নিজস্ব সংবাদদতা: পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার পর এবার গড়বেতা এলাকায় ভয়াবহ গনধর্ষনের ঘটনা। এক নাবালিকা ছাত্রীকে বাড়ির পাশ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দলবদ্ধ ভাবে ধর্ষন করার ঘটনায় স্তম্ভিত এলাকার মানুষজন। ধর্ষনে মারাত্মক ভাবে জখম হওয়া ওই নাবালিকা বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এই ঘটনায় এক নাবালক সহ ৫ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই পুরো ঘটনার জন্য এলাকায় মদের রমরমা কারবারকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় জনতা। তাঁদের দাবি এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা চোলাই মদের কারবারের দরুন এলাকা জুড়ে যে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে তারই ফসল এই গন ধর্ষন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার
বিকালে যখন ১৩ বছরের ওই ছাত্রী বাড়ির পেছনে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছিল। ওই সময় নাবালিকার বাড়ির একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় বসে মদ্যপান করছিল কয়েকজন। তারাই নাবালিকার মুখে গামছা চাপা দিয়ে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় জঙ্গলের মধ্যে একটি পাথর খাদানে। তারপর সেখানেই একের পর একজন করে তাকে ধর্ষন করে। ঘন্টা খানেক ধরে এই ঘটনা চলার পর নাবালিকাকে ফেলে পালায় তারা। ঘটনার সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা বাড়িতে না থাকায় মেয়েটির অনুপস্থিতি প্রথমে টের পাওয়া যায়নি। পরে ওই নাবালিকা ঘরে ফিরে আসে কিন্তু অভিযোগ বিষয়টি ফাঁস করলে বিপদ হবে বলে ওই দুষ্কৃতীরা হুমকি দেওয়ায় মেয়েটি প্রথমে পরিবার কে কিছু জানায়নি। তাকে নাকি এমনও হুমকি দেওয়া হয় যে মুখ খুললে তাকে সহ তার বিধবা মা ও দাদা ভাইদের খুন করে পাথর চাপা দিয়ে দেওয়া হবে।
তবে শুক্রবার ভোর রাতে মেয়েটি মারত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। পোশাক রক্তে ভিজে যায়। এরপরই মায়ের সন্দেহ হয়। মায়ের চাপে সমস্ত কথা খুলে বলে মেয়ে। মা বিষয়টি স্থানীয়দের কাছে বললে কিছু মাতব্বর বিষয়টি চেপে যাওয়ার কথা বলে এবং এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেয়। ওই হাতুড়ে অবশ্য ঘটনার গুরুত্ব বুঝে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শুক্রবার দুপুরে গড়বেতা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তাকে মেদিনীপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়। অভিযোগ এই পুরো সময় শুক্রবার পরিবারটিকে নজরে রাখা হয় যার নেতৃত্বে ছিল এক মদভাটির মালিক লুলু মান্ডি।
ঘটনাটি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত গড়ালে পুলিশের নজরে আসে এবং পরিবারের অভিযোগের
ভিত্তিতে পুলিশ ওই গ্রামে তল্লাশি চালিয়ে লুলু মান্ডি সহ ৫জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ছাড়াও বরশা হাঁসদা, হপন মান্ডি, শ্রীমন্ত হেমব্রম নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হয় এক নাবালকও। ঘটনায় আরোও দুজন যুক্ত থাকার অভিযোগ।
ধৃতদের মধ্যে ৪ জনকে পেশ করা হয় মেদিনীপুর আদালতে। একজন নাবালক হওয়ার কারনে তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে পেশ করা হয়। ৪ জনের ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় মেদিনীপুর আদালত। স্থানীয়দের অভিযোগ লুলু মান্ডির সংগে এলাকার কিছু রাজনৈতিক নেতার দহরম মহরম আছে এবং তাকেই কাজে লাগিয়ে এলাকায় মদের রমরমা ব্যবসা চালায় সে।
উল্লেখ্য গত ২৩শে আগষ্ট ডেবরা থানার ভবানীপুর মৌজায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যর ছেলে সহ দশ জনের দল দুই গ্রামীন শিল্পীকে মধ্যরাতে দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে গিয়ে ভোর রাত পর্যন্ত দলবদ্ধ ধর্ষন করে ছিলো। সেই ঘটনার জের কাটতে না কাটতে আবারও গড়বেতাতে এক ১৩ বছরের নাবাকিকা স্কুল ছাত্রীকে সাত জন মিলে দলবদ্ধ ধর্ষন করার ঘটনা ঘটলো। ডেবরার ঘটনায় জড়িতদের পরে গ্রেফতার করে পুলিশ।