নিজস্ব সংবাদদাতা: লটারিতে গাড়ি পেয়ে। সেই গাড়ি ছাড়াতে প্রথমে ৩০ হাজার তারপর ধাপে ধাপে আরও টাকা নেওয়ার গল্পটা আপনার জানা হয়ে গেছে নিশ্চই। না, এখন আর ওই গল্প করেছেনা সাইবার জালিয়াতরা। এখন নতুন গল্প বাড়ি কিংবা জমিতে ফাইভ-জি টাওয়ার বসানোর অথবা ইনস্ট্যান্ট লোন। মাত্র ২৪ ঘন্টায় আপনার লোন অনুমোদন হয়ে যাবে। ১লাখ, ২লাখ যা চাই। এরজন্য আপনাকে কিছু ডকুমেন্ট চাওয়া হবে। তেমন কিছু নয়, মর্টগেজ বাবদ আপনার বাড়ি বা জায়গার দলিল, আধারকার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড এই সব টুকিটাকি। চিন্তা করবেননা, আপনাকে কোথাও যেতে হবেনা, স্রেফ মোবাইলে ছবি তুলে ডকুমেন্ট পাঠাতে হবে।
ঠিক একই ভাবে আপনার কাছে নিশ্চই অফার এসেছে বাড়ি কিংবা জমিতে ফাইভ-জি টাওয়ার বসানোর? খুবই সামান্য জমি লাগবে। আপনার যদি থাকে তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আপনার জমি থাকলেই ফাইভ-জি টাওয়ার বসানোর ৫০ লাখি অফার সঙ্গে ২জনের চাকরি। আপনার কাছে একই ভাবে জমির কাগজ, আধারকার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড ইত্যাদি চেয়ে নেওয়া হবে ঠিক যেমনটা ইনস্ট্যান্ট লোনের জন্য চাওয়া হয়েছিল। দুটি ক্ষেত্রেই আপনার কাছে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য একটু সময় নেবে। বলবে স্যাটেলাইট কিংবা গুগল ম্যাপে আমরা জায়গাটা দেখে নেব। তারপর সব ঠিকঠাক আছে বলে আপনার যে আ্যকাউন্টে টাকা ঢুকবে তার পাশবইয়ের ফটোকপি ইত্যাদি চাওয়া হবে। এরপর আপনি লোন পেতে কিংবা জমি দিতে রাজী থাকলে ওরা আপনাকে একটা ওটিপি পাঠাবে, আপনি ক্লিক করুন। ব্যস, এরপরই আপনার মোবাইলে ব্যাঙ্ক থেকে একটা ম্যাসেজ আসবে যে আপনার আ্যকাউন্ট থেকে এতটাকা খসে গিয়েছে। আসলে ওই ওটিপিটা ওদের নয়, ব্যাঙ্কের পাঠানো। আপনি টাকা পাওয়ার উত্তেজনায় যেটা পাঠিয়ে আপনি ক্লিক করে দিয়েছেন। আপনার আ্যকাউন্টে
টাকা ঢোকার বদলে টাকা চলে গিয়েছে ওদের আ্যকাউন্টে।
আপনি গুগুল পে, পে টিএম ব্যবহার করেন। দেখবেন পেটিএমের নামে আপনার কাছে ম্যাসেজ আসবে আপনি পেটিএম থেকে এতটাকা পেয়েছেন বলে। পেটিএম সরকার অনুমদিত ইউপিআই। সুতরাং আপনার কাছে মনে হবে এটা বিশ্বাসযোগ্য। আপনি টাকাটা ক্লেইম করবেন। আপনাকে একটা সেন্ট মানি অপশনে ক্লিক করতে হবে। আসলে আপনার তো রিসিভ মানিতে ক্লিক করার কথা তাইনা? কিন্তু ওরকম অপশনই নেই। যেই আপনি সেন্ট মানি অপশনে ক্লিক করলেন ওমনি যে পরিমান টাকা আপনার পাওয়ার কথা সেই পরিমান টাকা উল্টে আপনার আ্যকাউন্ট থেকেই চলে গেল।
এরকম নানা লোভনীয় প্রস্তাবের আড়ালেই রয়েছে সাইবার ক্রাইম যা মুহূর্তেই আপনার ব্যাঙ্ক আ্যকাউন্ট ফাঁকা করে দিতে পারে। যদি আপনি এই ফাঁদে পা দিয়েও থাকেন তবে কী ভাবে আপনার টাকা ফেরৎ পেতে পারেন, কতদিনের মধ্যে যেতে হবে পুলিশের কাছে, পুলিশ আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারে? আপনি কী ভাবে আপনার খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করবেন, কীভাবে ব্লক করবেন আপনার ডেভিড, ক্রেডিট কার্ড? ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে পুলিশের উদ্যোগে একটি সচেতনতা মূলক সভা হয়ে গেল খড়গপুর শহরের দুর্গা মন্দিরে।
খড়গপুর শহরের বেশকিছু নাগরিকদের উপস্থিতিতে নেট দুনিয়ার এই বিপুল জালিয়াতি নিয়ে হাতে কলমে আলোচনা করলেন পুলিশের সাইবার ক্রাইম দপ্তরের বিশেষজ্ঞ ও বরিষ্ঠ পুলিশ আধিকারিকরা। দেখানো হল বেশ কিছু অডিও ভিডিও প্রোজেকশন যাতে জালিয়াতির বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়। খড়গপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার রানা মুখার্জী জানিয়েছেন, গত ২২ বছরে দেশে ২২ লক্ষ সাইবার ক্রাইম হয়েছে যার মধ্যে খুবই কম জায়গা থেকে টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে কারন একটাই মানুষ সঠিক সময়ে পুলিশের কাছে এসে পৌঁছায়নি। আমরা বলছি যদি ঘটনার ৩দিনের মধ্যেই পুলিশের কাছে আপনারা অভিযোগ দায়ের করেন তবে অনেকাংশেই পুলিশ আপনার টাকা ফেরৎ দিতে সফল হবে।