফান। পুলিশের সন্দেহ আরও গাঢ় হয়।
পুলিশ এবার তুফানের মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে পশ্চিম মেদিনীপুরেরই পিংলা থানার মালিগ্রামে এক আত্মীয়বাড়িতে গিয়েছে তুফান। পিংলা পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি দাসপুর থানার পুলিশ রওনা দেয় মালিগ্রামের উদ্দেশ্যে। মালিগ্রামের ওই আত্মীয় বাড়িতে হদিসও মেলে তুফানের। তাকে নিয়ে আসা হয় দাসপুরে। সামান্য জিজ্ঞাসাবাদের পরই তুফান জানিয়ে দেয় যে সেই খুন করেছে অসিতকে। তুফান এও জানায় যে, মায়ের সঙ্গে অসিতকে একটি অন্তরঙ্গ মুহূর্তে দেখার পরই মাথায় খুন চেপে গিয়েছিল তার। এরপরই সে অসিতকে দুনিয়া থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সুযোগ মিলে যায় শনিবার রাতে যখন অসিত গোপন অভিসারে আসছিল পুকুরপাড়ের সেই হাঁটা রাস্তা ধরে। শুধু পুলিশ নয়, গ্রেফতার হওয়ার পরও বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত না হওয়া ওই তরুণ সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনেও স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে মায়ের সাথে অসিত মাইতির অবৈধ সম্পর্ক সহ্য করতে না পেরেই তাকে রাতের অন্ধকারে মেরেছে।
জানা গেছে ১৯ বছরের তুফানের বাবা প্রেম গিরি বেশ কয়েকবছর আগেই মারা গেছেন। সংসারের ভার সামলাতে সোনার কাজ শেখার জন্য কম বয়সেই তুফান পাড়ি দেয় ভিন রাজ্যে। কাজ শিখেও ছিল সে। আয় উপার্জন বাড়ছিল কিন্তু এরই মধ্যে হাজির হয় অতিমারি করোনা, শুরু হয় লকডাউন। ঘাটাল মহকুমার অর্ধলক্ষাধিক কারিগরের মতই তুফানকে কাজ হারিয়ে ফিরতে হয়। বাড়ি ফিরে আসার পর নাড়াজোলেই তামার গহনা তৈরির কাজে যুক্ত হয়ে যায় সে। ফলে আর ভিনরাজ্যে ফেরা হয়নি। ওদিকে ছেলে ভিন রাজ্যে চলে যাওয়ার পর তুফানের বিধবা মা একলাই থাকতেন। গ্রামের অসিত মাইতি নামের ওই ব্যক্তিটি বিবাহিত হলেও স্ত্রী-পরিবারের সঙ্গে না থেকে আলাদাভাবে নিজের মত থাকতেন। তুফানের মা যখন অথৈ জলে তখন সাহায্য সহযোগিতা করতেন অসিত। এভাবেই পারস্পরিক নির্ভরশীলতা থেকেই একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। বিষয়টি গ্রামের মানুষের একটি অংশ জানতও। তুফান ফিরে আসার পর সেই সম্পর্ককে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন দুজনেই কিন্তু জৈবিক প্রবৃত্তিকে ঠেকিয়ে রাখা দুষ্কর আর সেটাই কাল হল অসিতের জীবনে। সোমবারই ঘাটাল মহকুমা আদালতে পেশ করা হয় তুফানকে।