নিজস্ব সংবাদদাতা : ৫০ বছরের বস্তি উচ্ছেদ করে হোটেল সম্প্রসারন করার পরিকল্পনা করার অভিযোগ উঠল এক জন্য বস্তি দখলের চেষ্টা। হোটেল মালিকের সেই চক্রান্তের কথা টের পেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছিলেন বস্তিবাসী মানুষ। তাই শুরু বিভিন্ন ভাবে বস্তিবাসীকে হেনেস্থা করার প্রক্রিয়া। কখনও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কখনও আবার পানীয় জল সরবারহ বন্ধ করে বস্তিবাসীর জীবন অতিষ্ঠ করে তোলেন ওই হোটেল মালিক। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে নাকাল করা হয় ওই বস্তির একাধিক মানুষকে। শেষমেশ উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। শনিবার কয়েক’শ মানুষ জমায়েত হন
দিঘা থানার সামনে। এরপরই পুলিশ আটক করে হোটেল মালিক অরবিন্দ দে এবং তাঁর ছেলে ড্যানিয়েলকে।
বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন রামনগর ১ ব্লকের বিডিও বিষ্ণুপদ রায়। তিনি জানিয়ে দেন, হোটেল মালিকের এই ঔদ্ধত্য কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবেনা। ক্ষুব্ধ বস্তিবাসী মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের আশ্বস্ত করেন বিডিও। বলেন অভিযুক্ত হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। এই একই কথা জানিয়েছেন, রামনগর ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি নিতাইচরণ সার। তিনি বলেন, ‘ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা সমর্থনযোগ্য না। খুবই জঘন্যতম অপরাধ। বস্তির মানুষ পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন। আশা করি বস্তির অসহায় মানুষজন সুবিচার পাবেন।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ওই হোটেল মালিক নিজেই হোটেল সম্প্রসারণের জন্য উপকূল বিধি ভঙ্গ করেছেন। জানা গেছে, সমুদ্র থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে অবস্থানের জন্য বস্তি ও সংলগ্ন এলাকায় বহুতল নির্মাণ কিংবা হোটেল সম্প্রসারণের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে প্রশাসনের। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসক মানসকুমার মণ্ডল, ‘ ওই জায়গায় কোনও ধরণের নির্মাণ মানা হবে না। হোটেল সম্প্রসারণের কাজ হয়ে থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য অন্ততঃ ৫০ বছর ধরে ৪০ টি পরিবারের কয়েক প্রজন্মের বাস ওই বস্তিতে। জনসংখ্যা ৩০০ জনের কাছাকাছি। মানুষের বসবাস পশ্চিম গদাধরপুর বস্তিতে। একেবারে সমুদ্রের লাগোয়া এই বস্তির পিছনেই অরবিন্দ দে-র হোটেল। কিন্তু সামনের বস্তির জন্য লোকসানে চলছে কারবার। তাই হোটেল সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছেন তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, সে জন্য বস্তির ওপর নজর পড়েছে তার। বস্তির মালিকানা দাবি করে বস্তির দখল নিতে চাইছেন তিনি। কিন্তু স্থানীয় প্রতিরোধের কারণে এখনও পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠেনি বস্তি দখল। তবে চেষ্টা থেমে নেই হোটেল মালিকের।
স্থানীয় শেখ সিরাজুল, লক্ষ্মণ চরণ দাস, মালা দাস, হাসিনা বিবিরা বলেন, ‘ পুরুষের পর পুরুষ আমরা এখানে বসবাস করছি। এতদিন কিছু ছিল না। মাস দেড়েক ধরে নিজেকে বস্তির মালিক বলে দাবি করছেন ওই হোটেল মালিক। আমাদের বস্তি ছেড়ে দিতে বলা হচ্ছে। আমরা প্রতিরোধ করছি বলেই আমাদের নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।’ বস্তির মালিকানার বৈধ কোনও কাগজপত্র দেখাতে চাননি অরবিন্দ দে।শুধুমাত্র জনৈক আইনজীবীর একটি আইনি নোটিসকে পুঁজি করে এদিনও তিনি দাবি করেছেন, টাকা দিয়ে বস্তি কিনে নিয়েছেন তিনি। তিনিই বস্তির মালিক। এমনকি হুমকি দিয়ে বলেছেন, যে প্রতিরোধ করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। এরপরই সরব হয়ে ওঠেন বস্তিবাসী মানুষজন।