শশাঙ্ক প্রধান: একই সঙ্গে মর্মান্তিক ও ভয়াবহ ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরে। সম্পত্তির লোভে বাবাকে খুন করার অভিযোগ উঠল বড় ছেলের বিরুদ্ধে। জানা গেছে গত প্রায় ২৫ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন ওই বৃদ্ধ। সেই নিখোঁজের ঘটনায় তদন্ত করছিল পুলিশ। সাথে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল বৃদ্ধের দুই ছেলেকে। অবশেষে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই পুলিশ জানতে পারেধারাবাহিক বাড়ির সেফটি ট্যাঙ্কেই লুকানো আছে বৃদ্ধের দেহ। সোমবার পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে সেই সেফটি ট্যাঙ্ক থেকেই উদ্ধার করল বৃদ্ধের পচাগলা বিকৃত দেহ। পুলিশ জানিয়েছে মৃত ব্যক্তির নাম সুভাষ প্রামানিক। ৬০ বছরের ওই বৃদ্ধ ১৬ তারিখ থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার অন্তর্গত বলপাই গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত পেরুর গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৬ তারিখ থেকে নিখোঁজ থাকলেও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ করেছিল পাড়ার লোকেরাই। অভিযোগে পাড়ার লোক জানিয়েছিল ১৬ তারিখ সুভাষের দুই ছেলে দীপঙ্কর ও শুভঙ্কর মিলে ব্যাপক মারধর করে সুভাষকে। সেই মারধরে জড়িত ছিল মৃত সুভাষের ভাই চন্দন ও তাঁর স্ত্রী গৌরীও। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন সুভাষ। এরপরই পাড়ার লোকেদের সন্দেহ হয় যে ওই মারধরের ফলেই সুভাষ মারা যায়। আর তারপরই দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়।
সুভাষের প্রতিবেশী অলক দাস অধিকারী, শক্তিপদ পয়ড়্যা, মধুসূদন মাইতি প্রমূখরা জানিয়েছেন, তাঁদের নামে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য প্রায়ই মারধর করা হত ওই বৃদ্ধকে। কিন্তু ছেলেদের সম্পত্তি লিখে দিলে বৃদ্ধ এবং তাঁর স্ত্রীকে বাড়ি থেকে ছেলেরা তাড়িয়ে দিতে পারে এটা অনুমান করেই সুভাষ ছেলেদের সম্পত্তি লিখে দেয়নি। বছর খানেক আগে দুই ছেলে মিলে সুভাষকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয়। দুই ছেলের অত্যাচারে ২মাস আগেই গলায় দড়ি নিয়ে আত্মহত্যা করে বৃদ্ধের স্ত্রী অথবা ওই দুই গুণধর ছেলের মা। সুভাষ এই ঘটনার জন্য ছেলেদেরই দায়ী করতেন। আর তারপর থেকেই শুরু হয় লাগাম ছাড়া অত্যাচার। অবশেষে গত ১৬ই জুন দুই ছেলে ও তাঁদের কাকা কাকিমা মিলে ব্যাপক মারধর করে সুভাষকে এবং দেহ ঢুকিয়ে দেয় সেফটি ট্যাঙ্কে।
গত ৯ই জুলাই প্রতিবেশীরা নিজেরাই বিভিন্ন সূত্রে খবরাখবর নেওয়ার পর নিশ্চিন্ত হন যে সুভাষ কোথাও পালাননি, কোনও আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যাননি। তারপর ওই দিন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ৫ প্রতিবেশী। উপরি উক্ত ৩ জন ছাড়াও অভিযোগ করেন দুই প্রতিবেশী বিধান পাত্র ও শ্রীনিবাস নায়েক। এরপরই তদন্তে নামে পুলিশ। টানা দুদিন ধরে দুই ছেলেকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে সবং থানার পুলিশ। আর তারপরই ভেঙে পড়ে দুই ছেলে স্বীকার করে নেয় বাবাকে মেরে তাঁরা সেফটি ট্যাঙ্কে গুম করে দিয়েছে। সোমবার পুলিশ গিয়ে সেফটি ট্যাঙ্ক থেকে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। ঘটনার পরই পলাতক বড় ছেলে। ছোট ছেলে সহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।