নিজস্ব সংবাদদাতা : কোন কলেজ সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফিজের বাইরে টাকা নেয়না? কাঁথি কলেজ কত নেয়, রামনগর কলেজ কত নেয়? তৃনমূল ছাত্রপরিষদ করবে অথচ ফিস্ট করবেনা এমন হয় নাকি? রাত অবধি কলেজের ইউনিয়ন খোলা না রাখলে ইউনিয়ন কাজ করবে কি করে? এক ছাত্রকে এরকমই সব ‘ফরম্যাল’ মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি জেলা তৃনমূলের সভাপতি তরুণ মাইতি। তরুণ বাবু আবার এগরা বিধানসভার বিধায়কও তার ওপর এগরা সারদা-শশীভূষণ কলেজের গভর্নিং বডির প্রেসডেন্ট। এ হেন ব্যক্তি যখন জেলার কলেজগুলির অতিরিক্ত টাকা নেওয়া অথবা কলেজের ইউনিয়ন রাত অবধি খোলা রাখার পক্ষে সাফাই দেন তখন যা হওয়ার তাই হয়েছে। আগুনের মত ভাইরাল হয়েছে সেই অডিও। যা শুনে বিরোধীরা বলছে তৃনমূল ছাত্রপরিষদ কলেজে কলেজে তোলাবাজির যে রাজ কায়েম করেছে এটা তারই একটা নমুনামাত্র।
তরুণ মাইতির এই অডিও ফাঁস আরও ব্যাপ্তি লাভ তাঁরই সংগঠনের আরও এক নেতার ফাঁস করে অন্য একটি অডিও। যেখানে আগে ফাঁস হওয়া কথোপকথনটি যে তাঁরই তার স্বীকৃতি মিলেছে। বিধায়ক অবশ্য বলেছেন, এই দুটি অডিওর কোনোটিই তাঁর অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট নয়। নেহাতই ফরম্যাল কথাবার্তাকে রেকর্ড করে ছড়ানো হয়েছে তাঁর ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য। তিনি আইনের দ্বারস্থ হবেন বিষয়টি নিয়ে কারন কারও বিনা অনুমতিতে তাঁর ফোনালাপ রেকর্ড করা দণ্ডনীয় অপরাধ। যাইহোক বিধায়ক আইনগত ব্যবস্থা নিন। জেনে নেওয়া যাক ফোনালাপগুলির সারমর্ম।
প্রথম যে ফোনালাপটি ফাঁস হয়েছে তাতে শোনা যাচ্ছে বিধায়কের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে এগরা সারদা শশীভূষণ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র শুভদীপ পণ্ডার সাথে। শুভদীপ বিধায়ক তথা নিজের কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে অভিযোগ করেন যে কলেজে রাত অবধি ইউনিয়ন রুম খোলা রেখে ফিস্ট করাটা কী সঙ্গত? প্রত্যুত্তরে বিধায়ক বলেন, ইউনিয়ন রাত অবধি খোলা থাকবে এটা নতুন কী? ইউনিয়ন রাত অবধি খোলা থাকবে, প্রত্যেকদিন ফিস্ট হবে এটা নর্মাল ব্যাপার। এসব প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর আমলেও হত বলে বিধায়ক জানান। বিধায়ক এরপর খানিকটা ক্ষুব্ধ হয়েই বলেন, ‘আসলে তোমারা ইউনিয়নে ঢুকতে পারছনা, সুযোগ পাচ্ছনা বলেই এসব অভিযোগ আনছ।’
প্রত্যুত্তরে শুভদীপ জানান, স্যার আমি এই দুর্নীতির জন্যই তৃনমূল ছাত্রপরিষদ করছিনা, ইউনিয়নে ঢোকার ইচ্ছাও নেই। কারন ওই ফিস্ট করা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিয়েই। কলেজে ভর্তি হতে গেলে নির্ধারিত ভর্তি-ফি’র বাইরেও কলেজের ছাত্র সংসদকে অতিরিক্ত ৫-৬ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্র। এরপরই কলেজ সভাপতি তথা বিধায়ক ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ছাত্রের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ কোন কলেজ ভর্তির জন্য পয়সা নেয় না। ভর্তি ফি বাদে কাঁথি কলেজ ৪০ হাজার নেয়। রামনগর কলেজ অনার্স দিতে ৭৫ হাজার নেয়।’ ফোনালাপের সেই অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর তরুণবাবুর এমন মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়।
জেলার কলেজ ছাত্র সংসদগুলি বর্তমানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালনা করে থাকে। স্বাভাবিকভাবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি, বিধায়ক এবং কলেজ গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যকে ঘিরে প্রশ্নের মুখে পড়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এগরা কলেজের ছাত্র সংসদের সদস্য রাহুল প্রধান এ ব্যাপারে কথা বলেন তরুণবাবুর সঙ্গে। রাহুল সরাসরি ফোন করেন বিধায়ককে। জানতে চান কেন এই ধরনের মন্তব্য করেছেন তিনি। ছাত্র নেতার সঙ্গে বিধায়কের প্রায় ৭ মিনিটের সেই ফোনালাপও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। যেখানে ওই মন্তব্যর জন্য বিধায়ককে রীতিমত ভর্ৎসনা করতে শোনা গেছে ওই ছাত্রনেতাকে। ফলে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েন তরুণবাবু।
কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি শতদল বেরা বলেন, ‘ কে কাকে ব্যক্তিগত ভাবে কী বলেছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করব না। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কলেজে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। এই ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ অন্যদিকে এসএফআই-র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক শেখ জাকির হোসেন মল্লিকবলেন, ‘ তাহলে বোঝাই যাচ্ছে ভর্তির নামে কিভাবে সিন্ডিকেট রাজ জাঁকিয়ে বসেছে রাজ্যের কলেজ গুলিতে। গরিব মেধাবী ছেলে মেয়েরা তৃনমূল ছাত্রপরিষদকে তোলা না দিলে ভর্তি হতে পারছেননা। আমরা বারবার অভিযোগ করে এসেছি, কলেজ ইউনিয়নগুলোর নির্বাচন না করে তৃণমূলের যে লোকাল নেতা-কর্মী তারা কলেজগুলিতে জাঁকিয়ে বসে আছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি কাম কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি এবং বিধায়কের একটা মন্তব্যে স্পষ্ট হল। এরপর আর শাক দিয়ে মাছ ঢেকে হবে কী?’