নিজস্ব সংবাদদাতা: কার বাড়িতে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষ আছে সবই খোঁজ রাখে ওরা আর সময় বুঝে দেবদূত রূপে হাজির হয়। তারপর নানা রকম রসায়নে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সর্বস্ব নিয়ে পালায় তারা। কিন্তু চোরের দশদিন তো গৃহস্থের একদিন। আর সেরকমই এক গৃহস্থের পাল্লায় পড়ে হাজতে যেতে হল দুই জালিয়াতকে। শনিবার এরকমই ঘটনা ঘটল খড়গপুর শহর লাগোয়া বলরামপুরে।
জানা গেছে ওই দুই জালিয়াত ভিন প্রদেশের। শনিবার দুপুরে তারা হাজির হয় বলরামপুরে বিশ্বজিৎ সিং নামে এক দিন মজুর পরিবারে যাদের ৭ বছরের বালক সম্পূর্ণ প্রতিবন্ধী। জলিয়াত দু’জন জানায় এই বালককে সম্পূর্ন সুস্থ করে দেওয়া সম্ভব যদি দুধের সাথে সঠিক অনুপানে কেশর মিলিয়ে তাকে নিয়মিত মালিশ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে সমস্ত চিকিৎসা বিফল হওয়া ওই বালকের পরিবার স্বভাবতই আশার আলো দেখতে পেয়ে খুশিতে ফেটে পড়েন। এরপর বাজার থেকে তাঁদের ১গ্রাম কেশর কিনে আনতে বলে ওই দুই জালিয়াত। ২০০ টাকা দিয়ে পরিবার তা কিনেও আনে।
শিশুটির ঠাকুমা ছবি হাজরা জানান, ‘ওরা আমাদের দেখান আসল কেশর না নকল কেশর। তারপর তারা আমাদের দুধে মিশিয়ে কেশর মেশানোও শিখিয়ে দেন। এরপর তারা আমাদের বলে এই শিশুকে মালিশ করার জন্য মোট ৬০গ্রাম কেশর প্রয়োজন। যার দাম ১২হাজার টাকা। এবং ওই কেশর সঠিকভাবে মেশানো দরকার। একটু ভুল হলে সব বেকার হয়ে যাবে। আমরা তখন সমস্যায় পড়ি। প্রথমত অত টাকা কোথায় পাব? দ্বিতীয়ত সঠিকভাবে যদি দুধে কেশর না মেশাতে পারি তখন আমাদের পুরো টাকাই নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা তখন ওঁদের অনুরোধ করি থেকে যাওয়ার জন্য যাতে ওরাই ওষুধ প্রস্তুত করে দিতে পারে। এরপর আমি আমার কানে থাকা সোনার দুল পড়শীদের কাছে বিক্রি করি এবং এদিক ওদিক থেকে ১২হাজার টাকা জোগাড় করি।”
ওই প্রতিবন্ধী শিশুর মা স্বপ্না জানান, ‘ যখন আমরা ১২ হাজার টাকা জোগাড় করে বাজারে কেশর কিনতে যাবার উদ্যোগ নিচ্ছি তখন ওই জালিয়াতরা বলে, বাজারে কেশর কিনলে ঠকে যেতে পারেন। আমাদের কাছে আসল কেশর রয়েছে। এতেই আমাদের সন্দেহ হয়। এতক্ষন ধরে লোকগুলো তাহলে কেশর বিক্রির ফন্দি করছিল। আমরা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে খবর দি। উনি এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই জানা যায় এরা আসলে সত্যি সত্যি জালিয়াত। মানুষকে বিভিন্নভাবে বোকা বানায়। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। খড়গপুর গ্রামীণ থানার পুলিশ এসে ওদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।’
পুলিশ জানিয়েছে ধৃতরা নিজেদের রাজস্থানের বাসিন্দা বলে দাবি করছে। ওদের কাছ থেকে একটি হিরোহোন্ডা পুরানো মডেলের বাইক পাওয়া গেছে যার কাগজপত্র নেই। একটি অভিযোগ হয়েছে যার ভিত্তিতে আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আরও কোথায় কোথায় এই ধরনের জালিয়াতি করেছে জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশ জানিয়েছে কেশরের নামে ওরা যে নকল জিনিস গছানোর চেষ্টা করেছিল। ওই ব্যক্তিরা নিজেদের নাম পরিচয় যা বলছে তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছে পুলিশ। পুলিশ আরও জানিয়েছে খড়গপুর শহর এবং আশেপাশে এরকম বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি চক্র রয়েছে।