নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলার নবজাগরণ ও শিক্ষা আন্দোলনের পাশাপাশি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সহিংস বিপ্লবের জনক ঋষি রাজনারায়ন বসুর ব্যবহৃত একটি ঐতিহ্যমন্ডিত আবাসনের দখল নিয়ে প্রকাশ্য লড়াইয়ে মেতে উঠতে দেখা গেল মেদিনীপুর শহরের দুটি গর্বের প্রতিষ্ঠান মেদিনীপুর কলেজ ও মেদিনীপুর কলেজিয়েট বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মধ্যে। মেদিনীপুর কলেজের প্রিন্সিপালের আবাসন বলে পরিচিত ওই ঐতিহ্যমন্ডিত ভবনটি কার দখলে থাকবে এই নিয়ে রীতিমত রাস্তায় নামলেন পড়ুয়ারা।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/08/IMG-20220802-WA0024.jpg)
যদিও এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে এবং সেই অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধেই। গোটা ঘটনায় তোলপাড় মেদিনীপুর শহর। দীর্ঘক্ষনের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে গোলকুয়া চক থেকে রাজাবাজার যাওয়ার রাস্তা কারন এই রাস্তার ওপরই অবস্থিত কলেজ এবং কলেজিয়েট বিদ্যালয়। আর রাস্তা জুড়ে বসে রয়েছেন পড়ুয়ারা।
এই বিরোধের সূত্রপাত ২০১৪ সাল থেকেই। দুটি প্রতিষ্ঠান একদা অভিন্ন থাকলেও পরে ভাগ হয়ে একটি কলেজ ও অপরটি বিদ্যালয়ের অংশ হয়। দুটি আলাদা কর্তৃপক্ষ। দুটি প্রতিষ্ঠান আলাদা হয়ে গেলেও অতীতে রাজনারায়ন বসু ব্যবহৃৎ ও বর্তমানে দলিলে মেদিনীপুর কলেজ প্রিন্সিপালের আবাসন বলে চিহ্নিত ওই ঐতিহ্যমন্ডিত আবাসনটি কলেজিয়েট স্কুলের প্রাঙ্গনে অবস্থিত।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/08/IMG-20220802-WA0020.jpg)
২০১৪ সাল অবধি মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ এই আবাসনটি ব্যবহার করলেও প্রায় ২০০বছরের বাড়িটি সংস্কারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তাই ২০১৪ সালে জরাজীর্ণ বাড়িটি ত্যাগ করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ। এরপর থেকেই যেহেতু তাঁদের প্রাঙ্গনে আবাসনটি অবস্থিত তাই সেটি নিজেদের বলে দাবি করতে থাকেন কলেজিয়েট স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারপরই থমকে যায় বাড়িটির সংস্কারের কাজ। মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষ অতঃপর আদালতের দ্বারস্থ হন।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/08/IMG-20220802-WA0021.jpg)
সম্প্রতি আদালত একটি রায় দিয়ে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ওই আবাসনটি মেদিনীপুর কলেজের সম্পত্তি এবং তাঁরাই ওই ভবনের সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের অধিকারী। আদালতের রায় হাতে পাওয়ার পরই সোমবার কলেজ কর্তৃপক্ষ ভবনটির সংস্কারের জন্য একটি পরিকল্পনার প্রয়োজনে ভবনটি পরিদর্শনে যাওয়ার উদ্যোগ নেয় কিন্তু অভিযোগ কলেজিয়েট স্কুলের তৃনমূল মনোভাবাপন্ন এক শিক্ষক এর বিরোধিতা করতে শুরু করেন। মঙ্গলবার ফের মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের এনএসএস প্রকল্পের আওতায় থাকা কিছু পড়ুয়াকে পাঠান ভবনটি পরিষ্কার করার জন্য। সেই পড়ুয়ারা ভবনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এবার ওই শিক্ষকই সরাসরি নিজেদের স্কুলের পড়ুয়াদের এই বলে প্ররোচিত করতে থাকেন যে তাঁদের স্কুলের অংশ জোর করে দখল নিতে এসেছে মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষ। আদালতের রায় ও প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে ওই শিক্ষকের প্ররোচনায় শত শত কচিকাঁচা পড়ুয়াকে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়। বাধা দেওয়া হয় কলেজের পাঠানো পড়ুয়াদের। শুরু হয় সংঘর্ষের পরিবেশ।
অভিযোগ এরপরেও পড়ুয়াদের শান্ত করার পরিবর্তে স্কুলের ওই শিক্ষকরা সংঘর্ষে প্ররোচিত করেন নিজেদের পড়ুয়াদের। পঠনপাঠন এমনকি প্র্যাকটিকেল পরীক্ষা বন্ধ রেখে রাস্তায় নামতে প্ররোচনা দেওয়া হয় উঁচু ক্লাশের পড়ুয়াদেরও। ঘিরে ফেলা হয় কলেজের পড়ুয়াদের। কলেজ পড়ুয়ারা ওখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বল প্ৰয়োগ করেন। শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ।
![](http://kgpbangla.in/wp-content/uploads/2022/08/IMG-20220802-WA0013.jpg)
সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া দুই প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের মধ্যে বেশ কয়েকজন স্কুল পড়ুয়া আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। কারও মাথা ফেটেছে, কারও হাত পায়ে জোরালো আঘাত। অন্ততঃ: ৮ স্কুল পড়ুয়াকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে চিকিৎসার জন্য। এদিকে প্রকৃত ঘটনার জানার পর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ কলেজিয়েট স্কুলের অভিভাবকরা। কেন তাঁদের ছেলেদের উস্কানি দিয়ে লেলিয়ে দেওয়া হল? সেই জবাব চাইতে ফুঁসছেন তাঁরা।